সংগৃহীত ছবি
বেগুনি রংয়ের প্রতি আমরা অনেকেই বেশ দুর্বল। অর্থাৎ নারীদের ক্ষেত্রে একটু বেগুনি রং বেশি প্রিয়। লাল ও নীলের সংমিশ্রণে হয় বেগুনি। তবে আপনারা জানলে অনেকেই অবাক হবেন যে এই বেগুনি রংয়ের কাপড় পরিধান করা পরিপূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ছিল প্রাচীন রোমে।
চলুন তাহলে জেনে আসা যাক প্রাচীনকালের এই নিষিদ্ধ আইনের নিয়ম কানুন সম্পর্কে :
প্রাচীন সময়ে আইন করেই বেশ সাধারণ মানুষকে এই রঙের কাপড় পরা থেকে বিরত রাখা হয়েছিল। সে সময়ে আইন ভঙ্গ করলে সাধারণ মানুষের জন্য থাকতো কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা। ইতিহাসের পাতায় নানা কারণে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে প্রাচীন রোম। রোম শহর পুড়ে যাওয়ার সময় নিরোর বাঁশি বাজানো এই ঘটনাটি সবচেয়ে বেশি চর্চায় রেখেছে রোম প্রাচীন ইতিহাসকে।
তবে প্রাচীন রোমের আরো কিছু বেশ ইতিহাস রয়েছে যেগুলো জানলে বিশ্ব এখনো বিস্মিত হয়। রোমানরা মূলত বেগুনি রংকে মনে করতেন আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে। শুধু তাই নয়, এই রঙের দাম তখন স্বর্ণের চেয়েও অধিক বেশি ছিল। প্রাচীন যুগের সময়ে সম্রাটরা এই রং সাম্রাজ্যিক মর্যাদা এবং কর্তৃত্ব বোঝাতে ব্যবহার করতেন।
সম্রাটদের এরূপ মনোভাব এর কারনে বেগুনি রং শুধু সম্রাটদের পোশাকেই শোভা পেত। তাই নিম্ন শ্রেণি ও সাধারণ মানুষের জন্য এই রং ব্যবহারে ছিল পরিপূর্ণ নিষিদ্ধতা। ফেনীশিয়ানরা তৈরি করেছিল টাইরিয়ান বেগুনি রঞ্জক। আর এটি হাজার হাজার সামুদ্রিক শামুক থেকে তৈরি করা হতো।
সংগ্রহ করা এই সামুদ্রিক শামুক গুলো প্রথমে বহুদিন ধরে সিসায় সিদ্ধ করা হতো যাতে এই শামুক থেকে এক ধরনের রাসায়নিক তরল তারা সংগ্রহ করতে পারে। ওই রাসায়নিক তরল থেকে তারা এক বিশেষ ধরনের প্রক্রিয়া অবলম্বনের মাধ্যমে এই বেগুনি রং তৈরি করতেন। যার কারণে মূলত এই রঙের দাম ছিল অধিক। বিশেষ মূল্যের কারণে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে ছিল এই রং এর ব্যবহার এবং সেই সাথে নিষিদ্ধ বটে। শুধু তাই নয় এই আইন অমান্যকারীকে সেই সময়ে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত দেওয়া হতো।
শুধুমাত্র সেই সময়ের সম্রাটদের পোশাকে এই রঙের ব্যবহার দেখা যেত। এরূপ আজব নিষেধাজ্ঞার অবসান ঘটে অবশেষে ১২০৪ সালের কনস্টান্টিনোপলকে বরখাস্ত করার মাধ্যমে। প্রাচীন যুগে কিংবা রোমানের যুগে শুধু বেগুনি রংয়ের পোশাক নিষিদ্ধ নয় বরং সাধারণ জনগণের জন্য বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা কিংবা আইন কানুন চাপিয়ে দেওয়া হতো। সে সময়ে রোমানের কোন নারীর চুল সোনালী রং রাখার নিয়ম ছিল না। এতে যাদের জন্মগত চুলের রং সোনালী তাদের কলব বা বিভিন্ন উপায়ে সেই রং পরিবর্তন করা আবশ্যক ছিল। কারণ সে সময় চুলের রং সোনালী রাখার নিয়ম ছিল শুধুমাত্র যৌনকর্মীদের জন্য।
মূলত এই কারণেই অন্যান্য নারীদের ক্ষেত্রে সোনালী রংয়ের চুল ধারন পরিপূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। খুব সহজেই যেন তাদের চেনা যায় তাই এই আইন করা হয়েছিল। সাধারণ নারীরা রাস্তাঘাটের সম্মানহানি থেকে যাতে রক্ষা পেতে পারে। সে সময়ে আরো একটি আজব আইন ছিল আর তা হল বাবা চাইলেই তার সন্তানকে বিক্রি করে দিতে পারতেন। রোমানদের আজব কিছু সংস্কৃতির মধ্যে এটি ছিল একটি অন্যতম আইন।
যেখানে পিতা চাইলেই তার পুত্রকে ক্রীতদাস হিসেবে অন্যের কাছে পয়সার বিনিময় বিক্রি করে দিতে পারতেন। শুধু বিক্রি করাই নয় পিতা চাইলে তার সন্তানকে হত্যা করতে পারতেন এজন্য তাদের কোনরূপ শাস্তির মুখে পড়তে হতো না। এমনই সব আজব আইন কানুন দিয়ে চল ছিল রোমান সম্রাটদের। তবে বহু বছর পার করার পর আধুনিকতার ছোঁয়ায় রোমানদের সাম্রাজ্যের ব্যতিক্রম এবং বর্বর এসব আইন কানুন বন্ধ হতে থাকে পর্যায়ক্রমে।
এস আর