শনিবার,

২০ এপ্রিল ২০২৪,

৭ বৈশাখ ১৪৩১

শনিবার,

২০ এপ্রিল ২০২৪,

৭ বৈশাখ ১৪৩১

Radio Today News

যে শহরে সবাই উড়োজাহাজের মালিক

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: ০২:১১, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

আপডেট: ০৪:০৬, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

Google News

এমন এক শহর যেখানে অলি গলি ছোট বড় রাস্তা বলে কিছুই নেই, একটাই পথ, তাও আবার পুরোটাই রানওয়ে। শহরকে দু’ভাগে ভাগ করে সেই রানওয়ে এসে মিশেছে যে রাস্তায়, সেটি ১০০ ফুটের মত প্রশস্ত। অনায়াসে বিমান ওঠানামা করতে পারে সেখানেও। এমনকি ব্যস্ত রাস্তায় চলন্ত গাড়িকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে পারে বিনা বাধায়। 

আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের বিষ্ময়কর এই শহরের নাম ক্যামেরন পার্ক। শহরটিতে যারা বসবাস করেন, তাঁরা অফিস যান বিমানে চড়ে। এমনকি সপ্তাহান্তের ছুটি কাটাতেও বেড়িয়ে পড়েন বিমান নিয়েই। সরকারি নথিতে অবশ্য ক্যামেরন পার্ক কোন শহর নয়। শহরের আদলে একটি ফ্লাই ইন রেসিডেন্সিয়াল কমিউনিটি। এই ধরনের কমিউনিটি মূলত বিমানবন্দর কেন্দ্রীক। বিশ্বে এমন ফ্লাই-ইন-কমিউনিটি রয়েছে ৬৪০টি। তার মধ্যে ৬১০টিই আমেরিকায়। তবে বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে ক্যামেরন পার্ক সবচেয়ে নিখুঁত বলে মনে করা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার বহু বিমানবন্দর অকেজো হয়ে পড়েছিল। একইসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত পাইলটের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ১৯৩৯ সালে যেখানে এরকম বৈমানিকের সংখ্যা ছিল ৩৪ হাজার, সাত বছরের ব্যবধানে এ সংখ্যা বেড়ে চার লাখে গিয়ে ঠেকে। যুদ্ধে অংশ নেওয়া সেসব অবসরপ্রাপ্ত বিমানচালকদের আরামের অবসর দিতেই গড়ে তোলা হয় ফ্লাই ইন রেসিডেন্সিয়াল কমিউনিটি। আমেরিকার বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয়, অকেজো বিমানবন্দরগুলিতেই অবসরপ্রাপ্ত বিমানচালকদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে। চেনা-জানা পরিবেশে থাকতে বিমানচালকদের ভাল লাগবে, এই ধারণা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তৈরি করা হয় ক্যামেরন পার্ক। এক সময় এর নাম ছিল ক্যামেরন পার্ক এয়ারপোর্ট। সেই নাম বদলে হয় ক্যামেরন পার্ক এয়ারপার্ক। শহরের প্রতিটি পরিবারেরই কোনও না কোনও সদস্য এক সময়ে বিমানচালক ছিলেন।

আর পাঁচটা শহরে বাস-ট্যাক্সি বা ব্যক্তিগত গাড়ি যে ভাবে চলে, এ শহরে বিমানও চলে সেভাবেই। গাড়ির গ্যারাজের মতোই বিমান রাখার জায়গা বা হ্যাঙ্গার রয়েছে ঘরে ঘরে। রাস্তার পাশের সাইনবোর্ডগুলি অনেকটাই নিচু। বিমানের ডানা লেগে যাতে নষ্ট না হয়ে যায়, তার জন্যই অতিরিক্ত সাবধানতা। এমনকি রাস্তার নামও বোয়িং রোড।

পুরনো আমলের ঐতিহ্যবাহী গাড়ির প্রদর্শনীর প্রচলন আছে বিশ্বের বহু শহরে। ক্যামেরন পার্কে গাড়ির পাশাপাশি বিমানেরও প্রদর্শনী হয়। বছরে এক দিন রানওয়ে বরাবর সারিবদ্ধভাবে রাখা হয় বিভিন্ন মডেলের বিমান। রানওয়ে ধরে একসঙ্গে সেই সব বিমানের উড়াল দেবার দৃশ্যও দেখার মতো। হাতে গোনা ১২৪টি বাড়ি রয়েছে এই শহরে। তার মধ্যে ২০টি বাড়ি ফাঁকা পড়ে রয়েছে।সেই সব বাড়ি স্বস্তায় বেচেও দিচ্ছেন মালিকরা। ফেব্রুয়ারি মাসেই এমন একটি বাড়ির বিজ্ঞাপন প্রকাশ্যে আসে। ইন্টারনেটে দেওয়া সেই বিজ্ঞাপনে বিমানের হ্যাঙ্গার-সহ সেই বাড়িটির দাম চাওয়া হয়েছিল মাত্র ছয়লাখ ৮৫ হাজার ডলার।

ক্যামেরন পার্কের বাসিন্দারা আরামেই আছেন। ছোট্ট শহরটিতে সুযোগ-সুবিধার কোনও কমতি নেই। স্কুল, বাজার, হাসপাতাল, শপিং মলতো  রয়েছেই। তাছাড়া, ইচ্ছে হলেই তো থাকছে নিজের মত করে আকাশে উড়াল দেবার সুযোগ। 
 

রেডিওটুডে নিউজ/ইকে

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের