শুক্রবার,

১৯ এপ্রিল ২০২৪,

৬ বৈশাখ ১৪৩১

শুক্রবার,

১৯ এপ্রিল ২০২৪,

৬ বৈশাখ ১৪৩১

Radio Today News

লকডাউনে বন্ধ স্বাক্ষ্যগ্রহন

মেজর সিনহা হত্যাকান্ডের একবছর

সরওয়ার আজম মানিক, কক্সবাজার

প্রকাশিত: ২২:৪৪, ৩১ জুলাই ২০২১

আপডেট: ২২:৫৮, ৩১ জুলাই ২০২১

Google News
মেজর সিনহা হত্যাকান্ডের একবছর

মেজর (অব) সিনহা মো. রাশেদ

অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মো. রাশেদ হত্যাকান্ডের একবছর পূর্ন হলো আজ। গত বছরের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোডের বাহারছরা পুলিশ চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি।

সিনহা হত্যা নিয়ে তার বোনের করা হত্যা মামলায় র‌্যাবের দেয়া চার্জশিট আদালত গ্রহণ করেন এবং চার্জ গঠন করেন। তবে চলমান লকডাউনে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সিনহা হত্যা মামলার  স্বাক্ষ্যগ্রহন শুরু হয়নি। গত ২৬ জুলাই এই মামলার স্বাক্ষ্যগ্রহন শুরুর দিন ছিল।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, গত ২৭ জুন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল আসামিদের উপস্থিতিতে মামলাটির চার্জ গঠন করে ২৬, ২৭ ও ২৮ জুলাই একটানা তিনদিন বাদীসহ ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করে আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু করোনার কারণে লকডাউনে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। পরবর্তী দিন ধার্য করে এটি সম্পন্ন করা হবে।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পেশকার সন্তোষ বড়ুয়া জানান লকডাউনের পরে আদালতের স্বাভাবিক  কার্যক্রম শুরু হলে জেলা ও দায়রা জজ নতুন করে এই মামলার স্বাক্ষ্যগ্রহনের তারিখ দেবেন। ঐ তারিখে বাদীসহ স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্যগহন শুরু করবেন আদালত।

সিনহা হত্যা মামলার আইজীবী এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৬, ২৭ ও ২৮ জুলাই ১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছিল। করোনার কারনে ত পেছানো হলো। কিন্তু আমরা প্রস্তুত আছি। তিনি বলেন, সাক্ষ্য গ্রহণের শেষে রায় ঘোষনার দিকে যাবেন আদালত।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। হত্যাকান্ডের ৫ দিনের মাথায় ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত ও টেকনাফ থানার তৎকালিন ওসি প্রদীপসহ ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে দ্বিতীয় ও মামলার তিন নম্বর আসামি করা হয় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতকে। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় র‌্যাব-১৫।

হত্যাকান্ডের পর চার মাসের বেশি সময় তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে এবং ৮৩ জনকে সাক্ষী করে আলোচিত মামলাটির চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা র‌্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম।

মামলায় অভিযুক্ত ও কারাগারে আটক থাকা ১৫ আসামি হলেন-বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাগর দেব, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন। 

চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কনস্টেবল সাগর দেব ও রুবেল শর্মা ছাড়া ১২ জন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। এ মামলায় ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ১৫ জন আসামি কারাগারে রয়েছেন।

সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান ৫১তম বিএমএ লং কোর্সের মাধ্যমে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ২০১৮ সালে সেনাবাহিনীর মেজর পদে থাকাকালীন স্বেচ্ছায় অবসরে যান সিনহা। বিশ্বভ্রমনের ইচ্ছা ছিল তার প্রবল। তার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে একটি "জাস্ট গো" নামে প্রামান্যচিত্রের কাজেই তার তিন সহযোগীসহ প্রায় এক মাস ধরে কক্সবাজার অবস্থান করছিলেন। 

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাত ৯ টা ২৫ মিনিটে মেজর মোহাম্মদ রাশেদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। বাহারছড়া পুলিশফাড়ির ইনচার্জ লিয়াকত আলী ৪টি গুলি করে তাকে হত্যা করেন। তাকে গুলি করার আদেশ দেন টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রাস্তায় পড়ে ছিলেন মেজর সিনহা। তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে পরবর্তীতে ওসি প্রদীপ এসেও তাকে ২টি গুলি করেন। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর একটি ট্রাকে করে তাকে হাসপাতাল নেয়া হয়। কিন্তু তার আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

এরপর ওসি প্রদীপকে গ্রেফতারের পর তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ইয়াবার মাধ্যমে ফাঁসিয়ে কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যাসহ নানান অভিযোগ আসে টেকনাফের বাসিন্দাদের মধ্য থেকে।
 

রেডিওটুডে নিউজ/ইকে

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের