সংগৃহিত ছবি
প্রতি বছর উত্তরে বন্যায় ক্ষতি ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি বসত ভিটা, আবাদী জমি সড়কের পাশাপাশি বিলীন হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে কৃষি, মৎস, গবাদিপশুতে ১৫ শ কোটি টাকা। ফসলি জমি ও বসত ভিটাতে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। সড়ক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,সেতুতে ক্ষতি প্রায় ৩শ কোটি টাকা।
ভরাট তিস্তায় অল্প পানিতে সৃষ্টি হচ্ছে বন্যা, ভাঙ্গন। হুমকিতে পড়ছে বসত ভিটা, কৃষি, বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতি বছর বন্যার কবল থেকে রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড যে অস্থায়ী মেরামত করছে বছর ঘুরেই তা আবার তিস্তায় বিলীন হচ্ছে।
ভাঙ্গন, বন্যা থেকে রক্ষায় এবার টেকসই সমাধানের কথা বলছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। নদী গবেষকের মতে, ক্ষতি কমাতে তিস্তা সংস্কারে বিঙ্গান ভিত্তিক পরিকল্পনার বিকল্প নেই।
গত কয়েক দিন ধরে ভারী বর্ষন আর উজানের ঢলে তিস্তার পানি বিপদসীমার ১৩ থেকে ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। পানির চাপে খুলে দেওয়া হয়েছিলো ডালিয়া ব্যারেরজের ৪১ টি জলকপাট। এরই মধ্যে তিস্তা তীরবর্তী রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলে পানি প্রবেশ কওে অনেক এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। সংকটে পড়েছেন এসব অঞ্চলে বসবাস করা কয়েক হাজার মানুষ।
বসত ভিটার পাশাপাশি বন্যায় প্রতি বছরই বিলীন ও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তিস্তা তীরবর্তী ৫ জেলার অসংখ্যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যার প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের মাঝেও। শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, শিখন পদ্ধতিতে যাতে কোন ঘাটতি না হয় সে বিষয়ে তারা সতর্ক দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলার শিক্ষা কর্মকর্তাদের।
প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের রংপুর বিভাগীয় উপ-পরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম জানান, রংপুর বিভাগের রংপুর, লালমনিহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবন্ধা জেলার বিভিন্ন উপজেলার মধ্য দিয়ে তিস্তা নদী বয়ে গেছে। এসব জেলার চরাঞ্চলের অবস্থিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে। ভাঙ্গনের আগে এসব শিক্ষা প্রতিষ্টান থেকে প্রয়োজনীয় মালামাল সনিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
নীলফামারী থেকে গাইবান্ধা পর্যন্ত ১১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তায় স্থায়ী বাধ না থাকায় ক্ষতির পরিমান বাড়ছে। আর অস্থায়ী সংস্কারে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হলেও তা কোন কাজে আসছেনা।
নদী গবেষকরা জানান, তিস্তার তলদেশ ভরাট হবার পাশাপাশি, শাখা নদীগুলো সংস্কার না করা এবং একই সাথে ভারত কোন পূর্বাভাস ছাড়াই পানি ছেড়ে দেবার কারনেই বন্যার মতো বড় দূর্যোগ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানি জানান, তিস্তা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাবার কারনে নদীর পানি বিভিন্ন দিক দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বন্যা ও ভাঙ্গনের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে প্রতি বছর ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ হাজার মানুষ তাদের বসতবাড়ি,জমি হারাচ্ছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবীব জানান, তিস্তার উভয় তীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ ও নদী তীর সংরক্ষণ কাজের একটি বড় প্রকল্পের সমিক্ষা কার্যক্রম চলছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে তিস্তার ভাঙ্গন ও বন্যা থেকে রেহাই মিলবে নদী তীরবর্তী বসবাসরত মানুষের।
গবেষক ড. তুহিন ওয়াদুদ জানান, উত্তরে যে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে তার অন্যতম কারন তিস্তার ভাঙ্গন ও অতি বন্যা। সে কারনে তিস্তা সংস্কারে যত দ্রুত সম্ভব কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে প্রতি বছরই ক্ষতির পরিমান বাড়বে, যার প্রভাব পড়বে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির উপর।
রেডিওটুডে নিউজ/এসবি