
মাংস চুরির অভিযোগে নারীকে নির্যাতন ও চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানা পুলিশ। ওই আসামিদের ছাড়িয়ে নিতে থানা ঘেরাও করে গ্রামবাসী। এ সময় প্রায় ঘণ্টাখানেক পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়।
বুধবার বেলা ১১টায় উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দারা থানার সামনে আসেন। তারা গ্রেপ্তার একই গ্রামের রিপনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন, মোমিনের স্ত্রী পারভিন খাতুন ও বক্করের স্ত্রী লিপি খাতুনকে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানায়। ১১টা ৩৫ মিনিট থেকে কয়েক মিনিট গ্রামবাসীর সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত সোমবার বিকেলে প্রতিবেশীর ঘরে ঢুকে ফ্রিজ থেকে মাংস নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে ভুক্তভোগী নারীর বিরুদ্ধে। সে সময় প্রতিবেশীর স্ত্রী তাকে ধরে বাড়ির উঠানে পেয়ারা গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে মারধর করে মাংস কেড়ে নেন। এক পর্যায়ে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যান স্বামী।
ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন রাত ৮টার দিকে তাদের বাড়িতে ভাঙচুর করে তাঁকে তুলে ফের প্রতিবেশীর বাড়ি নিয়ে আসেন। সেখানে তাঁকে মারধর করে মাথার চুল কেটে দেন। রাত ১০টার দিকে স্বজন ও এলাকাবাসী নিয়ে সালিশ বসান স্থানীয় ইউপি সদস্য। এ সময় মারধরের শিকার নারীর দুটি গরু, একটি ছাগল ও স্বর্ণালংকারের বিনিময়ে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার রাতে ভুক্তভোগী নারী সাতজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। বুধবার সকাল ৯টার দিকে পুলিশ তিন নারীকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে। এর পরপরই ওই গ্রামের লোকজন থানায় আসেন। থানা চত্বরে গিয়ে এ সময় জনতার ভিড় দেখা যায়। পুলিশ আসামিদের গাড়িতে তুলছে। আর মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দারা তাদের বাধা দিচ্ছে।
এ সময় মির্জাপুর গ্রামের ইলেকট্রিক মিস্ত্রি রিপন বলেন, ‘ওই নারী সোমবার আমার বাড়ি থেকে ৪১ হাজার টাকা ও মাংস চুরি করে হাতেনাতে ধরা পড়েছে। আর পুলিশ চোরের পক্ষ নিয়ে আমার স্ত্রীসহ তিনজনকে ধরে এনেছে। আমরা চোরের শাস্তি ও আটক নারীদের ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেছি।’
মামলার বাদীর ভাষ্য, ‘ষড়যন্ত্র করে চুরির নাটক সাজিয়ে আমার সঙ্গে অন্যায় করেছেন গ্রামের লোকজন। আমি বিচারের আশায় থানায় মামলা করেছি। কিন্তু মামলা তোলার জন্য সবাই হুমকি দিচ্ছে।’
মামলাটির তদন্ত করছেন ওই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রশিদ। তিনি বলেন, মামলায় ওই নারী শারীরিক নির্যাতন, চু্ল কাটা, বাড়িঘরে ভাঙচুর-লুটপাটসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনেছেন। তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে থানা ঘেরাও করার বিষয়টি অস্বীকার করেন কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলাইমান শেখ। তাঁর ভাষ্য, আসামিদের আদালতে নেওয়ার সময় গ্রামের লোকজন বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কড়া নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে তাদের আদালতে নেওয়া হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম