তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
বাবা হরিদাস আর মা প্রভাবতী দেবী ছিলেন ধার্মিক আর আদর্শবান মানুষ। বাড়িতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দেবী তারা মায়ের পুজোঁ শুরুর দশ মাস পরে তার জন্ম হওয়ায় নাম রাখা হয় তারা। পরবর্তীতে যিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।
অবিভক্ত ভারতের লাভপুরের যাদবলাল হাই স্কুল থেকে ১৯১৬ সালে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাস করে তারাশঙ্কর ভর্তি হন সেন্ট জেভিয়ার্স ও পরে সাউথ সাবার্বান কলেজে। তবে ছাত্রাবস্থায় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি তিনি।
স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে ১৯৩০ সালে কিছুদিনের জন্য কারাবন্দী থাকেন। পরে ১৯৫২ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিধান পরিষদের সদস্যও হন তিনি।
১৯৩২ সালে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে দেখা করার পর থেকেই সাহিত্য চর্চায় মনোনিবেশ করেন তারাশঙ্কর। সেবছরই বের হয় তার প্রথম উপন্যাস চৈতালী ঘূর্ণি। জীবদ্দশায় তিনি মোট ৬৫ টি উপন্যাস, ৫৩ টি গল্পগ্রন্থ, ১২ টি নাটক, ৪টি আত্মজীবনী ও ২টি ভ্রমন কাহিনী লিখেছেন। তিনি তার লেখায় তুলে ধরেছেন বীরভূম- বর্ধমান অঞ্চলের সাওঁতাল, বাগদি, বোষ্টম, বাউরি, ডোম, গ্রাম্য কবিয়াল সম্প্রদায়ের কথা। গেয়েছেন গ্রামীণ অথবা নগর জীবনের প্রেক্ষাপটে মনুষত্ত্বের জয়গান।
তার উপন্যাস, গল্প ও নাটক নিয়ে এপর্যন্ত নির্মিত হয়েছে চল্লিশটিরও বেশি চলচ্চিত্র। এদের মধ্যে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত আরোগ্য নিকেতন, সত্যজিৎ রায় পরিচালিত জলসাঘর ও অভিযান, দেবকী বসু পরিচালিত কবি ছাড়াও চাপা ডাঙার বউ, গণদেবতা, ডাকহরকরা, জয়া প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করার স্বীকৃতি হিসেবে ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ পদক ছাড়াও লাভ করেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার কর্তৃক রবীন্দ্র পুরস্কার, সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার সহ নানা সম্মাননা।
১৯৭১ সালে মৃত্যুবরণ করা তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গের বীরভুম জেলার লাভপুর গ্রামের জমিদার পরিবারে ১৮৯৮ সালের ২৩ আগষ্ট জন্মগ্রহন করেন। জন্মবার্ষিকীতে, কালজয়ী এই সাহিত্যিককে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায়।
রেডিওটুডে নিউজ/ইকে