শুক্রবার,

১৯ এপ্রিল ২০২৪,

৬ বৈশাখ ১৪৩১

শুক্রবার,

১৯ এপ্রিল ২০২৪,

৬ বৈশাখ ১৪৩১

Radio Today News

মধ্যরাতের বৈঠকও ব্যর্থ, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ফের বৈঠক দুপুরে

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৪:২৭, ২৩ জানুয়ারি ২০২২

আপডেট: ১৯:০৪, ২৩ জানুয়ারি ২০২২

Google News
মধ্যরাতের বৈঠকও ব্যর্থ, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ফের বৈঠক দুপুরে

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান ভিসি বিরোধী আন্দোলন দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়িয়েছে। গত ১৫ জানুয়ারি হল প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন পরবর্তীতে ভিসি বিরোধী একদফা আন্দোলনে রূপ নেওয়ার পর ক্যাম্পাসে নানা ঘটনা ঘটছে। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনকে কাজে লাগাতে নানা গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। বিশেষ করে সিলেটী শিক্ষকদের একটি গ্রুপ ভিসি ফরিদ উদ্দিনকে উৎখাতে পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে। যদিও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এমন সব খবরকে গুজব হিসেবে উড়িয়ে দিয়ে একে আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপকৌশল হিসেবে মনে করছেন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানানোর পর শনিবার মধ্য রাতে ফের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তবে সে বৈঠকেও কোনো ফল আসেনি। আজ রবিবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরের পরে আবারো আলোচনার কথা রয়েছে। ইতোপূর্বের আলোচনাগুলোয় শিক্ষামন্ত্রী ভিসি ফরিদ উদ্দিনের পক্ষে অবস্থান নিলেও শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগের দাবিতে অনড় রয়েছেন। শনিবার তারা ক্যাম্পাসে কাফন মিছিলের পর মধ্যরাতে আবারো বৃহত্তর মশাল মিছিল হয়েছে। আজ থেকে সর্বাত্মক অনশনেরও কথা রয়েছে। সব মিলে শাবি পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

এদিকে ঘটনার পর থেকে সিলেটী সিনিয়র শিক্ষকদের ছোটো একটি গ্রুপ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে বলে জানা গেছে। ওই শিক্ষকদের মধ্যে অন্তত তিনজন নিজেদের ভিসি হিসেবে দেখতে দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ইতোপূর্বের ভিসি বিরোধী আন্দোলনগুলোয়ও এই শিক্ষকদের হাত ছিলো। বর্তমানে তারা আবারো সক্রিয়। এদের নির্দেশেই ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশী হামলা, আবাসিক হলে র‌্যাবের অভিযান পরিচালিত হয়। এসব কিছুই পরিস্থিতি ঘোলাটে করে বৃহত্তর আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরির কৌশল হিসেবে করেছেন ক্যাম্পাসের শক্তিশালী ওই শিক্ষক গ্রুপটি।

এর আগে শনিবার দিবাগত রাত একটার দিকে ভার্চুয়ালি আলোচনা শুরু হয়। আলোচনা শেষে আড়াইটার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের পক্ষে কথা বলেন সাব্বির হোসেন, নাফিসা আনজুম ও মোহাইমিনুল বাশার রাজ।

তারা বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আলোচনায় আমরা পুরো ঘটনাপ্রবাহ বলেছি। সব শুনে তিনি বলেছেন, এটা সমাধান করতে তো একটু সময় লাগতে পারে। আমরা যেন আপাতত অনশন বন্ধ করি এবং আলোচনা চালিয়ে যাই। আমাদের অনশনরত শিক্ষার্থীরা তখন শিক্ষামন্ত্রীকে বলেছেন, আমরা একটি দাবিতেই থাকতে চাই। যতক্ষণ পর্যন্ত ভিসি পদত্যাগ না করবে আমরা অনশন চালিয়ে যাব। মন্ত্রী তখন আমাদের বলেছেন, আলোচনা চালিয়ে যাই। আমরা তাতে সায় দিয়েছি।

তারা আরও বলেন, কাল হয়তো আবারো এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের আলোচনা হতে পারে। দুপুর একটার পর শিক্ষামন্ত্রী ফ্রি হবেন। তখন আমরা আলোচনায় বসতে পারি। আলোচনার মাধ্যমে অন্য পথ বের করার কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে আমরা বলেছি, এই ভিসির ক্যাম্পাসে থাকাই আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় ক্ষতি। ভিসি না সরলে অনশন চলবে।

রাত সাড়ে বারোটার দিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল শিক্ষামন্ত্রীর মাধ্যম হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসেন। রাত একটার দিকে শাবিপ্রবির ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনের ১২৯ নম্বর কক্ষে আলোচনা মন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আলোচনা শুরু হয়।

আলোচনায় যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক বিধান কুমার সাহা, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।

পরে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষার্থীদের আইনগত ও অ্যাকাডেমিক সমস্যা যাতে না হয়, মন্ত্রী তা দেখবেন। তিনি আন্দোলনরত ও অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করেছেন তারা যেন অনশন ভেঙে আন্দোলন থেকে সরে যান। তিনি আলোচনায় প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তিনি সবকিছু শুনেছেন।

নাদেল বলেন, রোববার শিক্ষার্থীরা যেন লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে প্রস্তাবনা পাঠান। এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অনশন ভাঙার বিষয়ে ইতিবাচক কোনো কথা আসেনি। শিক্ষার্থীরা বলেছেন, সবার সঙ্গে কথা বলে কাল আমাদের জানাবেন। ভিসিকে ছুটি দেওয়া বা অপসারণের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশ নেন- শাহরিয়ার আবেদিন, অপূর্ব, মীর রানা, সাব্বির, নাফিসা আনজুম ইমু, রোমিও, উমর ফারুক, ইয়াসির সরকার, সাদিয়া আফরিন ও মোহাইমিনুল বাশার রাজ। আলোচনার সময় বাইরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা-  এক দুই তিন চার ফরিদ তুই গদি ছাড়, সাস্টিয়ান সাস্টিয়ান এক হও এক হও, পতন পতন পতন চাই ফরিদের পতন চাই, এক দফা এক দাবি ফরিদ তুই কবে যাবি- বলে স্লোগান দেন।

এদিকে এর আগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনিও এ আন্দোলনের পেছনে তৃতীয় কোনো পক্ষের সম্পৃক্ততার কথা বলেছেন। বর্তমান ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভালোভাবে চলছে এমন উল্লেখ করে তিনি বলেছেন প্রথম মেয়াদে তিনি ভালোভাবে ক্যাম্পাস পরিচালনা করায় দ্বিতীয় মেয়াদে আবারো তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। 

রেডিওটুডে নিউজ/এমএস/এসজেএন

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের