ইভো জারস্কাই
একটা শহরে তিনি একাই থাকেন এবং এই শহরের তিনি একমাত্র বাসিন্দা। গত ১৩ বছর ধরে বাড়িতে নয় থাকেন ‘গুহা’য়। তিনি মার্জিত ভাবে কথা বলেন। প্রশংসা শুনলে লজ্জা পান আর বেদম ভয় পান এক অজানা ভাইরাসের কথা ভেবে। তিনি ইভো জারস্কাই। ভাঙাচোরা, ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে বানিয়ে ফেলতে পারেন বিমন। শুধু বিমান বানানোয় নয়, তাতে চেপে উড়ে যাওয়া তাঁর কাছে যেন বাঁ হাতের খেলা।
তার ধারণা, এখন যেমন অতিমারির ভয়ে বিশ্ব ঘরবন্দি। খুব শীঘ্রই এক অজানা ভাইরাস দখল নেবে গোটা পৃথিবী। তখন ঐ ভাইরাস থেকে পালানোর পথ পাবেন না কেউ। তাই সব ঝামেলার মূল কারণকেই ছেঁটে ফেলতে চেয়েছেন তিনি। জনশূন্য হয়ে থাকতে চেয়েছেন। একা থাকা শিখতে চেয়েছেন।
সেই ভাবনা থেকেই ২০০৭ সালে জনমানবহীন এক শহরে আসেন ইভো। শহরের নাম লুসিন। আমেরিকার উটাহ-র লালমাটির রুক্ষ এই শহরে শেষ জনবসতি ছিল ১৯৭০ সালে। তার পর থেকে পরিত্যক্ত ছিল শহরটি। ইভো এখানেই আসেন একা থাকবেন বলে।
শহরের প্রান্তে বানিয়ে ফেলেন নিজের ‘গুহা’। প্রাকৃতিক কোনও গুহা নয়। কাঠ মাটি দিয়ে এই গুহা নিজেই বানিয়েছিলেন তিনি। নাম দিয়েছেন ‘ম্যান কেভ’। দৈর্ঘ্যে ১০০ ফুট, প্রস্থে ৫০ ফুট সেই ‘গুহা’য় অবশ্য আধুনিক ব্যবস্থার কমতি নেই। ‘গুহা’য় আছে বিদ্যুৎ সংযোগ, ইন্টারনেট, টিভি এমনকি নিয়মিত জলের সরবরাহও আছে সেখানে। গুহার আরও একটি বিশেষত্ব হল, এটি অতিরিক্ত দেওয়াল বর্জিত। কারণ ইভো দেওয়াল পছন্দ করেন না। জনবিবর্জিত শহরে থাকেন ভয় পান ইভো। তাই আত্মরক্ষারও ভরপুর ব্যবস্থা আছে ইভোর ম্যান কেভে। রয়েছে আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্র। রাইফেল এমনকি পিস্তলও।
গুহা লাগোয়া হ্যাঙারে থাকে ইভোর সাধের বিমান। দিনের একটা বড় সময় এই বিমান নিয়েই কাটান তিনি কারণ এই বিমানেই তাঁর বাঁচার একমাত্র উপায় বলে মনে করেন তিনি। ইভোর এই ভয়কে মানষিক রোগ বলে মনে হতে পারে। কিন্তু বিকারগ্রস্ত মনের অধিকারী কি করে সফল শিল্পপতি হন ? ইভো একজন সফল শিল্পপতি। বিমান, হেলিকপ্টারের প্রপেলার বানায় তাঁর সংস্থা। বিমান তৈরির দুনিয়ায় ইভোর সংস্থার প্রপেলারের বেশ নাম আর চাহিদাও আছে।
ইভো অবশ্য জানিয়েছেন, ব্যবসার কথা ভেবে প্রপেলার বানানোর কাজ শুরু করেননি তিনি। বিমান বানানোর শখ থেকেই তৈরি করতে শুরু করেছিলেন। পরে দেখলেন, তাঁর বানানো প্রপেলার অনেকেই কিনতে চাইছেন। চাহিদার জোগান দিতে বেশি প্রপেলার বানানো শুরু করেন ইভো। সেখান থেকেই রমরমা ব্যবসা। প্রতিভাবান ইভো হঠাৎ অজানা ভাইরাসের কথা ভাবলেন কেন? কেনই বা তিনি দিন রাত পালিয়ে যাওয়ার ফন্দি আঁটেন ? তা জানতে আরও একটু পিছিয়ে যেতে হবে।
এখন আমেরিকায় থাকলেও আসলে ইভো চেকস্লোভাকিয়ার মানুষ। সে দেশে যখন রাজনৈতিক অভ্যূস্থান পুরোদমে চলছে, তখন সেখান থেকে পালিয়ে এসেছিলেন তিনি। পালানোর জন্য বিমান বানিয়েছিলেন নিজে হাতে। ভাঙাচোরা, ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে তৈরি ওই বিমান উড়িয়ে চেকস্লোভাকিয়া থেকে সোজা আমেরিকায় এসে পৌঁছন ইভো। পরিবারকে জানিয়ে আসেননি। পরিবারের কাছে আর ফিরেও জাননি।
ইভোর পলায়ন প্রবণতা সেই তখন থেকেই। আমেরিকায় এসে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে শুরু করেছিলেন। পাশাপাশি চলছিল নিজের বিমান তৈরির পরিকল্পনাও। ২০০৭ সালে হঠাৎই তাঁর মনে হয় সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁর ঠিক বনিবনা হচ্ছে না। আবার পালিয়ে যান ইভো। চলে আসেন লুসিনে।
গত বছর করোনা অতিমারি পরিস্থিতি এই ধারণা আরও দৃঢ করে ইভোর। করোনার থেকেও সাংঘাতিক এক অজানা ভাইরাসের কল্পনা করে তার থেকে পালানোর প্রস্তুতি শুরু করেন ইভো। লুসিনে আসা অবধি ছোটখাটো নানা রকম প্রকল্পের কথা ভেবেছেন। তার কিছু কিছু বাস্তবায়িতও করেছেন। বিদ্যুতের ব্যাপারে স্বনির্ভর হওয়া তার মধ্যে অন্যতম। অতিমারির পর থেকে আপাতত পালিয়ে যাওয়ার বিমান বানানোই তাঁর ভাবনার মূলে।
ইভোর স্বস্তি একটাই। অজানা ভাইরাস যখন আসবে তিনি অনায়াসে তাকে টেক্কা দিয়ে পালিয়ে যাবেন। আবার কোনও জনরহিত এলাকায় গড়ে তুলবেন নিজের গুহা।
রেডিওটুডে নিউজ/ইকে