জনপ্রিয় কথশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ
জনপ্রিয় কথাশিল্পী, সাহিত্যিক ও উপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদের নবম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১২ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। করোনা মহামারীর কারণে হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সীমিত পরিসরে গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে কিছু আয়োজন থাকছে আজ।
এ ব্যাপারে নুহাশপল্লীর ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বুলবুল সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সোমবার সকালে নুহাশপল্লীতে পবিত্র কুরআনখানির আয়োজন করা হয়েছে। এরপর হুমায়ূন আহমেদের কবরে ফুল দেয়া হবে। প্রতি বছর এতিম বাচ্চাদের খাওয়ানোর যে আয়োজন হয়, তা এ বছর হচ্ছে না। এই বাবদ যে টাকা খরচ হয় তা এবার গরিব মানুষকে মধ্যে বিতরণ করা হবে। কুরবানীর ঈদের আগেই সেই টাকা বিতরণ হবে। হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন সকালে নুহাশপল্লীতে যাওয়ার কথা।
এদিকে হুমায়ূন আহমেদের স্মরণে শহিদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ, হুমায়ূন আহমেদ স্মৃতি সংসদ ও ঝংকার শিল্পীগোষ্ঠী করোনার কারণে সীমিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে আলোচনাসভা, দোয়া মাহফিল। ঝংকার শিল্পীগোষ্ঠী হুমায়ূন আহমেদের লেখা গান পরিবেশন করবে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ। উপন্যাসে নিজের প্রতিভার বিস্তার ঘটলেও তার শুরুটা ছিল কবিতা দিয়ে। এরপর নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি, চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি রেখে গেছেন নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর। হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির জনকও বটে।
হুমায়ূন আহমেদের লেখা ১৯৭২ সালে প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে‘ প্রকাশের পরপরই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। উপন্যাসে ও নাটকে তার সৃষ্ট চরিত্রগুলো বিশেষ করে ‘হিমু‘, ‘মিসির আলী‘, ‘শুভ্র‘ তরুণ-তরুণীদের কাছে হয়ে ওঠে অনুকরণীয়। জনপ্রিয়তার জগতে তিনি একক ও অনন্য।
হুমায়ূন আহমেদের শরীরে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মরণব্যাধি ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান। সেখানে ২০১২ সালের ১৬ জুলাই তিনি চলে যান লাইফ সাপোর্টে। ১৯ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ২৩ জুলাই দেশে ফিরিয়ে আনা হয় হুমায়ূন আহমেদের লাশ। ২৪ জুন তাকে দাফন করা হয় তার গড়ে তোলা গাজীপুরের নুহাশপল্লীর লিচুতলায়।
১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। তার ডাকনাম কাজল। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি।
বরেণ্য এই কথাশিল্পীর বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা আর মা গৃহিণী। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তার ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক। তার পরিচালিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘আগুনের পরশমণি‘, ‘শ্যামল ছায়া‘, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন‘, ‘দুই দুয়ারী‘, ‘চন্দ্রকথা‘, ‘নয় নম্বর বিপদসংকেত‘, ‘ঘেটুপুত্র কমলা‘ সহ প্রভৃতি।
তিনি বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৪ সালে ‘একুশে পদক‘ লাভ করেন। ১৯৮১ বাংলা একাডেমি পুরস্কার, হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪) লাভ করেন।
রেডিওটুডে নিউজ/এসআই
