২০০১ সালের সেপ্টেম্বর। কর্ণাটকের কোনানাকাল্লু রিজার্ভ ফরেস্টে নিয়মিত টহলের সময় এক বনরক্ষী একটি পুরুষের লাশ দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানান। প্রাথমিক সূত্র হিসেবে লাশের পকেটে পাওয়া যায় একটি পাসবুক ও একটি ফোন নম্বর।
এগুলো থেকে প্রথমে ধারণা করা হয়, মৃত ব্যক্তি শিবামোগ্গার কোনো ব্যবসায়ী হতে পারেন। তবে খুব দ্রুতই সেই সূত্র অকার্যকর হয়ে যায়। ডিজিটাল প্রমাণ না থাকায় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এসটিডি বুথ ও ল্যান্ডলাইন ব্যবহার করায় মামলাটি বছরের পর বছর ধরেই অমীমাংসিত থেকে যায়।
দ্রুত সময় পেরিয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর। পুরোনো নথি আবার খতিয়ে দেখা, অন্তত ছয়টি জেলায় ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য ফোনবুথের কল রেকর্ড পুনরায় অনুসন্ধান—এই ধীর ও কঠোর তদন্তপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অবশেষে কর্ণাটক পুলিশ রহস্যটির জট খুলতে সক্ষম হয়।
তদন্তে জানা যায়, নিহত ব্যক্তি একজন লেখক। তিনি ও তার গাড়িচালক দশ লাখ রুপি সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন; তবে ঘটনাস্থল থেকে জীবিত ফিরেছিলেন শুধু চালক। লেখককে হত্যা করে টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয় এবং তার লাশ জঙ্গলে ফেলে রাখা হয়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে জানা যায়, মামলার অগ্রগতি আসে সম্পূর্ণ পুরোনো ধাঁচের গোয়েন্দা তৎপরতা থেকে। কল ডিটেইল রেকর্ডে থাকা প্রতিটি নম্বরে পুলিশ গিয়ে যোগাযোগ করে। পরে বেঙ্গালুরুর একটি জায়গায় সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড নজরে আসে। সেখানে একটি দোকান থেকে কেনা দুটি ডিমের খাঁচা খুঁজে পায় পুলিশ। খুব সাধারণ এই দুই খাঁচাই পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হয়ে ওঠে। এর মাধ্যমে এক সন্দেহভাজনের নতুন বাড়ি খুঁজে বের করে তারা।
শেষপর্যন্ত ওই ব্যক্তি ও তার দুই সহযোগী স্বীকার করেন যে হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত ছিল।
আদালতের নথি বলছে, ২০০৫ সালে তাদের সবাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এর মধ্যে একজন ২০১৪ সালে আবার আটক হওয়ার আগে কিছু সময়ের জন্য পলাতক ছিলেন।
তদন্তকারীরা এখন এই মামলাটিকে দেখছেন পুরোনো পদ্ধতির গোয়েন্দাগিরির এক শক্তিশালী উদাহরণ হিসেবে—যে সময়টিতে অপরাধ অনুসন্ধানে ডিজিটাল প্রমাণ ছিল না, ছিল নিখুঁত অনুসন্ধান, ধৈর্য এবং মাঠপর্যায়ের প্রচেষ্টা।
মামলার সঙ্গে যুক্ত অবসরপ্রাপ্ত এক এসপি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘এটি ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং একটি মামলা।’
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

