বৃহস্পতিবার,

২৫ এপ্রিল ২০২৪,

১২ বৈশাখ ১৪৩১

বৃহস্পতিবার,

২৫ এপ্রিল ২০২৪,

১২ বৈশাখ ১৪৩১

Radio Today News

হেডমাস্টার এখন চায়ের দোকানদার 

সিদ্দিক আলম দয়াল

প্রকাশিত: ০৩:৩২, ১৭ আগস্ট ২০২১

Google News
হেডমাস্টার এখন চায়ের দোকানদার 

খাইরুল ইসলাম বাদশা মিয়া

শিক্ষককে বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। তেমনি একজন শিক্ষক খাইরুল ইসলাম বাদশা মিয়া। একদিন তার চারপাশ ঘিরে থাকত শিক্ষার্থীদের কোলাহল। স্বপ্ন দেখেছিলেন মানুষ গড়ার কারিগর হওয়ার। কিন্তু করোনার করাল থাবা কেড়ে নিয়েছে তার স্বপ্ন। মহামরির কারণে স্কুল বন্ধ করে দেয়ায় জীবন বাঁচাতে বেছে নিতে হয়েছে বিকল্প পথ। তাই তিনি এখন চায়ের দোকানদার। একজন হেডমাস্টারের এই করুণ পরিনতিতে দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া কোন কিছুই করার নেই শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর। 

গাইবান্ধা সদর উপজেলার গিদারী ইউনিয়নের এক শিক্ষিত পরিবারের সন্তান খায়রুল ইসলাম বাদশা। সরকারি চাকুরি না করে নিজের পৈতৃক জমি বিক্রি করে রেজিয়া মার্কেটের পাশে ৪ শতক জায়গা কিনেন। আশায় বুক বেধে ২০০১ সালে ৮-১০ জন শিক্ষিত ছেলে মেয়ে নিয়ে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিয়ে গড়ে তোলেন আহমোদিয়া স্কুল এবং কোচিং সেন্টার। ৩ শতাধিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিশু শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করেন। 

গিদারী ইউনিয়নের মহসিন আলী বলেন, "স্কুলটিতে পড়ালেখার মান ভালো হওয়ায় দূরদূরান্ত থেকে শিশুরা স্কুলে আসতেন। আমার দুই মেয়েও এই স্কুলে কোচিং করতেন। কিন্তু এখন স্কুল নাই তাই ঘরে বসে যতটুকু করা যায় আরকি।"

কাউন্সিলের বাজারের আরজিনা বেগম মেয়েকে স্কুলে দিয়ে বেশ নিশ্চিন্তেই ছিলেন । পড়ালেখা ভালোই হতো । স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার তিনি মেয়েকে নিয়ে পড়েছেন মহাবিপদে । ওতো টাকা দিয়ে প্রাইভেট মাস্টারও রাখতে পারছেন না, মেয়েকেও পড়াতে পারছেন না। তাই অল্প বয়সে মেয়েকে বিয়ে দেয়া কথা ভাবছেন তিনি।

স্কুলটির শিক্ষিকা হামিদা বেগম জানান, স্কুলের আয় দিয়ে ভালোই চলছিলো ১০ জন শিক্ষক সহ সকলের সংসার। কিন্তু, করোনা ও লকডাউনের কারনে সরকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। তার সংসারে এখন ঘোর অমানিশা। স্কুলের বেতন যা আসতো তাতে কৃষি মজুর স্বামী সহ ৪ জনের সংসারে অভাব হতো না । কিন্তু এখন তিনি ধার দেনা করে আর স্বামীর সামান্য আয়ে কোনো মতো চালিয়ে নিচ্ছেন। 

খায়রুল ইসলাম বাদশা মিয়া বলেন, "আর কতো টানা যায়। করোনা ও লকডাউনে স্বপ্ল খান খান হয়ে গেছে। প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে যাওয়ায় বেদনা এক দুঃস্বপ্নের মতো। রাতে ঘুমাতে পারি না। কী ছিলাম, আর কী হলাম ।" 

করোনায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষক নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। নিজের জায়গা জমি বিক্রি করে শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করে বন্ধ করে দেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর নিজের ৫ ছেলে মেয়ের সংসার চালাতে গিয়ে সংকটে পরেন। বাধ্য হয়ে হেড মাষ্টার বাদশা মিয়া স্কুল ঘরের দুই পাশের বেড়া খুলে চায়ের দোকান খুলে বসেন। নিজের হাতে চা তৈরী করে খদ্দের মেটান। খদ্দেরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনার তুললেও বাস্তবতা মেনে নিতে তাকে হেড মাষ্টার থেকে চায়ের দোকানী হতে হয়েছে।  

গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রাফিউল আলম বলেন, করোনাকালীন অসংখ্য স্কুল ও কোচিং সেন্টার নিশ্চিহ্ন হয়েছে। এসব স্কুলের শিক্ষকদের আমরা সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। 

রেডিওটুডে নিউজ/ইকে

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের