বৃহস্পতিবার,

২৫ এপ্রিল ২০২৪,

১২ বৈশাখ ১৪৩১

বৃহস্পতিবার,

২৫ এপ্রিল ২০২৪,

১২ বৈশাখ ১৪৩১

Radio Today News

বিরল রোগে আক্রান্ত সন্তানের চিকিৎসা করলেন হাইস্কুল পাশ বাবা

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:৪৩, ২৬ নভেম্বর ২০২১

Google News
বিরল রোগে আক্রান্ত সন্তানের চিকিৎসা করলেন হাইস্কুল পাশ বাবা

ছবি ইন্টারনেট

চীনের ইউনান প্রদেশের কুমিংয়ে জন্ম নেওয়া হাওয়াং ভুগছে বিরলতম ব্যাধি মেনকেস সিনড্রোমে। ছেলেটির বয়স মাত্র দুবছর। লাখে একজন আক্রান্ত হয় এ রোগে। জেনেটিক ডিজর্ডার থেকে আক্রান্ত হওয়া মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র বিকাশ না হওয়ায় এ রোগে আক্রান্তরা বাচে বড়জোর তিন বছর।

মেনকেস প্রথম শনাক্ত হয় ১৯৬২ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, ‘এ রোগে আক্রান্তরা খুব অল্প বয়সেই মারা যায়। কোনো রোগী ১০ বছর বেঁচেছিল এমন ঘটনা বিরল।’

স্থানীয়ভাবে এ রোগের ওষুধ দুষ্প্রাপ্য। কিন্তু তার তিরিশ বছর বয়সি বাবা জু ওয়েই নাছোড় বান্দা। ওষুধের সন্ধানে নেমে পড়লেন। যে করেই ছেলেকে বাঁচাতে হবে। এক সময় হাইস্কুল পাশ বাবাই অবতীর্ণ হলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীর ভূমিকায়। 

মেনকেসের জন্য সহায়ক ওষুধটি চীনে দুষ্প্রাপ্য। তাছাড়া কোভিড-১৯ সময়ে আন্তর্জাতিক সীমানা বন্ধ থাকায় ছেলের জন্য এই ‘অমৃত’ সংগ্রহে অক্ষম ছিলেন জু। এ কারণে নিজেকে বেশ অসহায় মনে হলো তার। অনলাইন ব্যবসায়ী জু স্থানীয় একটি ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চেষ্টা করলেন। কিন্তু তারা যে বিপুল অর্থ দাবি করলেন-সেটা দিতে সক্ষম নন তিনি। এ অবস্থায়ও হাল ছেড়ে দিতে নারাজ বাবা। সিদ্ধান্ত নিলেন নিজেই এ ওষুধ তৈরি করবেন। নেমে পড়লেন মাত্র ২০ হাজার ইউয়ান পুঁজি নিয়ে।

অনলাইনে মেনকেস সিনড্রোম সম্পর্কে পড়াশোনা করলেন। জানতে পারলেন, ছেলের রোগটি কিছুটা হলেও উপশম হবে হিস্টিডিন নামের একটি যৌগের সাহায্যে। তাই ঘরেই রাসায়নিক পরীক্ষাগার স্থাপন করেন। জু বলেন, ‘এটা করব কী করব না, তা ভাবার সময় আমার হাতে ছিল না। আমি জানি, এটা আমাকে করতেই হবে।’ 

চীনের দক্ষিণ-পশ্চিম কুনমিং-এর একটি সুউচ্চ ভবনে ল্যাব তৈরি করলেন জু। একমাত্র ওষুধ, যা তার ছেলের দুরারোগ্য রোগের লক্ষণগুলো থেকে মুক্তি দেবে-তা ছিল একটি জটিল ফার্মাসিউটিক্যাল পদ্ধতি। গবেষণাগারের মাধ্যমে কীভাবে ওষুধ তৈরি করতে হয় তা শিখেছিলেন জু । তার পরিবার এবং বন্ধুরা তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছিল। তা সত্ত্বেও তিনি কপার ক্লোরাইড ডাইহাইড্রেট, হিস্টিডিন, সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড এবং পানি সংগ্রহ করে হিস্টিডিন তৈরি শুরু করেন। স্বশিক্ষিত এ রসায়নবিদ অবশেষে সফল হলেন।

এতে তার মোট খরচ হয়েছিল ৪০ হাজার ইউয়ান। এবার ছেলের জন্য এটি কতটা নিরাপদ তা পরীক্ষার পালা। প্রথমে একটি খরগোশের ওপর, এরপর নিজের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখলেন সমস্যা নেই-ছেলেকে দেওয়া যেতে পারে।

নিজের তৈরি ওষুধ দিয়ে ছেলের চিকিৎসা শুরু হলো। কয়েক সপ্তাহ পর ছেলের শরীরে উন্নতির ছাপ দেখলেন জু। রক্তের রিপোর্ট দেখে চোখের কোনায় মুক্তো জমাট বাঁধতে শুরু করল। 

জু বলেন, আমি চাই না আমার ছেলে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করুর। আমি ব্যর্থ হলেও না। কিন্তু আমি তাকে আশা দিতে চাই। 

চীনের বিস্ময়কর এই বাবাকে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে ‘ফাদার অব দ্য ইয়ার’ বলে সম্মান জানিয়েছে এএফপি।


 

রেডিওটুডে নিউজ/এসজেএন

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের