রাষ্ট্রীয় সম্মান আর সর্বস্তরের শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে অন্তিম শয়নে একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক তোয়াব খান। সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ও জাতীয় প্রেসক্লাবে তাকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান বন্ধু, সহকর্মী ও অনুজরা। তোয়াব খানের শেষ জানাজা হয় গুলশানের আজাদ মসজিদে। এরপর বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয় তাকে।
স্বজনরা জানান, স্বাধীনতা উত্তর সংবাদিকতায় আধুনিকতার ছোঁয়া এসেছে তোয়াব খানের হাত ধরেই।
কাকডাকা ভোর থেকেই গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি। এক আকাশ মন খারাপের জমাট মেঘ মাথায় করে কফিনবন্দি নিথর দেহে শেষবারের মতো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তোয়াব খান। সেখানে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের এই শব্দসৈনিককে দেওয়া হয় গার্ড অব অনার। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর।
এরপর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সামরিক সচিবদ্বয় শ্রদ্ধা জানান এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় এই আয়োজনে আওয়মী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সাংবাদিক তোয়াব খানের জন্ম ১৯৩৪ সালের ২৪ এপ্রিল সাতক্ষীরা জেলার রসুলপুর গ্রামে। গত শনিবার (১ অক্টোবর) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮৮ বছর বয়সে মারা যান তিনি।
২০১৬ সালে একুশে পদক পাওয়া তোয়াব খানের সাংবাদিকতা জীবনের শুরু ১৯৫৩ সালে সাপ্তাহিক জনতার মাধ্যমে। ১৯৫৫ সালে সহ-সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন দৈনিক সংবাদে। ১৯৬১ সালে তিনি দৈনিক সংবাদের বার্তা সম্পাদক হন। ১৯৬৪ সালে যোগ দেন দৈনিক পাকিস্তানে। দেশ স্বাধীনের পর দৈনিক পাকিস্তান থেকে বদলে যাওয়া দৈনিক বাংলার প্রথম সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১৯৭২ সালের ১৪ জানুয়ারি তিনি দৈনিক বাংলার সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেস সচিব ছিলেন। প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ও প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে শব্দসৈনিকের ভূমিকা পালন করেন তোয়াব খান। সে সময় তার আকর্ষণীয় উপস্থাপনায় নিয়মিত প্রচারিত হয় ‘পিণ্ডির প্রলাপ’ নামের অনুষ্ঠান। দৈনিক জনকণ্ঠের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পত্রিকাটির উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন তিনি। এরপর নতুন আঙ্গিক ও ব্যবস্থাপনায় প্রকাশিত দৈনিক বাংলার সম্পাদকের দায়িত্ব নেন দেশবরেণ্যে এ সাংবাদিক।
রেডিওটুডে নিউজ/মুনিয়া