
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ‘কনসালটেন্ট’ পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন জনকে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি শেখ আবু মাহদি নামে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ও মোহাম্মদপুর থানায় জিডি করেছেন ভূক্তভোগী দুই জন।
তবে মঙ্গলবার দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে-কিছু ব্যক্তি বিভিন্ন জায়গায় দুদকের উপদেষ্টা, কনসালটেন্ট, পরামর্শক, সহযোগী কিংবা সহকারী পরিচয় দিচ্ছেন। এতে দুদকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। দুদকের নিয়োগ করা কোনও উপদেষ্টা, কনসালটেন্ট, পরামর্শক, সহযোগী বা সহকারী নেই। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সম্প্রতি আদালতে মামলা করেছেন শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি। মামলায় তিনি মাহদির বিরুদ্ধে ২ কোটি টাকা চাঁদাবাজি, হয়রানি ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগ এনেছেন। এজাহারে শাহরিয়ার আহমেদ উল্লেখ করেন, ‘গত বছরের ১৪ আগস্ট জনৈক গিয়াস উদ্দিন সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরির জন্য তার কাছে তথ্য চান। গিয়াস বাদীকে তোপখানা রোডের একটি রেস্টুরেন্টে ডাকেন। সেখানে যাওয়ার পর গিয়াসের সঙ্গে অজ্ঞাত তিনজন ব্যক্তি আসেন, যারা নিজেদের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য পরিচয় দেন। ওই ব্যক্তিরা বাদীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে গুম করার হুমকি দেন। বাদীকে বাঁচতে হলে মামলার আবু মাহদিকে ২ কোটি টাকা দিতে হবে বলে জানান।
অন্যথায় দুদুকসহ বিভিন্ন স্থানে মামলা দেওয়াসহ নানাভাবে হয়রানি করাসহ গুম ও অপহরণ করাসহ বিভিন্ন হুমকি দেন। বাদী ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় ‘২ কোটি টাকা দেবেন’ বলে প্রাণে বেঁচে ফিরেন। পরদিন আসামি গিয়াস ধানমন্ডির একটি কপি শপে বাদীর কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা নেন এবং দুই দিন পর বাদীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জনতা ব্যাংক ফার্মগেট করপোরেট শাখার চারটি চেকের মাধ্যমে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা লিখে নেন। বাদী ওই টাকা না দিতে তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেন।
একইভাবে শাহরিয়ার চৌধুরীর কাছ থেকে জোরপূর্বক চেক নেওয়ার অভিযোগে মোহাম্মদপুর থানায় শেখ আবু মাহদির বিরুদ্ধে একটি জিডি হয়েছে।
মাহদি ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে জুলস পাওয়ার লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিককে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও ৩ কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা জানান, জুলস পাওয়ার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় সৌরবিদ্যুৎ প্লান্টের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কাজ করে। গত ৩ মার্চ শেখ আবু মাহদী মোবাইল ফোনে তাদের টেকনাফ অফিসের ল্যান্ড কো-অর্ডিনেটর হেলালকে ফোন করে হুমকি দেন এবং হাত-পা ভেঙে পঙ্গু করে দেওয়ার কথা বলেন। এর আগে গত ২২ ডিসেম্বর একই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নাহিদুজ্জামানকে ফোন করে তার চাহিদা মাফিক টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে দুদকে মামলা দেওয়া, পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা ও কোম্পানি চেয়ারম্যান মাহবুব আলমকে হত্যার হুমকি দেন।’ জুলস পাওয়ারের কর্মকর্তারা জানান, মাহদি তাদের কাছে ৩ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন।
মাহদি বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে তথ্য চেয়ে হোয়াটসঅ্যাপ ও মোবাইলে খুদেবার্তা দিয়েছেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমি ১৬ বছর ধরে বিদ্যুৎ খাতের অপরাধ ও দুর্নীতি নিয়ে কাজ করি। আমাকে আমার প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন। ‘মাই কন্টাক্ট: মেজ. মাহদি (অব.)।’ এভাবে বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে খুদেবার্তা পাঠিয়ে তথ্য চান মাহদী। পরে ওইসব ব্যক্তির কাছে চাঁদা চাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগের বিষয়ে শেখ আবু মাহদি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মাস দুয়েক ধরে দুদকের সঙ্গে কাজ করি। দুদকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি অভিযানে গিয়েছি। তাদের জন্য তথ্য সংগ্রহ করেছি।’ আপনি দুদকের ‘কনসালটেন্ট’ পরিচয় দেন কেন, আপনাকে কি দুদক কনসালট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুদককে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করেন। তারাই তাদেরটা বলুক। আমার কাছ থেকে জানতে চাইলে আপনি দুদকে আসেন। তাদের সামনে বসেই আপর প্রশ্নের জবাব দিবো।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম