গত ফেব্রুয়ারিতে ড্রোনের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর ইউক্রেনের চেরনোবিল বিপর্যয়ের তেজস্ক্রিয় বিকিরণ প্রতিরোধী সুরক্ষা আবরণ ঠিকমতো কাজ করছে না বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। যার ফলে ১৯৮৬ সালের বিস্ফোরণ থেকে থাকা তেজস্ক্রিয় পদার্থ ধরে রাখার ক্ষমতা হারিয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
১৯৮৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ থাকার সময় চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্রে ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এর ফলে ইউরোপজুড়ে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ছড়িয়ে পড়ে।
পারমাণবিক কেন্দ্রটির শেষ কার্যরত রিঅ্যাক্টর ২০০০ সালে বন্ধ করা হয়। বিপর্যয় সামাল দিতে সোভিয়েতরা রিঅ্যাক্টরের ওপর কংক্রিটের সারকোফ্যাগাস তৈরি করে, যার মেয়াদ ছিল মাত্র ৩০ বছর।
এক দশক ধরে সারকোফ্যাগাস, এর নিচের ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবন ও পারমাণবিক জ্বালানি অপসারণের সময় তেজস্ক্রিয় বিকিরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন এই সুরক্ষা কাঠামোটি তৈরি করা হয়। ২০১৯ সালে ১১০ মিটার উচ্চতা ও ২৬০ মিটার প্রস্থের এই ‘নিউ সেফ কনফাইনমেন্ট’ তৈরিতে খরচ হয় দেড় বিলিয়ন ইউরো (১ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার)।
শুক্রবার দেওয়া এক বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা আইএইএ জানায়, গত সপ্তাহে স্টিলের এই সুরক্ষা কাঠামো পরিদর্শনের পর বোঝা যায় যে, এটি আর মূল নিরাপত্তা কাজগুলো সম্পূর্ণভাবে করতে পারছে না। আইএইএ আরো জানায়, ফেব্রুয়ারিতে ড্রোন আঘাতে এই ক্ষতি হয়েছিল। ইউক্রেন দাবি করেছে, রাশিয়াই ওই ড্রোন হামলা চালিয়েছে। দুই দেশের যুদ্ধ এখন চতুর্থ বছরে গড়িয়েছে।
আইএইএ মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি বলেন, ‘সুরক্ষা কাঠামোটি তেজস্ক্রিয় বিকিরণ রোধের সক্ষমতা হারিয়েছে। তবে এটির ভারবাহী কাঠামো (লোড বেয়ারিং) বা পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থায় স্থায়ী কোনো ক্ষতি হয়নি।’ গ্রোসি আরো জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত অংশে কিছু মেরামত করা হয়েছে, তবে দীর্ঘমেয়াদি পারমাণবিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুরোপুরি সংস্কার করা প্রয়োজন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয় দেশ একে অপরকে কেন্দ্রটিতে হামলা চালিয়ে ভয়ঙ্কর পারমাণবিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি করার অভিযোগ করছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি ১৪ তারিখে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, একটি উচ্চ বিস্ফোরক ড্রোন চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্রের চার নম্বর রিয়্যাক্টরে আঘাত হেনেছে।
এতে আগুন ধরে যায় এবং ১৯৮৬ সালের বিস্ফোরণে ধ্বংস হওয়া ওই রিয়্যাক্টরের চারপাশের সুরক্ষামূলক আবরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ইউক্রেন বলেছে, এই ড্রোনটি রাশিয়ার। তবে মস্কো অস্বীকার করেছে এবং বলেছে, তারা কেন্দ্রটিতে হামলা করেনি। জাতিসংঘ জানায়, ফেব্রুয়ারিতে পরমাণু বিকিরণের মাত্রা স্বাভাবিক এবং স্থিতিশীল ছিল এবং বিকিরণ লিক হওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর প্রথম সপ্তাহে এই কেন্দ্র ও আশেপাশের এলাকা এক মাসের বেশি দখল করেছিল। তখন তাদের সেনারা প্রথমে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে এগোয়ার চেষ্টা করেছিল। আইএইএ ইউক্রেনের বিভিন্ন অংশে যুদ্ধের কারণে বিদ্যুৎ সাবস্টেশনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের পাশাপাশি একই সময়ে এই চেরনোবিলের ক্ষতিগ্রস্ত কাঠামোটি পরিদর্শন করে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

