শুক্রবার,

২৬ এপ্রিল ২০২৪,

১২ বৈশাখ ১৪৩১

শুক্রবার,

২৬ এপ্রিল ২০২৪,

১২ বৈশাখ ১৪৩১

Radio Today News

ঊনত্রিশতম দিনে ১২১ নতুন বই

বইমেলায় ৩৩ বছর ধরে মোড়ক উন্মোচনে রীনো

ইমদাদুল আজাদ; প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়:

প্রকাশিত: ০৩:৩০, ১৬ মার্চ ২০২২

Google News
বইমেলায় ৩৩ বছর ধরে মোড়ক উন্মোচনে রীনো

১৯৮৯ সালের কথা। তখন এখনকার মতো এতো জাঁকজমকভাবে অনুষ্ঠিত হতো না অমর একুশে বইমেলা। ছিল না ঘটা করে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানও। বাংলা একাডেমির ভাষা চত্বরে সর্বপ্রথম ১৯৮৯ সালে বইয়ের উন্মোচন অনুষ্ঠান শুরু হয়। কবি মোহন রায়হানের একটি কবিতার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন সৈয়দ শামসুল হক। সেদিনকার সেই বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের সঞ্চালনকারী ছিলেন টিমুনী খান রীনো। সেই থেকে ধারাবাহিকতা ধরে রেখে দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে প্রতিবছর অমর একশে বইমেলায় একই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন রীনো।

স্মৃতিচারণ করে রীনো বলেন, "সেদিন মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে আমি ১০ টাকা পেয়েছিলাম। তখনকার দিনে যে টাকার মূল্য ছিলো অনেক। সর্বপ্রথম, বাংলা একাডেমির বয়রাতলায় এ পর্বটি অনুষ্ঠিত হতো। তারপর যথাক্রমে বটতলায়, পুকুরপাড়ে, নজরুল মঞ্চে এবং সর্বশেষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হচ্ছে।"

এতদিনের পথচলায় মেলার কোনো বিশেষ স্মৃতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "হুমায়ুন আজাদ জীবনের শেষদিন একটা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করে আগামী স্টলে গেলেন। আমি তাকে আগামী স্টলে নিয়ে গিয়েছিলাম। পরে রাতে শুনি তিনি হামলার শিকার হয়েছেন। একজন রাষ্ট্রপতি বৃষ্টির কারণে এখানে এসে আধা ঘণ্টা বসেছিলেন। আবার একজন প্রয়াত রাজনৈতিক নেতা তার একটি বই উন্মোচনের জন্য দুই ঘন্টা বসেছিলেন। কিন্তু তার পাশে ঐ দলের কোনো রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে না পেয়ে অবশেষে তিনি নিজে বইটা একাই উন্মোচন করে কাঁদতে কাঁদতে চলে গিয়েছিলেন"

রীনো জানান, " মেলা শেষে অন্যসময় বিভিন্ন বইয়ের প্রকাশনায়, পত্রিকায় লেখালেখিসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাঝে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে ভালোবাসেন তিনি। কাজটা খুবই উপভোগ করেন তিনি। ভবিষ্যতেও এভাবে কাজ করে যেতে চান।"

বইমেলায় আজকের কর্মসূচি: বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় "ভাষাসংগ্রামী অজিত কুমার গুহ : জীবন ও কর্ম" শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাসান ইমাম মজুমদার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জাফর ওয়াজেদ, মোহাম্মদ জয়নুদ্দীন এবং রাজীব সরকার। সভাপতিত্ব করেন বেগম আকতার কামাল।

প্রাবন্ধিক বলেন, "পূর্ববাংলার সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসে অবিস্মরণীয় নাম অজিত কুমার গুহ। শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশে, মানবতার মূল্যবোধ ও সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে আমৃত্যু লড়াই করে ইতিহাসে নিজের আসন সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। প্রগতিশীল চিন্তার বাহক, মুক্তমনের অধিকারী, আপসহীন, দৃঢ়চেতা, আদর্শবাদী, বুদ্ধিজীবী, বাগ্মী, শিক্ষাবিদ প্রভৃতি যে বিশেষণেই বিশেষিত করা হোক না কেন, তাঁর অন্যতম প্রধান পরিচয় ভাষাসংগ্রামী অজিত কুমার গুহ। যে-কোনো রাষ্ট্রিক-সামাজিক বিপর্যয়ে ভাষা-আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী অধ্যাপক অজিত কুমার গুহ’র সাহসী অবস্থান লক্ষণীয়।"

আলোচকবৃন্দ বলেন, "খুব তরুণ বয়স থেকেই অজিত কুমার গুহ’র মধ্যে স্বাধীনচেতা, অসাম্প্রদায়িক এক আদর্শ গড়ে উঠেছিল। নিজের মূল্যবোধ ও আদর্শ থেকে তিনি কখনও বিচ্যুত হননি। তিনি এমন একটি প্রজন্ম তৈরি করতে চেয়েছিলেন যারা দেশ, দেশের মানুষ এবং শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিকে ভালোবাসবে। নতুন প্রজন্মের সামনে অধ্যাপক অজিত কুমার গুহ’র আলোকিত জীবন ও মূল্যবান রচনা তুলে ধরতে পারলে জাতি উপকৃত হবে।"
  
সভাপতির বক্তব্যে বেগম আকতার কামাল বলেন, "ছাত্রদের মধ্যে আদর্শ একটি জীবনচেতনা গড়ে তোলাই ছিল অজিত কুমার গুহ’র শিক্ষক জীবনের লক্ষ্য। অসাম্প্রদায়িক চেতনার এই বিরল মানুষ বহু অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছেন। মানবতাবাদী, দেশপ্রেমী ও উদার মানসিকতার অধিকারী অজিত কুমার গুহ যে আদর্শ আমাদের সামনে রেখে গেছেন তা অনুসরণ করেই আগামীর পথে অগ্রসর হতে হবে।"

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজের বই নিয়ে আলোচনা করেন আহমাদ মোস্তফা কামাল। আজকের অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি রাম চন্দ্র দাস, মোতাহের হোসেন মাহবুব, আয়শা জাহান নূপুর এবং ইসমাত শান্তি। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান, সুবর্ণা আরফীন, নাসিমা খান বকুল, ফারজানা করিম এবং রুমা সরকার। 

আগামীকালের কর্মসূচী: বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে শহিদ জননী জাহানারা ইমাম : আমৃত্যু সংগ্রামী এক মহাপ্রাণ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন তপন পালিত। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন সাবিহা পারভীন, জয়দুল হোসেন এবং আহমেদ আহসানুজ্জামান। সভাপতিত্ব করবেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।   

রেডিওটুডে নিউজ/ইআ

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের