বৃহস্পতিবার,

২৫ এপ্রিল ২০২৪,

১২ বৈশাখ ১৪৩১

বৃহস্পতিবার,

২৫ এপ্রিল ২০২৪,

১২ বৈশাখ ১৪৩১

Radio Today News

অগ্রগতি নেই প্রত্যাবাসন আলোচনার

চার বছরে জন্ম নিয়েছে এক লাখ রোহিঙ্গা শিশু

সারওয়ার আজম মানিক

প্রকাশিত: ১৮:৩২, ২৫ আগস্ট ২০২১

আপডেট: ২০:২৭, ২৫ আগস্ট ২০২১

Google News
চার বছরে জন্ম নিয়েছে এক লাখ রোহিঙ্গা শিশু

মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা আগমনের চার বছর আজ। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা নির্যাতনের মুখে পড়ে সাত লাখের অধিক রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় আশ্রয় নেয়। এই চার বছরে বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলোতে বসবাস করা রোহিঙ্গারা কমপক্ষে এক লাখ শিশুর জম্ম দিয়েছে।  

কক্সবাজারে আগে থেকে আশ্রয় নেয়া সাড়ে তিন লাখ রোহিঙ্গা সহ ১১ লাখেরও অধিক রোহিঙ্গা বর্তমানে কক্সবাজারের ৩৪ টি ক্যাম্পে বসবাস করছে। কখন তারা স্বদেশে ফিরে যাবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। 

মিয়ানমারের সাথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা নানা কারণে থমকে আছে। এর মাঝে এসব রোহিঙ্গারা জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধের সাথে। ভাসানচরে আশ্রয়ন প্রকল্পে ঠায় হয়েছে ১৯ হাজার রোহিঙ্গার। 

নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার নিশ্চয়তা নিয়ে আদৌ নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারবে কিনা তা নিয়েও উদ্বেগ উৎকন্ঠায় আছে রোহিঙ্গারা। 

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, “যারা এখানে আশ্রয় নিয়েছে তারা যেন সব সময় ভালো থাকেন সে দিকে আমাদের দৃষ্টি থাকে সব সময়। আমরা তাদের কে বলছি নিজ দেশে ফেরার জন্য তারা যেন প্রস্তুত থাকে। ভাসানচরে যারা যেতে আগ্রহ প্রকাশ করছে আমরা তাদের কে সেখানে পাঠাচ্ছি। সেখানকার আশ্রয় কেন্দ্রে বর্তমানে ৪ হাজার ৭ শ পরিবারের ১৯ হাজার রোহিঙ্গা বসবাস করছে।”

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার জানান, গত চার বছরে জম্ম নিয়েছে প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গা শিশু। এখন ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহনে  আগ্রহী হয়ে উঠেছে।  ক্যাম্পের বয়স্কদের করোনা টিকা দেয়ার কাজও চলছে।

অধিকার নিশ্চিত হলেই ফেরত যাবে রোহিঙ্গারা

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সন্ত্রাস দমনের নামে সেদেশের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর জাতিগত নিধন শুরু ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রাণ বাচাঁতে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আসতে থাকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ঢল।

২৫ আগস্টের পর দুই তিন মাসের মধ্যেই এখানে আশ্রয় নেয় সাড়ে সাত লাখের মতো রোহিঙ্গা। এ ছাড়া কক্সবাজারে আগে থেকে আশ্রয় নেয়া সাড়ে তিন লাখ রোহিঙ্গা সহ ১১ লাখের অধিক রোহিঙ্গাকে ৩৪ ক্যাম্পে আশ্রয় দেয়া হয়।

পরবর্তীতে জাতিসংঘের তত্বাবধানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর খাদ্য সহায়তা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধাগুলো নিশ্চিত করা হয়। 

২০১৭ সালেই বাংলাদেশ মিয়ানমারের সাথে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু করে এবং দুই দফা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিলেও একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফেরত যায়নি। 

এ নিয়ে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং মেগা ক্যাম্পের বাসিন্দা আবুল কাশেম  জানান, তাদের প্রধান দাবী রোহিঙ্গা হিসেবে জাতিগত স্বীকৃতি, নাগরিকত্ব প্রদান, নিজ ভিটে মাঠিতে বসবাসের সুযোগ  দেয়ার পাশাপাশি স্বাধীনভাবে চলাচলের সুযোগ দিলে তারা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাবে। 

রহিমা খাতুন বলেন, মিয়ানমারে এখনো নির্যাতন চলছে। আমি আমাদের সব অধিকার ,নিরাপত্তা পেলে ফিরে যাবো। 

রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘ সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সরব রয়েছে। আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতেও চলছে রোহিঙ্গা গনহত্যার বিচার। তার উপর মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের কারণে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। 

এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা পরিস্থিতি, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে বিভিন্ন বিদ্রোহী গ্রুপের সাথে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কখন শুরু হবে তার নিশ্চয়তা দেখছেনা রোহিঙ্গারা। 

তবে রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতারা জানান তাদের জতিগত পরিচয় ও অধিকার ফিরিয়ে দিলে তারা স্বদেশে ফিরে যাবেন। 

এ নিয়ে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস হিউম্যান রাইটস এর সেক্রেটারি মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, মিয়ানমারে এখন কোন সরকার আছে সেটা আমাদের দেখার বিষয় না। আমরা আমাদের বসত ভিটা,জমি,অধিকারসহ সব কিছু ফিরে পেলে অবশ্যায় চলে যাবো।

কুতুপালং ৫ নং ক্যাম্পর জি ব্লকের মাঝি মোহাম্মদ সেলিম আমরা নিজ দেশে ফেরার জন্য সবসময় প্রস্তুত রয়েছি। আমরা এ দেশে থাকার জন্য আসিনি, প্রাণ বাচাঁতে এসেছিলাম।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন,রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করছে। আমাদের দেশে আশ্রয় নেয়া এসব মানুষগুলোকে তাদের নিজ দেশে নিরাপদে ফেরত পাঠাতে কাজ করছে সরকার।  

রোহিঙ্গাদের অপরাধ প্রবনতা বেড়েই চলেছে
উখিয়া ও টেকনাফে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বসবাসের কারণে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতিসহ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়ে উখিয়ার কুতুপালং এলাকার জনপ্রতিনিধি হেলাল উদ্দিন বলেন,রোহিঙ্গারা হত্যা,অপহরন সহ বড় বড় অপরাধের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে। 

কক্সবাজারর রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির উপদেষ্টা এডভোকেট তারেক বলেন,সঠিক উদ্যোগ না নেয়ায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন যেমনি ব্যর্থ্য হয়েছে তেমনি তারা দীর্ঘমেয়াদে অবস্থান করায় রোহিঙ্গাদের কারনে শান্তি-শৃংখলা বিঘ্নিত হচ্ছে। 

“রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনই আমাদের একমাত্র কাম্য। রোহিঙ্গারা হত্যা, অপহরন, মাদক পাচারসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের কে নিজ দেশে পাঠিয়ে আমাদের ভুমিকে মুক্ত করা হউক, বলেন অ্যাডভোকেট তারেক।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান পিপিএম বলেন, রোহিঙ্গাদের অপরাধ দমনে কাজ করছে পুলিশ। বর্তমানে ক্যাম্পের ভেতর আর্মড পুলিশ এর ৩টি ব্যাটালিয়ান ও জেলা পুলিশের কড়াকড়িতে দিন দিন অপরাধ কমে আসছে। 

এ পর্যন্ত ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ১ হাজার ১৪ টি মামলা হয়েছে। তাতে ২৬৮৭ জন আসামীর মধ্যে ১৬২২ জন গ্রেফতার রয়েছে। এ ছাড়া এসব মামলার মধ্যে ৮৯৪ টি মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ রির্পোট দাখিল করা হয়েছে। এসব মামলার ৪৬% ভাগই মাদকের মামলা বলে জানায় পুলিশ।

মানবিক কারনে আশ্রয় দেয়া রোহিঙ্গারা দ্বীর্ঘদিন অবস্থান করায় কক্সবাজারের আত্মসামাজিক সহ শান্তিশৃঙ্খ্যলা বিঘ্নিত হচ্ছে। কক্সবাজারবাসীর মানবিকতা প্রশ্নবোধক হয়ে উঠেছে। রোহিঙ্গারা নানাভাবে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে এবং সহিংস হয়ে উঠেছে। তাই দ্রুত তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরৎ পাঠাতে আর্ন্তজাতিক মহলের দৃষ্টি আর্কষনের প্রতি জোর দেয়ার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

রেডিওটুডে নিউজ/এসএন/ইকে/এইচবি

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের