শুক্রবার,

২৯ মার্চ ২০২৪,

১৫ চৈত্র ১৪৩০

শুক্রবার,

২৯ মার্চ ২০২৪,

১৫ চৈত্র ১৪৩০

Radio Today News

একজন কিংবদন্তি এবং পঞ্চান্নটি বছর

মোসকায়েত মাশরেক

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১৫ আগস্ট ২০২১

আপডেট: ১৭:৩৩, ১৫ আগস্ট ২০২১

Google News
একজন কিংবদন্তি এবং পঞ্চান্নটি বছর

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

যাপিত জীবন ছিল মাত্র পঞ্চান্ন বছরের, যা সময়ের বিচারে বেশ সংক্ষিপ্ত। কিন্তু জীবনের দৈর্ঘ্যর চেয়ে বঙ্গবন্ধুর কর্মের পরিধি ছিল অনেক বেশি। অল্প কথায় এ কিংবদন্তি নেতার জীবনী তুলে ধরা সম্ভব নয়, তবে সংক্ষিপ্তভাবে জেনে নিন বঙ্গবন্ধুর জীবনকাল।

ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে বাবা শেখ লুৎফর রহমান আর মা মোসাম্মৎ সায়েরা খাতুনের ঘর আলো করো ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ জন্ম নেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৮ বছর বয়সে বেগম ফজিলাতুন্নেচ্ছাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করেন। তাঁরা দুই কন্যা শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা এবং তিন পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল এর জনক-জননী। শেখ মুজিব ১৯৪০ সালে নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন এবং এক বছরের জন্য বেঙ্গল মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

এসএসসি পাস করার পর ১৯৪২ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন তিনি। ওই বছরেই তিনি পাকিস্তান আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। পরের বছর নির্বাচিত হন মুসলিম লীগের কাউন্সিলর। আর ১৯৪৬ সালে শেখ মুজিব নির্বাচিত হন ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারন সম্পাদক। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে কোলকাতায় দাঙ্গা প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি।

পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২’র ছাত্র আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা আর ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে বঙ্গবন্ধু ছিলেন কেন্দ্রীয় চরিত্রে। এর মধ্যে ১৯৫৩ সালে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আর ৬৬ সালে সভাপতি।  

বাঙালির মুক্তির সনদ ছয়দফার পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশ সফরে বের হলে শেখ মুজিবকে বার বার গ্রেফতার করা হয়। রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের হয় বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে।

শেখ মুজিবের মুক্তির দাবীতে ১৯৬৯ সালে গণ অভ্যুত্থান হয় সারাদেশে। একই সময়ে ছাত্র-জনতার এক সংবর্ধনা সমাবেশে শেখ মুজিবুর রহমানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভূষিত করা হয় ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে। এরপর ১৯৭০ এর কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে আওয়ামীলীগ। কিন্তু বাঙালির বিজয়কে উপেক্ষা করে তৎকালীন পাকিস্তানি জান্তা সরকার আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করলে ৭ই মার্চ রেসকোর্সের জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের প্রাণের দাবি স্বাধীনতার সংগ্রাম। ডাক দেন অসহযোগ আন্দোলনের। 

এরই মধ্যে ১৫ থেকে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক হয় কয়েক দফা। আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় ২৫ শে মার্চ ইয়াহিয়া ঢাকা ত্যাগ করেন। ওই দিনই দিবাগত রাতেই নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানী হায়েনারা। আর সেই রাতেই ধানমন্ডিরর ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে গ্রেফতার হওয়ার আগে রাত ১২টা ২০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ঘোষনা করেন বাংলাদেশের বহুল প্রতীক্ষিত স্বাধীনতা। রাতেই এই বার্তা পেয়ে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও যশোর সেনানিবাসে বাঙালি জওয়ান ও অফিসাররা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা প্রচার করা হয় গভীর রাতে। ২৬ মার্চ তাঁকে বন্দি অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানে।

১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, তাঁর অবর্তমানে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত হয় প্রবাসি সরকার। সেই  সরকারের পরিচালনায় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয় পাকিস্তানী বাহিনী। সেই সাথে বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নেয় লাল সবুজের বাংলাদেশ। এর আগে অবশ্য ৭ই সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের সামরিক জেলে বঙ্গবন্ধুর গোপন বিচার করে তাকে দেশদ্রোহী ঘোষণা করে মৃত্যদন্ডাদেশ দেয়। তবে আন্তর্জাতিক চাপে ১৯৭২ সালে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিলে ১০ই জানুয়ারি লন্ডন ও দিল্লি হয়ে মুক্ত ও স্বাধীন দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধু। স্বাধীন ভূমিতে পা রেখেই বঙ্গবন্ধু আবারও  ছুটে যান সেই রেসকোর্স ময়দানে, যেখানে প্রিয় নেতার অপেক্ষায় ছিলেন লাখো জনতা। সেখানে অশ্রুশিক্ত নয়নে জাতির পিতা এবার ডাক দেন দেশগঠনের। 

একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে সোনার বাংলায় রুপান্তর করতে বঙ্গবন্ধু নামলেন আরেকটি যুদ্ধে। তবে তা সহ্য হয়নি দেশের ভেতর ঘাপটি মেরে বসে থাকা স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির। স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট ভোরে ফজরের আজানের সময় সেনবাহিনীর একদল বিপথগামী সদস্য সপরিবারে হত্যা করে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, গর্বিত একটি জাতির জন্ম দেয়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। আর সেই সাথে নিভে যায় একটি জাতির স্বপ্ন।

রেডিওটুডে নিউজ/ইকে/এসএস/এসআই

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের