চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত ৯ মাসে সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ১৫ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে পুলিশের সঙ্গে ৯, র্যাবের সঙ্গে ৫ ও ডিবির সঙ্গে ১ জন নিহত হন।
শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রকাশিত গত ৯ মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতির পরিসংখ্যানগত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এ সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতা, অপহরণ ও রহস্যজনক নিখোঁজ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে হয়রানি, সীমান্তে নির্যাতন ও হত্যাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি। ১০টি জাতীয় দৈনিক ও বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদ ও আসকের নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মো. নূর খান লিটন স্বাক্ষরিত প্রতিবেদন বলা হয়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহতদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে ৩ জন, শারীরিক নির্যাতনে ৭ জন, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ১ জন ও অসুস্থ হয়ে ৩ জন মারা যান। এছাড়া হেফাজতে ১টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এই সময়ে রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতার ৩৮৭টি ঘটনায় ৫৮ জন নিহত ও প্রায় ৫ হাজার ৪০০ জন আহত হয়েছেন। স্থানীয় নির্বাচনসহ রাজনৈতিক কারণে দেশের ৬৪টি জেলার প্রায় সবকটিতেই সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লায়।
গত ৯ মাসে ২৫টি সহিংসতার ঘটনায় ২ জনের মৃত্যুসহ ২৫৬ জন আহত হয়েছেন। চট্টগ্রামে ২৩টি ঘটনায় ৬ জন নিহত এবং ৩০২ জন আহত হয়েছেন।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে অপহরণ: সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ৪ জনকে অপহরণের খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ১ জন ফেরত এসেছেন এবং ১ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। ২ জন এখনো নিখোঁজ আছেন। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন: এ সময়ে ২টি ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ৪টি বাড়ি-ঘরসহ ৮টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে নড়াইল জেলায় হামলা হয়।
সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানি: গত ৯ মাসে ১৭৯ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি, মামলা ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে হামলার শিকার হয়েছেন অন্তত ৬৬ জন সংবাদকর্মী। দুর্বৃত্তদের গুলিতে কুমিল্লায় নিহত হয়েছেন ১ জন সাংবাদিক।
নারীর প্রতি সহিংসতা: গত ৯ মাসে যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন ২০৯ জন নারী-পুরুষ। হামলার শিকার হয়েছেন ১৩৬ জন নারী ও ৭৩ জন পুরুষ। বখাটেদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন ১২০ জন, বখাটেদের সঙ্গে সংঘাতে আহত ৭৪ জন। যৌন হয়রানির কারণে ৭ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৩৪ নারী। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩৪ জনকে। ১২৮ জন নারী ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছেন। পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩৬৭ জন। তাদের মধ্যে ২২৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে। পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৬৭ জন। এছাড়া শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৭২ জন নারী।
যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ১৪৮ জন নারী। যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৬৯ জনকে এবং যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ৬ জন নারী। তাদের মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৬২ জন। এ সময়কালে মোট ১৯ জন গৃহকর্মী বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এসিড হামলার শিকার হয়েছেন মোট ১১ জন নারী। তাদের মধ্যে ৩ জন মারা গেছেন। সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঢাকায় ৬৪টি ও নারায়ণগঞ্জে ৫৯টি।
শিশু নির্যাতন ও হত্যা : দেশের বিভিন্ন স্থানে গত ৯ মাসে মোট ১ হাজার ২৭৮ শিশু বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে। হত্যার শিকার হয়েছে ২৪০ জন শিশু, আত্মহত্যা করেছে ৪৪ শিশু, বিভিন্ন সময়ে মোট ৯১ শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ঢাকায় ৫৪, নারায়ণগঞ্জে ২৪, গাজীপুরে ২১, কুমিল্লায় ১৬ এবং চট্টগ্রামে ১৫ শিশু নিহত হয়েছে।
সীমান্ত সংঘাত: সীমান্তে বিএসএফের গুলি, নির্যাতন ও ধাওয়ায় নিহত হয়েছেন ১২ বাংলাদেশি নাগরিক। আহত হয়েছেন ৭ জন ও অপহরণের শিকার হয়েছেন ৮ জন।
কারা হেফাজতে মৃত্যু: ৯ মাসে কারা হেফাজতে মারা গেছেন ৫৪ জন। এর মধ্যে কয়েদি ২০ জন এবং হাজতি ৩৪ জন।
গণপিটুনিতে নিহত: গত ৯ মাসে গণপিটুনির ঘটনায় নিহত হন মোট ২৮ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৫ জন নিহত হন।
রেডিওটুডে নিউজ/মুনিয়া
