বাংলার অপরুপ প্রকৃতি, ফুল-পাখি আর সবুজ-শ্যামলিমার সঙ্গে মিশে আছে এক কবির কবিতা। গ্রামীণ ঐতিহ্যময় নিসর্গ ও রুপকথা-পুরানের জগত ও জীবন-বাস্তবতা তার কাব্যে হয়ে উঠেছে চিত্ররুপময়। রুপসী বাংলার কবি, শুদ্ধতম কবি আর তিমিরহননের কবি। এ সকল বিশেষণ শুনলেই মনে আসে যার নাম, তিনি প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ।
১৮৯৯ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারী ব্রিটিশ ভারতের বরিশালে ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে’ খ্যাত মা বিখ্যাত কবি কুসুমকুমারী দাশের কোল আলো করে জন্ম নেন, জীবনানন্দ দাশ।
বাল্যকালে কবি মায়ের কাছ থেকে সাহিত্য চর্চায় প্রাণীত জীবনানন্দ দাশের প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯২৭ সালে। এছাড়া তাঁর রচিত ধূসর পান্ডুলিপি, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, সাতটি তারার তিমির, বেলা অবেলা কালবেলা ও রুপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থ আধুনিক বাংলা কবিতার অলংকার হিসেবে এনে দিয়েছে দারুণ ঐশ্বর্য্য। ‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থ নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্র সম্মেলনে ১৯৫২ সালে শেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ হিসেবে পুরস্কৃত হয়।
ঔপন্যাসিক, গল্পকার ও প্রাবন্ধিক হিসেবে কলেজ অধ্যাপক জীবনানন্দের স্বতন্ত্র্য প্রতিভা ও নিভৃত সাধনার উন্মোচন ঘটে মৃত্যুর পরে প্রাপ্ত কিছু পান্ডুলিপিতে। কলকাতা থেকে তাঁর গদ্যরচনা ও অপ্রকাশিত কবিতার সংকলনরুপে জীবনানন্দ সমগ্র প্রকাশিত হয়েছে মোট ১২ খণ্ডে। প্রয়াত জীবনানন্দ গবেষক কবি আবদুল মান্নান সৈয়দের মতে, ইতিহাস সচেতন এই কবির শিল্প জগতে জীবনবোধ ও প্রকৃতির পাশাপাশি মূর্ত হয়েছে বিপন্ন মানবতা, যাপিত সময়ের অবক্ষয়, হতাশা, নিঃসঙ্গতা ও সংশয়বোধ।
১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর মাত্র ৫৫ বছর বয়সে কবিতার পরাবাস্তবতার মতোই অদেখা ভূবনে হারিয়ে যান, বাংলার হৃদয়ে জুড়ে থাকা প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ। ‘আবার আসিব ফিরে’ বলে অঙ্গীকার করে গিয়ে স্বশরীরে ফিরে না এলেও জীবনানন্দ প্রণিনিয়ত জোৎস্নার দ্যুতি আর সূর্য্যের আলোক রশ্মি ছড়িয়েছেন, অতুলনীয় সব কবিতার পঙক্তিমালায়।
রেডিওটুডে নিউজ/ইকে