শুক্রবার,

২৯ মার্চ ২০২৪,

১৫ চৈত্র ১৪৩০

শুক্রবার,

২৯ মার্চ ২০২৪,

১৫ চৈত্র ১৪৩০

Radio Today News

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে ছেলেকে হাফেজ, স্বামীর অর্থ প্রার্থনায় চিঠি

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০০:০৯, ৭ নভেম্বর ২০২১

আপডেট: ০০:০৯, ৭ নভেম্বর ২০২১

Google News
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে ছেলেকে হাফেজ, স্বামীর অর্থ প্রার্থনায় চিঠি

সংগৃহীত ছবি

মনে মনে মানত করে মসজিদের দানবাক্সে অর্থ-কড়ি ফেললে তা পূরণ হয়। প্রচলিত এমন বিশ্বাসের কারনে কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্স পুরো হয়ে যায় তিন মাস পরপরই। বাক্স খুললে বেরিয়ে আসে কাড়ি কাড়ি টাকা, বিদেশী মূদ্রা, সোনা-গয়না আরো অনেক কিছুই। তবে এবার দুটি চিঠি পেয়েছেন কর্তৃপক্ষ। যাতে এক মা তার কিশোর ছেলেকে হাফেজ বানানোর জন্য দোয়া প্রার্থনা করেছেন। আর অপর এক গৃহবধু তার স্বামীর আয়-রোজগারের ব্যবস্থা যাতে হয় সে কামনা করেছেন। 

কালো কালিতে অল্প কথায় লেখা প্রার্থনামূলক ওই চিঠিতে ওই মা লিখেছেন, আমার ছেলের নাম মো. মোরসালিন। বয়স ১৪ বছর। ছোটবেলা থেকে ইচ্ছে ছিল তাকে মাদারাসায় লেখাপড়া করিয়ে একজন হাফেজ বানানো, কিন্তু আমি এই পর্যন্ত সাতটি মাদারাসা পরিবর্তন করেও তার মনোযোগ পড়ায় বসাতে পারিনি। এখন আপনারা আমার ছেলের জন্য একটু দোয়া করে দেবেন, যেন সে একজন হাফেজ হতে পারে।

আরেকজন গৃহবধু এক চিঠিতে লিখেছেন- হে আল্লাহ, পাগলা মসজিদের রহমতে মাসুমকে টাকা-পয়সা আসার ব্যবস্থা করে দিও। হে আল্লাহ তুমি সাহায্য কর। তুমি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। হে আল্লাহ পাগলা মসজিদের রহমতে আমার স্বামী যেন অনেক টাকা-পয়সার মালিক হয়। সব ঋণ থেকে, অভাব থেকে- মানুষের কটু কথা থেকে মুক্তি পায়। হে আল্লাহ তুমি দয়া কর। পাগলা মসজিদের রহমতে আমার স্বামীর সব দুঃখ দূর করে দিও। অনেক আশা নিয়ে এসেছি তোমার দরবারে। খালি হাতে ফিরিয়ে দিওনা পাগলা মসজিদের রহমতে। 

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদটিতে আটটি লোহার দান সিন্দুক রয়েছে। প্রতি তিন মাস পর পর এ সিন্দুকগুলো খোলা হয়। কিন্তু করোনার কারণে এবারও ৪ মাস ১৭ দিন পর শনিবার (৬ নভেম্বর) দান সিন্দুকগুলো খোলা হয়েছে। সিন্দুকগুলোতে এবারও বিপুল পরিমাণ টাকা, স্বর্ণালংকার, বৈদেশিক মুদ্রা ইত্যাদি পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের আটটি দানবাক্স খুলে ১২ বস্তা দেশি-বিদেশি মুদ্রা, স্বর্ণ ও রুপা পাওয়া যায়। দুপুর সোয়া ২টা পর্যন্ত প্রশাসন, ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ পাগলা মসজিদ কমপ্লেক্স মাদ্রাসা-এতিমখানার কয়েকশ শিক্ষক-শিক্ষার্থী  টাকা গণনা করে তিন কোটি টাকা পান।

টাকা গণনার কাজে রূপালী ব্যাংকের এজিএম ও অন্যান্য কর্মকর্তা, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝপথে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে এক সময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল। মুসলিম-হিন্দু নির্বিশেষে সব ধর্মের লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়। ওই পাগল সাধকের মৃত্যুর পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী।

পরে আশ্চর্যজনকভাবে সেখানে এলাকার লোকজন ও দেশের দূর-দূরান্তের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। এই মসজিদে মানত কিংবা দান খয়রাত করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়- এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বয়সী হিন্দু-মুসলিমসহ নানা ধর্ম-বর্ণের নারী-পুরুষ মানত নিয়ে এখানে আসেন । তারা নগদ টাকা-পয়সা, স্বর্ণ ও রুপার অলংকারের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি দান করেন। বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার এ মসজিদে মানত নিয়ে আসা বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের ঢল নামে। আগতদের মধ্যে মুসলিমদের অধিকাংশই জুমার নামাজ আদায় করেন এ মসজিদে। এই ইতিহাস প্রায় আড়াইশ বছরেরও অধিক সময়ের বলে জানা গেছে। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর মসজিদটি গড়ে উঠেছিল। মসজিদটির পরিধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে এর খ্যাতি ও ঐতিহাসিক মূল্য। মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি অত্যাধুনিক ধর্মীয় কমপ্লেক্স এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রসারিত হয়েছে মূল মসজিদ ভবনও।

টাকা গণনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জের অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা খানম। দুটো চিঠিই তিনি পড়েন। এবং ছবি তুলে রাখেন। 

রেডিওটুডে নিউজ/এমএস

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের