শনিবার,

২০ এপ্রিল ২০২৪,

৭ বৈশাখ ১৪৩১

শনিবার,

২০ এপ্রিল ২০২৪,

৭ বৈশাখ ১৪৩১

Radio Today News

চীন কেন পশ্চিমাদের টার্গেট? 

সোহেল রানা

প্রকাশিত: ২১:৫৬, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

আপডেট: ২২:০৮, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

Google News
চীন কেন পশ্চিমাদের টার্গেট? 

তাইওয়ান ও উত্তর কোরিয়া নিয়ে যখন উত্তেজনা তুঙ্গে তখনই নতুন করে আলোচনায় চীন বিরোধী শক্তিগুলো। ১৫ই সেপ্টেম্বর নতুন এক প্রতিরক্ষা চুক্তির খবর এসেছে বিশ্বগণমাধ্যমে। চীনের বৈরি তিন দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া একটি ত্রিপক্ষীয় সামরিক সহযোগিতা চুক্তি ঘোষণা করেছে। চুক্তিটির উদ্দেশ্য হলো অস্ট্রেলিয়াকে প্রথমবারের মতো পারমাণবিক চালিত সাবমেরিন তৈরি করতে সাহায্য করা।
দুই সাম্রাজ্যবাদী শক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য কেন হঠাৎ করে অস্ট্রেলিয়াকে শক্তিশালী হতে সাহায্য করছে? স্পষ্টতই তাদের চুড়ান্ত টার্গেট চীন এবং তারা আঞ্চলিক শক্তিধর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চীনের বিপরীতে অস্ট্রেলিয়াকে দাঁড় করাতে চাইছে। কারণ দক্ষিণ চীন সাগরে তিনদেশেরই ‘কমন শত্রু’ চীন। অবশ্য চুক্তি ঘোষণার দিনে দেশ তিনটির কোন সরকারপ্রধানই চীনের নাম নেন নি। চীনের সাথে পাশ্চাত্য ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর দ্বন্দের হেতু কী? 

আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন অনুযায়ী, কোনো স্বাধীন রাষ্ট্র তাদের উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত সামুদ্রিক অঞ্চলের মালিকানা পেয়ে থাকে। এই এলাকায় দেশটির নিরঙ্কুশ সার্বভৌম অধিকার বজায় থাকে, কোন বিদেশি জাহাজ এই অংশে অনুমতি ছাড়া ঢুকতে পারে না। অন্যদিকে, উপকূল থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত অঞ্চলকে বলা হয় 'এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন'। এই অঞ্চলে প্রাকৃতিক সম্পদ ও মৎস্য আহরণ, এমনকি কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণেরও অধিকার ভোগ করে থাকে সংশ্লিষ্ট দেশটি। 
কিন্তু দক্ষিণ চীন সাগরে চীন এই আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন লঙ্ঘন করছে। নাইন ড্যাশ লাইন অনুযায়ী, তারা মূল ভূখন্ড থেকে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার সামুদ্রিক অঞ্চল নিজেদের বলে দাবি করছে। ফলে যে এলাকা আন্তর্জাতিক সমুদ্র সীমার অংশ, সে এলাকাতেও বিদেশি কোন সামরিক জাহাজ বা বাণিজ্য জাহাজের উপস্থিতি দেশটি সহ্য করতে পারছে না। 

কিন্তু ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় দক্ষিণ চীন সাগরে প্রায়ই রণতরী পাঠিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। আর বিদেশিদের এই সামরিক জাহাজের উপস্থিতি নিয়েই দেশগুলোর সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে চীন। এর বাইরেও দক্ষিণ চীন সাগরের অংশ ভাগাভাগি নিয়ে, চীন শত্রুতায় জড়িয়ে পড়েছে এই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশের সাথে। দেশগুলো হলো ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, ব্রুনাই, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং জাপান। এই শত্রুতার মূল কারণ দক্ষিণ চীন সাগরে থাকা বিপুল পরিমাণ খনিজ সম্পদ ও বেশ কয়েকটি দ্বীপের মালিকানা নির্ধারণ জটিলতা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জ, স্কারবরো শোল অঞ্চল ও প্যারাসেল দ্বীপপুঞ্জসহ বেশ কয়েকটি প্রবাল দ্বীপ। চীন তার দখল পোক্ত করতে অনেক দিন ধরেই দক্ষিণ চীন সাগরে এক গুচ্ছ কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করছে। আর এসব দ্বীপে চীন সামরিক স্থাপনা তৈরি করছে বলে স্যাটেলাইটে তোলা ছবি থেকে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।

দক্ষিণ চীন সাগর অঞ্চল খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসে সমৃদ্ধ। ধারণা করা হয়, এই অঞ্চলে ১১ বিলিয়ন ব্যারেল তেল ও ১৯০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস রয়েছে। এই অঞ্চল দিয়ে বিশ্বের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি জাহাজ চলাচল করে। প্রতি বছর ৪০ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি বানিজ্য হয় এই পথ দিয়েই। তাই গুরুত্বপূর্ণ এই আন্তর্জাতিক জলসীমায় চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক হুমকি প্রতিবেশী দেশসহ পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য শংকার জন্ম দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি এবং ইন্দো- প্রশান্ত মহাসাগরে সামরিক উপস্থিতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তিত। এই দুশ্চিন্তা থেকেই নয়া সামরিক চুক্তির ঘোষণা এলো। চুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে বিশ্বের পারমাণবিক শক্তি চালিত সাবমেরিন থাকা সপ্তম দেশে পরিণত হবে অস্ট্রেলিয়া। তবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়া পারমাণবিক ক্ষমতাধর দেশ হতে চাইছে না। কিন্তু এই পদক্ষেপ যে চীনের স্নায়ুবিক চাপ বাড়িয়ে দেবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।  

রেডিওটুডে নিউজ/এইচবি

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের