আজ ২৬ আগস্ট, ফুলবাড়ী ট্রাজেডি দিবস। আজকের এই দিনে ০০৬ সালের এই দিনে দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ীতে কয়লা খনি প্রকল্প বাতিল এবং বিদেশী কোম্পানি এশিয়া এনার্জি দেশ ত্যাগের দাবিতে আন্দোলনকারী জনতার উপর পুলিশ ও বিডিআর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে। এ ঘটনায় সরকারী হিসাবে ৩ জন এবং বেসরকারী হিসাবে ৬ জন নিহত হন। এসময় সংঘর্ষে আহত হন ৩ শতাধিক মানুষ। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হন ৫০ জন। এরপর থেকে প্রতিবছর এই দিনটিকে 'ফুলবাড়ী ট্রাজেডি দিবস' হিসেবে পালন করা হয়।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৫টি কয়লা খনির সন্ধান পাওয়া গেছে। এগুলো হলো—দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বড়পুকুরিয়া ও ফুলবাড়ী কয়লাখনি, বিরামপুরের দিঘিপাড়া, জয়পুরহাটের জামালগঞ্জ ও রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার খালাশপীর কয়লা খনি। ১৯৯৪ সালে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার সংস্থা বিএইচপি'র সঙ্গে চুক্তি হয় সরকারের। পরে এশিয়া এনার্জির সঙ্গে সরকার ৩০ বছর মেয়াদী একটি অসম চুক্তি করে।
ওই চুক্তি অনুযায়ী, উত্তোলিত কয়লার মাত্র ৬ শতাংশ পাবে বাংলাদেশ, ৯৪ শতাংশ পাবে এশিয়া এনার্জি, যার ৮০ শতাংশ এশিয়া এনার্জি রপ্তানি করবে।
পরিবেশবাদীরা হুঁশিয়ারি দেন, প্রস্তাবিত কয়লাখনি হলে পুরো ফুলবাড়ী শহরসহ আশপাশের কয়েকটি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পানির স্তর নিচে নেমে গেলে কৃষিতে এর প্রভাব পড়বে, হুমকির মুখে পড়বে গোটা পরিবেশ। ফলে বিশাল একটি জনবসতি স্থানান্তরিত হবে। উত্তরাঞ্চল মরুভূমিতে রূপ নেবে।
পরে 'ফুলবাড়ী রক্ষা কমিটি' গঠিত হয়। যার মাধ্যমে 'ফুলবাড়ীতে এশিয়া এনার্জির সব কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে এবং সরকারকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে ফুলবাড়ীতে কোনো উন্মুক্ত পদ্ধতির কয়লাখনি হবে না' এই দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। পরবর্তীতে আন্দোলনে যোগ দেন জাতীয় তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির নেতারা।
২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট ঢাকা থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদসহ জাতীয় তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির নেতারা বিকেলের দিকে ফুলবাড়ী শহরের নিমতলা এলাকায় সভায় যোগ দেন। সেদিন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ লাঠি নিয়ে সেখানে সমবেত হন।
সভাস্থলে জনগণের আগমন ঠেকাতে পুলিশ দিনাজপুরের মোহনপুর, বিরামপুর, পার্বতীপুর, বড়পুকুরিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিলে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে প্রতিবাদী জনতা। ঢাকা মোড়ের সমাবেশ শেষে শ্লোগান মুখর এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এশিয়া এনার্জি কোম্পানির অফিসের দিকে এগুতে থাকলে তাদের রুখতে প্রথমে টিয়ারশেল ও পরে নির্বিচারে গুলি চালায় তৎকালীন বিডিআর। এতে ৩ জন নিহত ও ২০০'র বেশি আন্দোলনকারী আহত হন।
এ ঘটনায় ২৬ আগস্ট থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত জনতার আন্দোলন সংগ্রামে উত্তাল ছিল ফুলবাড়ী খনি এলাকা। ২৮ আগস্ট এশিয়া এনার্জির সুবিধাভোগী কয়েকজনের বাড়িঘর ভাঙচুর চালিয়ে পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। ৩০ আগস্ট তৎকালীন সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসেন আন্দোলনের নেতারা।
আলোচনায় আন্দোলনকারীদের ৬ দফা প্রস্তাব মেনে নেওয়া হয়। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে ছিল— এশিয়া এনার্জিকে দেশ থেকে বহিষ্কার করতে হবে এবং দেশের কোথাও উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা যাবে না।
উল্লেখ্য, ফুলবাড়ী গণআন্দোলনের ১৬বছর হলেও পূর্নবাস্তবায়ন হয়নি ফুলবাড়ীবাসীর সাথে সম্পাদিত ছয় দফা চুক্তি। উল্টো আন্দোলনকারী নেতাদের উপর রয়েছে এশিয়া এনার্জির দায়ের করা একাধিক মামলা।
দিবসটি পালনে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে সকালে কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারন, শোক র্যালী, স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পন, আলোচনা সভা রয়েছে বলে জানিয়েছেন, তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার নেতৃবৃন্দ
রেডিওটুডে নিউজ/ইআ
ইমদাদুল আজাদ