শুক্রবার,

১৯ এপ্রিল ২০২৪,

৫ বৈশাখ ১৪৩১

শুক্রবার,

১৯ এপ্রিল ২০২৪,

৫ বৈশাখ ১৪৩১

Radio Today News

আশরাফ হাসানের কবিতা

রক্তের রঙে লেখা পঙক্তি

রেডিওটুডে ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ২৭ আগস্ট ২০২১

Google News
রক্তের রঙে লেখা পঙক্তি

কবি আশরাফ হাসানের নির্বাচিত কবিতার প্রচ্ছদ

নব্বই দশকের খ্যাতিমান কবি আশরাফ হাসান। প্রবল প্রতিভার প্রতাপে উর্বর তাঁর কাব্যতীর্থভূমি। তিনি কবিতাকে ধারণ করেছেন আত্মজাত অভিজ্ঞানে, হৃদয়ানুভূতির স্ফটিক জলে। সহজাত শব্দদ্যূতি, ভাবকল্পের জীবনমুখিতা, আঙ্গিকের নিত্যকলা এ কবির কবিতাকে দিয়েছে স্বাতন্ত্র্যিক মহীমা। কবিতায় বিশুদ্ধ রোমান্টিসিজমের সফল শিল্পযোদ্ধা উত্তরাধুনিক এই কবি। এই প্রবণতাকে ধারণ করে ঐশী প্রেমের সারৎসার তুলে আনেন নিপুন কুশলতায়। আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, অস্বস্তি-অবক্ষয়-তাঁর কবিমানসকে প্রতিবাদী, দ্রোহলগ্ন উচ্চারণে মহিমান্বিত করে তোলে। তাঁর প্রেমানুভূতি জীবনবোধের গভীরতর যাত্রায় লাভ করে হৃদ্যিক সুস্থিরতা। ‘বিনিদ্র বেদনার সুতোয় গেঁথে এনেছি হৃদয়ের চিরায়ত তাপ’- এমন অনিবার্য উচ্চারণে প্রিয়তম’র প্রতীকে জাতীয় সমৃদ্ধি-মুক্তির প্রতীক্ষায় ভাসিয়ে দেন ভালবাসার সাম্পান। আর এভাবেই প্রেমে-প্রার্থণায় আর দ্রোহে ভাস্বর হয়ে আছে কবি আশরাফ হাসানের কবিতা।

সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে কবি আশরাফ হাসানের কাব্য সংকলণ ‘নির্বাচিত কবিতা’। যাতে স্থান পেয়েছে এ যাবৎ তাঁর রচিত গুচ্ছ গুচ্ছ বাছাই কবিতা। আহমেদ ইউসুফের প্রচ্ছদে অত্যন্ত নান্দনিকভাবে বইটি উপস্থাপন করেছে রাজধানীর সরলরেখা প্রকাশনা সংস্থা। প্রকাশনা জগতে সরলরেখার যাত্রা নবতর হলেও ইতোমধ্যে সুধীমহলের ভরসা অর্জনে বেগ পেতে হয়নি, নিজস্ব কুশলতায়। অন্যদিকে, আশরাফ হাসানের কবিতা নিজস্ব জোসনার বিকিরণে সমুজ্জ্বল। মানব মনের অব্যক্ত অনুভূতি, যাপিত জীবন, দেশত্ববোধ, রাজনৈতিক অনুসঙ্গ এবং সহজাত সুন্দর আধ্যাত্মিকতা- এসবের মিশেলে গড়ে উঠেছে উত্তরাধুনিক এই কবির কবিতা। প্রবাসের কোমল-কাঠিন্য ‘উন্নত জীবন’ বাস্তবতার প্রমোদের ভেতরও শিল্প সাধনায়, কাব্যপ্রেমে প্রতিনিয়ত নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন এই কবি। আল মাহমুদ বলেছেন, ‘সাহিত্য কাউকে খালি হাতে ফেরায় না’। বৈশ্বিক এই দূর্যোগের মহাসংকটময় মূহুর্তে একজন কবির রচনা সংকলণ প্রকাশও কী বড় অর্জন নয়? কবির কাছে কবিতার চেয়ে বড় কোন সম্পদ নেই। সমগ্র পৃথিবী একদিকে আর তাঁর নিজের কাব্যভূবণ একদিকে। কখনো কখনো প্রিয়তমাও হয়ে ওঠেন কবির কবিতার প্রতিদ্বন্দি। ফলে প্রিয়তমাই কবিতা, কবিতাই প্রিয়তমা। ‘তোমার পায়ে বেঁধে দিইনি ভাঙা আনন্দের শেকল, যতদূর নিক্ষেপ করেছ আঁখির আকন্ঠ তৃষ্ণা/বৃষ্টির গন্ধের মতো তুলে দিয়েছি সাকির জলধি।’ কিংবা কবি যখন বলে ওঠেন, ‘আমার সরল সৌহার্দ্যের ভিড়ে তুমি বীরাঙ্গণার মতো দাঁড়িয়ে যাও দাঁড়িয়ে যায় তোমার চোখের সাহস, যেন কোন পাহাড়ি ইগল দৃষ্টিকোটরে পুষে রেখেছে দিকবিভ্রম জিঘাংসা’...তখন হৃদয়ের উষ্ণতা, মাটির চেনা ঘ্রাণে সিক্ত হয়ে কবিতা সঞ্চারিত হতে থাকে লোকে-আলোকে।

প্রধানতঃ প্রেম ও প্রকৃতির কবি হলেও আশরাফ হাসান নিজ পঙক্তিকে প্রার্থণার ভাষা করে তুলেছেন। কবিতার জটিল সমীকরণের ভেতর কাজটি দুঃসাধ্যই বটে। তাঁর কবিতার শরীরজুড়ে অলীক ফুলের মতো ঘ্রাণ ছড়িয়ে গেছে অতীত হয়ে যাওয়া কবি-মহাকবিদের আত্মা। আশরাফ হাসানের রুপালী আঙুলের ঝর্ণাধারা বয়ে চলছে মহাকাব্যময় এক গন্তব্যে। ‘শেষমেশ থাকে না কিছুই/ স্মৃতির সোহেলি পরশ/ বিখন্ড মেঘের মতো উড়ে যাওয়া চাঁদের গোধূলি/জোনাকির পাখা থেকে ঝরে পড়া আলোর সাহস/আরশের আদেশে লুপ্ত তারার ভ্রমণ।’ এমন আধ্যাত্মিক-মরমী কবিতার খেরোখাতা খুলে ধরেছেন কবি। শিল্পে, উপমা-উৎপ্রেক্ষায় সবুজাভ স্নিগ্ধ বাতাসের মতো  যা পরশ বুলিয়ে যায় কাব্য মানসলোকে। সাহিত্যের শিলালিপিতে রক্তের অক্ষরে এভাবেই লেখা থাকে কিছু বিশুদ্ধ পঙক্তি, ইতিহাসের শরীরজুড়ে জমা থাকে পাললিক সৌরভ। অমরতা পায় কবিতার বাণী চিরন্তণী।

রেডিওটুডে নিউজ/জেএফ

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের