বুধবার,

২৪ এপ্রিল ২০২৪,

১১ বৈশাখ ১৪৩১

বুধবার,

২৪ এপ্রিল ২০২৪,

১১ বৈশাখ ১৪৩১

Radio Today News

বাবা-মায়ের পাশে শায়িত হলেন মুহিত, জানাযায় মানুষের ঢল

সিলেট অফিস

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ১ মে ২০২২

আপডেট: ২৩:০০, ১ মে ২০২২

Google News
বাবা-মায়ের পাশে শায়িত হলেন মুহিত, জানাযায় মানুষের ঢল

সিলেট নগরীর রায়নগরের পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে শায়িত হলেন দেশের বরেণ্য রাজনীতিক সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এর আগে দুপুর সোয়া দুইটায় শহরের আলিয়া মাদরাসা ময়দানে তার শেষ নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিলেটের আপামর জনতার ঢল নামে। 

প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে দুপুর ১টার আগে থেকে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে গিয়ে জড়ো হন নানা শ্রেণিপেশার হাজারো মানুষ। দুপুর ২টা ১৮ মিনিটে জানাজার নামাজ শুরু হয়। জানাজায় ইমামতি করেন সিলেটের প্রবীণ আলেম মাওলানা মুফতি মুহিব্বুল হক গাছবাড়ি।

পরে বিকেল ৩টার দিকে সিলেট নগরীর রায়নগরে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে আবুল মাল আবদুল মুহিতকে দাফন করা হয়। 

জানাজায় পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুল মান্নান, আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনসহ বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মুহিতের মরদেহে একে একে প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনের নেতৃবৃন্দ শ্রদ্ধা জানান।

প্রসঙ্গত, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটে জন্ম নেওয়া মুহিত তার মা সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরী ও বাবা আবু আহমদ আবদুল হাফিজের ১৪ সন্তানের মধ্যে ছিলেন তৃতীয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন তার ছোট ভাই।

আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯৫১ সালে সিলেটের এমসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন তিনি। পরের বছর একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। অংশ নিয়েছিলেন ভাষা আন্দোলনে। ছাত্রজীবনে সলিমুল্লাহ হল ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

বিদেশে চাকরিরত অবস্থায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন তিনি। আর ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএ ডিগ্রি লাভ করেছিলেন।

১৯৫৬ সালে আবদুল মুহিত যোগ দিয়েছিলেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি)। পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব হিসেবে ছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্বে ছিলেন। অর্থনৈতিক পরামর্শক হিসেবে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৎকালীন পাকিস্তান দূতাবাসে যোগদান করেছিলেন। ছিলেন পাকিস্তান কর্মপরিকল্পনা কমিশনের প্রধান ও উপ-সচিব। ওয়াশিংটন দূতাবাসে কূটনীতিকের দায়িত্ব পালনের সময় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের জুনে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করেন।

১৯৭১ সালে গঠিত অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়াশিংটন দূতাবাসে ইকনমিক কাউন্সেলরের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ওই সময়ে তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। 

পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে পরিকল্পনা কমিশনের সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন। এছাড়াও, ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মুহিত।

১৯৮১ সালে আবুল মাল আবদুল মুহিত সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছিলেন। এরপর তিনি ফোর্ড ফাউন্ডেশনের অর্থনীতি এবং উন্নয়ন বিভাগের একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছিলেন। আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন সংস্থা বা ইফাদেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।

১৯৮২-১৯৮৩ সালে এরশাদ সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছিলেনন মুহিত। পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাংকের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), আইডিবি ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনি সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

আবুল মাল আবদুল মুহিত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহা ঐক্যজোটের মনোনয়নে সিলেট-১ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে প্রার্থী হন। ওই নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০৯ জানুয়ারি ৬ তারিখে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে টানা ১০ বছর বাজেট উপস্থাপন করেছেন জাতীয় সংসদে।

২০২১ সালের ২৫ জুলাই আবুল মাল আবদুল মুহিত করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। গত মার্চের শুরুতে আবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলেন কিছু দিন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে ১৪ মার্চ সিলেট ঘুরে আসেন। সিলেট সিটি করপোরেশন ১৬ মার্চ তাকে ‘গুণীশ্রেষ্ঠ সম্মাননা’ দেয়।a

রেডিওটুডে নিউজ/এমএস

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের