বৃহস্পতিবার,

২৮ মার্চ ২০২৪,

১৪ চৈত্র ১৪৩০

বৃহস্পতিবার,

২৮ মার্চ ২০২৪,

১৪ চৈত্র ১৪৩০

Radio Today News

মুন্সীগঞ্জে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে জেলে-পুলিশ সংঘর্ষে আহত ১০

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২২:৫১, ২১ অক্টোবর ২০২১

Google News
মুন্সীগঞ্জে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে জেলে-পুলিশ সংঘর্ষে আহত ১০

মুন্সীগঞ্জে জেলেদের সাথে সংঘর্ষে আহত পুলিশ সদস্যদের জেনারেল হাসপাতাল  থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানী ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।  

মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার চরঝাপটায় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে নৌ-পুলিশের সাথে জেলে পল্লীর সাথে সংঘর্ষে ৫ পুলিশসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। সংঘর্ষের সময় জেলে পরিবারের সদস্যরা দেশীয় অস্ত্র ছাড়াও বৃষ্টির মত ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ আত্মরক্ষায় ৪০ রাউন্ড গুলি ছুড়ে। আহত গজারিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল কবির হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তারা মাথায় গুরুতর জখম হয়েছে। তার জ্ঞান ফিরেনি, নাক ও কান দিয়ে রক্ত বন্ধ হচ্ছে না। ঢাকার নিউরো সাইন্স হাসপাতালে তার মাথায় অস্ত্র পাচারের প্রক্রিয়া চলছে। 

বাকী আহত গজারিয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আব্দুস সালাম, এস আই শাহ আলম, এস আই ফয়সাল কবীর ও কনস্টেবল নজরুল ইসলামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া চারঝাপটা গ্রামের বাসিন্দা গুলিবিদ্ধ হাফেজ আলীকে (৬০) চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকীদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।  
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে মেঘনায় মা ইলিশ নিধনের সময় গজারিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ি অভিযান পরিচালনা কালে জেলেরা নদীতেই পুলিশের উপর আক্রমণ চালায়। এই সময় তারা পাশের চরআব্দুল্লাহ নৌপুলিশ ও কোস্ট গার্ডের সাহায্য নিয়ে জেলেদের পাল্টা ধাওয়া করে। এই সময় সংঘর্ষ বেঁধে যায়।

মেঘনা তীরে উঠে আসে পুলিশ। আত্মা রক্ষায় শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে। কিন্তু দুইটি শর্টগানের সব গুলিই শেষ হয়ে যাওয়ার পরই জেলেরা নৌ-পুলিশকে নির্মমভাবে পেটায় এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আঘাত করে। কয়েক পুলিশ দৌড়ে নদীতে ঝাপিয়ে পড়ে জীবন রক্ষা করেন। আহত পুলিশ সদস্যরা অভিযোগ করেন, এই বিপদেরর সময় চরআব্দুল্লাহ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। তারা এগিয়েও আসেনি। চোখের সামনে অন্য পুলিশকে বেধরক পোটালেও নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। তীরে পর্যন্ত উঠেনি। 

গজারিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির টিমে থাকা ১০ জনই জেলেদের আক্রমণের শিকার হয়েছে। চর আব্দুল্লাহ ফাঁড়ির টিম ছিল অক্ষত। এই প্রসঙ্গে নৌ পুলিশের এসপি মিনা মাহমুদ জানান, বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে চরআব্দুল্লাহ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি জানান, ঘটনা সাড়ে ৮টার দিকে হলেও চরআব্দুল্লাহ পুলিশ ফাঁড়ি থেকে তাকে অবহিত করা হয়েছে বেলা ১০টার দিকে।

মন্সীগঞ্জের জেলা মৎস্য অফিসার শামশুল করিম জানান, চরআব্দুল্লাহ নৌ পুলিশ গত ১০ অক্টোবর মেঘনা নদীতে একটি অভিযান পরিচালনাকালেও রহস্যজনক ভূমিকায় ছিল। জেলেরা পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট ও মৎস্য কর্মরর্তার উপর আক্রমণ করলেও চরআব্দুল্লাহ নৌ পুলিশের স্পীডবোটকে ডেকে পাওয়া যায়নি। অনেক পরে তারা ঘটনাস্থলে আসে। পরে আক্রমণকারীদের ধরার জন্য প্রস্তুতিতে নিলে ভুল তথ্য দিয়ে অন্য স্থানে নিয়ে যায়। 
মুন্সীগঞ্জের মেঘনা তীরের দুর্গম চরঝাপটা, কালীরচর, চরআব্দুল্লাহ, বকচর ও পদ্মার দিঘিরপাড় এলাকায় মা ইলিশ নিধনের মহোৎসব চলছে এখন। 

গজারিয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ব্যথায় কাতর আহত মো. আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমরাতো ভাই সৎভাবে চাকরী করি, প্রাণপন চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমাদের পেছনে যাদের সহযোগিতার আশা করেছিলাম, তা পাইনি। এটি ভাবতেও পারি না। পুলিশ হয়ে পুলিশের সাথে এমন আচরণ?’  নদীতে আমাদের উপর হামলার চেষ্টা করে পালিয়ে জেলেরা পালিয়ে যাচ্ছিল। সঙ্গে সঙ্গে আমরা সদরের চর আব্দুল্লাহ নৌ-পুলিশকে সহযোগিতা চেয়ে আমরা জেলেদের ধাওয়া করি কিন্তু তারা নদীতে কাছাকাছি থাকরেও আমাদের কোন সহযোগিতা করেনি।
গুরুতর আহত কনস্টেবল নজরুল ইসলাম বলেন, “আমাদের উপর হামলার সময় নদীতের স্পিডবোট থেকে চরআব্দুল্লাহর নৌপুলিশ চেয়ে চেয়ে দেখেছে। আমাদের বাচাঁতে আসেনি।”

চরআব্দুল্লাহ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঘটনার সময় আমি ছিলাম না তবে আমার পুলিশ সদস্যরা তাদের রক্ষায় চেষ্টা করেছে। ’

এব্যাপারে নারায়নগঞ্জ অঞ্চলাধীন নৌ-পুলিশের পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা আরও বলেন, হামলাকারীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। 
ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম নিরাপদ করতে ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন নদ-নদী এবং সাগরে সব ধরনের মাছ শিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা চলাকালে ডিমওয়ালা মা ইলিশ রক্ষায় মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদীতে অভিযান চালানো হচ্ছিল। 

রেডিওটুডে নিউজ/এইচবি

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের