শুক্রবার,

২৬ এপ্রিল ২০২৪,

১২ বৈশাখ ১৪৩১

শুক্রবার,

২৬ এপ্রিল ২০২৪,

১২ বৈশাখ ১৪৩১

Radio Today News

আফগানিস্তান ইস্যু কি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পতন ঘটালো?

সোহেল রানা

প্রকাশিত: ২১:০৬, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১

আপডেট: ২১:০৭, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১

Google News
আফগানিস্তান ইস্যু কি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পতন ঘটালো?

ছবি: সংগৃহীত

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বেশ কয়েকটি পরাশক্তিরই কোমড় ভেঙ্গে দিয়েছিল। তখনই পতন ঘটে অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের। অটোমানদের একেবারে আনাতোলিয়ায় এনে ঘিরে ফেলা হয়। জন্ম হয় নতুন রাষ্ট্র তুরস্কের। রুশ সাম্রাজ্য ভেঙে যায়, কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে এই সাম্রাজ্য পরিণত হয় সোভিয়েত ইউনিয়নে। কিছু বছরের ব্যবধানে জার্মান সাম্রাজ্যও মুখ থুবড়ে পড়ে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মধ্য দিয়েই পরাশক্তি হিসেবে উঁকি দিতে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। ব্রিটেনই যুদ্ধে ডেকে এনেছিল আমেরিকাকে, আর তাতেই ইংরেজদেরই কপাল পুড়ল। আমেরিকার অর্থনীতি ও নৌশক্তি শিগগিরই ব্রিটেনকে ছাড়িয়ে গেলো। যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধই চূড়ান্ত ধাক্কা দিয়ে আমেরিকাকে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে বসিয়ে দেয়। এই মহাযুদ্ধের ৭৫ বছর পরে এসে, এখন প্রশ্ন ওঠছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কি পতন ঘটলো?

আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ গুটিয়ে যাবার কারণ হিসেবে সামনে আনা হচ্ছে আফগানিস্তান ইস্যুকে। ২০ বছরের দীর্ঘ লড়াই শেষে গত ৩১ আগস্টের মধ্যে আফগানিস্তান ছাড়ে মার্কিন সেনারা। তার আগে ১৫ই আগস্ট পতন ঘটে মার্কিনপন্থী কাবুল সরকারের। জো বাইডেন ঘোষণা দেন, ভবিষ্যতে আর কোন রাষ্ট্র ‘ঠিক’ করতে যুদ্ধে জড়াবে না আমেরিকা।


আমেরিকা আফগানিস্তানে দুই ট্রিলিয়ন ডলারের মত খরচ করেছে। এই অর্থ খরচ করা হয়েছে কয়েকশ সামরিক বিমান, হাজার হাজার সাঁজোয়া গাড়ি, আফগান সেনাদের প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধবিধ্বস্ত কাবুল পুনর্গঠনে। কিন্তু আমেরিকার এত বছরের সব অর্থ, পরিশ্রম আর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যাবতীয় উদ্যোগই ব্যর্থ হয়েছে মাত্র কয়েকমাসের আক্রমণে। আশরাফ গণি সরকারকে হটিয়ে কাবুল দখল করেছে অন্য এক শক্তি।

কেবল আফগানিস্তানই নয়, অতীতেও আমেরিকার অনেক ব্যর্থতা ছিল, আবার ঘুরে দাঁড়াবার ইতিহাসও আছে। ১৯৭৩ সালে ভিয়েতনাম থেকে আমেরিকাকে লজ্জাজনকভাবে সরে আসতে হয়েছিল। দু’বছর বাদেই উৎখাত হয়েছিল তখনকার দক্ষিণ ভিয়েতনামের মার্কিনপন্থী সরকার। ১৯৭৩ সালে সিরিয়া ও মিসর যৌথভাবে আক্রমণ করে ইজরাইলের দখল করা আরব এলাকাগুলোতে। আরব জাতীয়তাবাদী এই দুই সরকারের পক্ষে এগিয়ে আসে সোভিয়েত ইউনিয়ন। অন্যদিকে, আমেরিকা নেয় ইজরাইলের পক্ষ। আকাশ পথে ইহুদিদের অস্ত্র সহায়তা দেয় মার্কিন বিমানবাহিনী। ক্ষুব্ধ আরবরা এবার আমেরিকাকেই লক্ষ্যবস্তু করলো। তেল অবরোধে ধসে গেলো মার্কিন অর্থনীতি।

অবশ্য এক দশক না যেতেই মিশর সহ মধ্যপ্রাচ্যে সোভিয়েত প্রভাব কমাতে পারে আমেরিকা। রুশদের আরব জাতীয়তাবাদী ব্লক থেকে একরকম বিচ্ছিন্নই করে দিলো জিমি কার্টার প্রশাসন। এরপর থেকে বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব আমেরিকার হাতেই থেকেছে।
 
কিন্তু ২০০৩ সালে মিথ্যা অভিযোগে ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়ালে প্রশ্নের মুখে পড়ে মার্কিন নেতৃত্ব। মূলত এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ পতনের প্রান্তে এসে দাঁড়ায়। এই পতন আরো ত্বরান্বিত হয় ২০০৮ সালে। সে বছর মহামন্দায় পড়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে মার্কিন অর্থনীতি। দেশটির আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মারাত্মভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর তখনই আমেরিকার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও রাশিয়া নতুন শক্তিতে দৃশ্যপটে আসে। এরপর থেকে আমেরিকাকে টিকে থাকতে হয়েছে অনেকটা সংগ্রাম করেই।

ডনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক প্রভাব খাদের কিনার চলে যায়। দীর্ঘদিনের মিত্র পাকিস্তান ও তুরস্কের সাথে দূরত্ব তৈরি হয়, ঘনিষ্ঠতা বাড়ে ভারতের সাথে।

আমেরিকার দুর্বলতা আরো স্পষ্ট হয় করোনা মহামারি ইস্যুতে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের চেয়েও দক্ষভাবে মহামারি মোকাবেলা করতে সমর্থ হয় চীন সহ এশিয়ার কিছু দেশ। আর সবশেষ আফগানিস্তান থেকে সেনা গুটিয়ে নেবার পর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের চূড়ান্ত অবসান ঘটতে চলেছে বলে অনেকেই মনে করছেন। তবে তার অর্থ এই নয় যে, এখনই যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বরাজনীতি ও অর্থনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে। কারণ বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি এখনো তাঁর হাতে। এমনকি সামরিক সক্ষমতায়ও দেশটি অপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি।

রেডিওটুডে নিউজ/জেএফ

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের