শুক্রবার,

২৯ মার্চ ২০২৪,

১৫ চৈত্র ১৪৩০

শুক্রবার,

২৯ মার্চ ২০২৪,

১৫ চৈত্র ১৪৩০

Radio Today News

মুসলিমদের জন্য সালাম কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

সুলতানা জাহান

প্রকাশিত: ০৯:১৬, ১৩ আগস্ট ২০২১

আপডেট: ১৮:১৩, ১৩ আগস্ট ২০২১

Google News
মুসলিমদের জন্য সালাম কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

'সালাম' আল্লাহ পাকের এক বিশেষ নেয়ামত, রহমত এবং বরকতময়পূর্ণ শব্দ। এটি একটি দোয়া, যার অর্থ হলো আপনার ওপর আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক। জবাবে সালামের উত্তরদাতা বলেন, ওয়া আলাইকুমুস সালাম, অর্থাৎ সালাম দাতার ওপরও আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক। ইসলামি সংস্কৃতিতে সালামের গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন মেরাজে নবী করিম (স.) কে সর্ব প্রথম সালাম দিয়ে কথোপকথন শুরু করেছিলেন। অর্থাৎ, স্রষ্টা তার সৃস্টিকে সাক্ষাতের শুরুতে সালাম দিয়েছেন, এ থেকে সালামের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়।

সামাজিক পরিমন্ডলে, কর্মক্ষেত্রে, রস্তাঘাটে কারো সঙ্গে দেখা হলে আমরা অনেকে হয়তো সালাম দেই। কুশল বিনিময় শুরু হয় সালামের মধ্য দিয়ে। 

সালামের কোনো শ্রেণি বিভাজন নেই। এটি সার্বজনীন বিষয়। ছোট-বড়, ধনী-গরিব, উঁচু,-নীচু, সাদা-কালো, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই পরস্পরকে সালাম বিনিময় করতে পারে। এক মুসলমান অপর মুসলমানের সঙ্গে দেখা হলে সালাম দিয়ে অলাপচারিতা শুরু করা ইসলামের রেওয়াজ। সালাম দেওয়া সম্পর্কে নবীজীর হাদীস থেকে জানা যায়, কোনো মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে একবার সালাম বিনিময়ের পর চোখের আড়াল হয়ে পুনরায় সাক্ষাতে সালাম বিনিময় করতে পারে। অর্থাৎ এক মুমিন ব্যক্তি অপর মুমিন ব্যক্তির সারাক্ষণই শান্তি ও কল্যাণ কমনা করবে।

সালাম দেওয়া সুন্নত এবং উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। সালামের উত্তর প্রসঙ্গে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে সূরা নিসা’র ৮৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “আর কেউ যখন তোমাদের সালাম দেয়, তখন তোমরা কমপক্ষে সেরকম অথবা তার চেয়েও বেশি সম্মান সহকারে সালামের জবাব দিবে”। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ছোট বড় সবাইকে আগে সালাম দিতেন।

হজরত আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহর সর্বাধিক কাছাকাছি মানুষ ওই ব্যক্তি; যে সর্বপ্রথম সালাম দেয়।” (আবু দাউদ, তিরমিজি, মুসনাদে আহামদ)

অন্য এক হাদিসে আছে, একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম’। তখন তিনি বললেন, লোকটির জন্য ১০টি নেকি লেখা হয়েছে। এরপর অন্য এক ব্যক্তি এসে (একটু বাড়িয়ে) বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লা'। তখন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, তার জন্য ২০টি নেকি লেখা হয়েছে। এরপর অন্য এক ব্যক্তি এসে (আরও একটি শব্দ বাড়িয়ে) বললেন- ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু’। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার (সালামের) উত্তর দিয়ে বললেন, লোকটির জন্য ৩০টি নেকি লেখা হয়েছে।’ 

পবিত্র কুরআনের সূরা ফুরকানের ৬৩ নং আয়াতে সালাম সর্ম্পকে বলা হয়েছে, “দয়াময়ের দাস তারাই, যারা জমিনের ওপর নানাভাবে চলাফেরা করে। মূর্খরা তাদেরকে কথা বলে উত্ত্যক্ত বা বিতর্ক সৃষ্টি করতে চাইলে তারা বলে, তোমাদের প্রতি ‘সালাম’।” এ আয়াতে সুস্পষ্ট বোঝা যায় কেউ রূঢ় আচরণ করলেও আল্লাহ সচেতনরা তাদের মঙ্গল কামনা করবে।

সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে হৃদ্যতা, সৌহার্দ্য, আন্তরিকতা, বন্ধুত্ব, ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হয়। আমাদের সমাজে প্রচলিত একটি ধারণা শুধু ছোটরাই বয়োজ্যেষ্ঠদের সালাম দিবে। ইসলাম তা বলে না। সালাম সার্বজনীন। মানুষের ধন সম্পদ, ধর্ম, কর্ম ইহকলীন সবকিছু অর্জিত হওয়ার মূলে একটাই চাওয়া কাজ করে, তা হলো প্রশান্তি। পরকালীন অনন্ত জীবনের উদ্দেশ্যও তাই। সালাম হলো সে শান্তির দোয়া। সালামকারী ব্যক্তি অপর ব্যক্তির সকাল-সন্ধ্যা, দিনে-রাতে, ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, আর্থিক, রাষ্ট্রীয় জীবনসহ দৈহিক, মানসিক, ইহকলীন ও পরকালীন জীবনে অর্থাৎ সর্বাবস্থায় শান্তি কামনা করে।

শান্তি সমৃদ্ধির জন্য সমাজের সর্বস্তরে সালামের ব্যাপক প্রচলন করা এখন সময়ের দাবি। বর্তমান প্রজন্মের বহুল চর্চিত হাই, হ্যালো, গুডমর্নিং, গুড ইভিনিং, গুড আফটারন্যূন, গুডনাইট, হ্যাভ এ নাইস ডে, এসব মুসলমান সংস্কৃতির অংশ নয়। তাছাড়া এ সব কল্যাণসূচক শব্দ বা বাক্য কখনো অনন্ত ও সার্বিক কল্যাণ ও শান্তিকে নির্দেশ করে না। এসব আংশিক ও খণ্ডিত। এ জন্য নিজ পরিবার থেকে সালামের চর্চা শুরু করতে হবে। পরিবারের বড়রা ছোটদের আগে সালাম দেওয়া শুরু করলে শিশুর এ অভ্যাস সহজে রপ্ত হবে এবং জড়তা দূর হবে। কারণ শিশুদের উপদেশ দিয়ে নয়, শিশুরা চায় দৃষ্টান্ত বা অনুকরণ করতে। প্রতিদিন হাসিমুখে এই শুভকামনা চলতে থাকলে আমাদের পরিবারগুলোতে আসবে ইতিবাচক পরিবর্তন। পরিবারই হবে আমাদের সুখের নীড়, শান্তির উৎস। তাই বড়-ছোট নির্বিশেষে সবাইকে আগে সালাম দেওয়া অভ্যাসে পরিণত করুন, সব সময় হাসিমুখে কথা বলুন। সালাম ও হাসিমুখে কথা বলা একটি উত্তম সাদাকা।

রেডিওটুডে নিউজ/ইকে/এসআই

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের