শনিবার,

২০ এপ্রিল ২০২৪,

৭ বৈশাখ ১৪৩১

শনিবার,

২০ এপ্রিল ২০২৪,

৭ বৈশাখ ১৪৩১

Radio Today News

মরা নদীর বুকে এখন জেলের নৌকা ভাসে 

রংপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪:৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২১

আপডেট: ১৯:৫৯, ১৩ অক্টোবর ২০২১

Google News
মরা নদীর বুকে এখন জেলের নৌকা ভাসে 

ছবিসূত্র: ইন্টারনেট

বাংলাদেশের নদীগুলো দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে মানচিত্র থেকে। এর মধ্যে ছিলো উত্তরাঞ্চলের ‘মরা তিস্তা’ আর ‘ঘিরনই’। প্রায় ১৮ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে থাকা নদী দুটি পরিণত হয়েছিলো নিচুভূমিতে। স্থানীয়রা দখল করে নদীর বুকে গড়ে তোলেন ঘর-বসতি আর ফসলের মাঠ। অবশেষে কর্তৃপক্ষের কঠোর পদক্ষেপে দখলমুক্ত নদীদুটি। নদীতে এসেছে পানি। দুইশ’ বছর আগের মরা তিস্তা এখন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। 

এ নদীর গল্প এ প্রজন্মের বাপ-দাদারা শুনেছিল তাদেরই পূর্বপুরুষদের কাছে। আগে ছিল দুটো নদী। ‍দুটোই হারিয়ে গিয়েছিল। বরেন্দ্র বহুমুখী কতৃপক্ষের (বিএমডিএ) দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর মরা তিস্তা ও ঘিরনই আবার জেগে উঠেছে। দুইশ’ বছর পর আবার সেই নদীতে চলছে নৌকা। জেলেরা মাছ ধরছে। জলচর পাখি আর হাঁস দাপিয়ে বেড়াচ্ছে স্ফটিক জলের বুকে।

বরেন্দ্র বহুমুখী কর্তৃপক্ষ বলছে এবার শুধু খনন নয়, দুই পাড় সংরক্ষণ ও পরিবেশ উন্নয়নে তীরের পাশে ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছ রোপণ করা হয়েছে। এবারের বর্ষায় পানিতে থই থই করছে নদীগুলোতে। বেড়েছে বক, পাতি সরালি, মাছরাঙাসহ নানান প্রজাতির পাখির আনাগোনা।

বরেন্দ্র বহুমুখী কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৭৭৬ সালের রেনেল মানচিত্রে প্রদর্শিত তিস্তা নদীর একটি শাখা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ির দক্ষিণ থেকে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলা দিয়ে প্রবেশ করে। নদীটি নীলফামারী জেলা পেরিয়ে রংপুরের তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ দিয়ে মিঠাপুকুর উপজেলার শেষভাগে করতোয়ার সঙ্গে এসে মিশে।

ইতিহাসবিদ আবু জাহেদ জানান, কাগজপত্র এবং নদ-নদীর ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১৭৮৭ সালে রংপুরসহ আশপাশের এলাকাসহ ভারতের একাংশজুড়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প ও বন্যা হয়েছিল। যার কারণে গতিপথ বদলে যায় তিস্তার। এতে উত্তরাঞ্চলের নদীগুলো স্বাভাবিক গতিপথ হারায়। মূল তিস্তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তৈরি হয় মরা তিস্তা। সেটও খুব দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে যায়। পানি শুকিয়ে যেতেই মরা তিস্তা বেদখল হতে থাকে। গড়ে ওঠে বসতি ও স্থাপনা। শুরু হয় চাষাবাদও।

আগে বন্যার সময় চিকলী ও যমুনেশ্বরীর (মরা তিস্তার শাখা) প্রবাহ থাকতো। পরে সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। এতে বছরে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমি জলাবদ্ধতার শিকার হয়। নদী না থাকায় অনেক মৎস্যজীবী বদলে ফেলেন পেশা।

এমন পরিস্থিতিতে নদী উদ্ধার ও দখলমুক্তকরণে পরিকল্পনা শুরু করে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। তাদের উদ্যোগে পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের (ইআইআরপি) মাধ্যমে খাল, ছোট নদী খনন কার্যক্রম শুরু হয়। এরই অংশ হিসেবে বদরগঞ্জের হারিয়ে যাওয়া মরা তিস্তা নদীর প্রবাহ এলাকা শনাক্ত করে চলতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার খনন করা হয়। আর এতেই ফিরে আসে পানি।

এ ব্যাপারে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প রংপুরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান খান বলেন, ‘দীর্ঘ দিন সংস্কারের অভাবে অনেক নদী ভরাট হয়ে গেছে। গোচারণভূমি হয়েছে। এখানে পানি বাড়লে বন্যা হতো, ফসলের ক্ষতি হতো। জলাবদ্ধ থাকা জমিগুলো এখন চাষের উপযোগী। মরা তিস্তাও হারানো যৌবন ফিরে পেয়েছে। এর মাধ্যমে ২০টি গ্রামের ৫ হাজার হেক্টর জমি চাষ উপযোগী আছে।’
 
বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ আরো জানায়, হারিয়ে যাওয়া ঘিরনই নদীটি করতোয়া নামে রংপুর-দিনাজপুর সীমানা বরাবর ৩৬ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে বদরগঞ্জের বকসীগঞ্জ ব্রিজের উজানে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলা থেকে প্রবাহিত হয়ে সোনারবান (সোনারবন্ধ) নামে অপর একটি নদীর সঙ্গে মিলেছে। এই মিলিত প্রবাহ ঘিরনই নামে বদরগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণপুর ও লোহানীপাড়া ইউনিয়নের সীমানা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলার বিনোদনগর ইউনিয়নে করতোয়ার সঙ্গে মিলিত হয়। এর দৈর্ঘ্য ৪৮ কিলোমিটার। চলতি বছর (২০২০-২০২১) এই নদীর ৩ দশমিক ২৬৫ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হয়েছে। খনন করা অংশের দুপাড়ে চারটি গ্রামের দৈনন্দিন গৃহস্থালীর কাজে নদীর পানি ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নদী গবেষক ও রিভারাইন পিপল বাংলাদেশের পরিচালক অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ জানান, ‘এই অঞ্চলের কৃষি, জীব বৈচিত্র্য এবং পরিবেশের অভাবনীয় ফল বয়ে আনবে মরা তিস্তার এই পুনরুদ্ধার প্রকল্প। দেশের প্রত্যেকটি নদীকে বাঁচাতে সরকারের পক্ষ থেকে আরও জোরালো উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন’। 

রেডিওটুডে নিউজ/এমএস

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের