শুক্রবার,

১৯ এপ্রিল ২০২৪,

৬ বৈশাখ ১৪৩১

শুক্রবার,

১৯ এপ্রিল ২০২৪,

৬ বৈশাখ ১৪৩১

Radio Today News

`জহির রায়হান`-এর জন্মদিন আজ

রেডিওটুডে ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:০০, ১৯ আগস্ট ২০২২

আপডেট: ১৬:০২, ১৯ আগস্ট ২০২২

Google News
`জহির রায়হান`-এর জন্মদিন আজ

সংগৃহিত ছবি

জহির রায়হান একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক, এবং গল্পকার।  বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে এবং জীবনস্পর্শী প্রতিবাদী সাহিত্য ধারায় জহির রায়হান এক বিশিষ্ট শিল্পী। চলচ্চিত্র প্রতিভার পরবর্তী আশ্রয়স্থল হলেও তার আবির্ভাব ঘটেছিল কথাসাহিত্যে। সাংবাদিক, কথাসাহিত্যিক, রাজনৈতিক কর্মী, চিত্রপরিচালক- নানা পরিচয়ে তার কর্মক্ষেত্রের পরিধি স্পষ্ট। ৫২'র ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণের দ্বারা এদেশে সৎ শিল্পীর ভূমিকা কীরকম হবে- জীবন দিয়ে তিনি তার উদাহরণ হয়ে আছেন।

জহির রায়হান ছিলেন এদেশের প্রগতিশীল চলচ্চিত্র আন্দোলনের পুরোধা। তিনি ছিলেন একাধারে কাহিনীকার, চিত্রনাট্য রচয়িতা, পরিচালক, চিত্রগ্রাহক এবং প্রযোজক। চলচ্চিত্রের আঙ্গিক ও গঠনশৈলীর নানান দিক নিয়ে তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চলচ্চিত্র শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। এদেশে তিনিই প্রথম ইংরেজি ছবি ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ নির্মাণ করেন। তৎকালীন পাকিস্তানে প্রথম রঙীন ছবি ‘সঙ্গম’ তৈরি করেন জহির রায়হান, তার হাতেই প্রথম সিনেমাস্কোপ ছবি ‘বাহানা’র জন্ম।

এদেশে সাধারণ মানুষের কাছে তাই জহির রায়হান কথাসাহিত্যিক অপেক্ষা চলচ্চিত্রকার হিসেবেই বেশি পরিচিত।

ছাত্রজীবন থেকেই জহির রায়হান ছায়াছবি সম্পর্কে আগ্রহী ছিলেন। ছাত্রজীবনের শুরুতে চলচ্চিত্র সংক্রান্ত বই এবং পত্রপত্রিকার সঙ্গে তার পরিচয় ছিলো। ’৫২ সালে কারাবরণের পর মুক্তি পেয়ে তিনি কলকাতায় প্রমথেশ বড়ুয়া মেমোরিয়াল ফটোগ্রাফিক স্কুলে চলচ্চিত্র বিষয়ে শিক্ষা লাভের জন্যে ভর্তি হন। কিন্তু দশ মাসের কোর্স তিনি সমাপ্ত করতে পারেননি, ছয় মাস পড়াশুনা করার পর অর্থাভাবে ঢাকায় ফিরে আসেন। তারপর ছাত্রজীবন শেষ হবার আগেই ’৫৬ সালের শেষদিকে প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক এ জে কারদারের সঙ্গে পরিচিত হন। সে সময়ে কারদার ‘জাগো হুয়া সাবেরা’ ছবি করার জন্য ঢাকায় আসেন। কারদার জহিরকে এই ছবির সহকারী পরিচালক নিযুক্ত করেন। এখান থেকেই শুরু হয় জহির রায়হানের চলচ্চিত্র জীবন। ‘জাগো হুয়া সাভেরা’র পর তিনি পরিচালক সালাউদ্দিনের ‘যে নদী মরুপথে’ এবং পরিচালক এহতেশামের ‘এদেশ তোমার আমার’ ছবিতে সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৬ সালে ঢাকায় স্থাপিত হয় ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (এফডিসি)। এবার তিনি নিজেই ছবি তৈরিতে হাত দিলেন, সহকারী নয়- পরিচালক হিসেবে।

১৯৬১ সালে তার প্রথম পরিচালিত ছবি ‘কখনো আসেনি’ মুক্তি লাভ করে। এরপর তিনি পরিচালনা করলেন ‘সোনার কাজল’ (১৯৬২), ‘কাঁচের দেয়াল’ (১৯৬৩), ‘সঙ্গম’ (উর্দু : ১৯৬৪), ‘বাহানা’ (১৯৬৫)’, ‘বেহুলা’ (১৯৬৬), ‘আনোয়ারা’ (১৯৬৭)’ এবং ‘জীবন থেকে নেয়া’ (১৯৭০)। তার ‘আর কতদিন’ উপন্যাসের ইংরেজি ভাষান্তরিত ছবি ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ সমাপ্ত হবার আগেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। তিনি চলে যান ওপার বাংলায়। সেখানে বাংলাদেশী সিনেমার এই প্রাণপুরুষ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অত্যাচারকে কেন্দ্র করে তৈরী করেন প্রামাণ্যচিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’ ও ‘বার্থ অব আ নেশন’। সেখানে তার তত্ত্বাবধানে বাবুল চৌধুরীর ‘ইনোসেন্ট মিলিয়ন’ এবং আলমগীর কবীরের ‘লিবারেশন ফাইটারস’ নামক প্রামাণ্যচিত্র দু’টি নির্মিত হয়।

চিত্র পরিচালনার পাশাপাশি জহির রায়হান অনেকগুলো ছবি প্রযোজনা করেন। সেগুলো হলো, ‘জুলেখা (১৯৬৭)’, ‘দুই ভাই’ (১৯৬৮)’, ‘সংসার’ (১৯৬৮), ‘সুয়োরাণী-দুয়োরাণী’ (১৯৬৮), ‘কুচবরণ কন্যা’ (১৯৬৮), ‘মনের মত বউ’ (১৯৬৯), ‘শেষ পর্যন-’ (১৯৬৯) এবং ‘প্রতিশোধ’ (১৯৭২)।

দেশের সমকালীন রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের পটভূমিতে নির্মিত ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিটি সংগ্রামী মানুষের আলেখ্য হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। যে সময়ে ছবিটির জন্ম , সে সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা স্মরণ করলে এই ছবিকে একটি দুঃসাহসিক প্রচেষ্টা বলে মানতে হয়। এই ছবিটি নির্মাণ করতে গিয়ে পরিচালক জহির রায়হান অনেক সরকারি বাধার সম্মুখীন হন। ছবি নির্মাণের নেপথ্যের কাহিনী : ’৭০ সালের ১৬ জানুয়ারি জহির রায়হান ‘তিনজন মেয়ে ও এক পেয়ালা বিষ নামে একটি ছবি করার জন্য এফডিসিতে আবেদন করেন। ২০ জানুয়ারি এফডিসি কর্তৃপক্ষ ছবিটির অনুমোদন দেয়। ২৮ জানুয়ারি জহির রায়হান ছবির নাম পরিবর্তন করেন- ‘জীবন থেকে নেয়া’।

রেডিওটুডে নিউজ/এসবি

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের