প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে গণভবনে নবনিযুক্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদকে র্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দেন নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান। (ছবি: পিআইডি
বাংলাদেশের ১৭তম সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।
বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে গণভবনে নবনিযুক্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদকে র্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দেন নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান।
র্যাঙ্ক ব্যাজ পরানোর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নব-নিযুক্ত সেনা প্রধানকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান এবং তার সফলতা কামনা করেন। নতুন সেনাপ্রধানও প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
নতুন সেনা প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ সদ্য বিদায়ী সেনা প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের স্থলাভিষিক্ত হলেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লে. জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স’র (এসএসএফ) মহাপরিচারক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী ।
এর আগে গত ১০ জুন এস এম শফিউদ্দিন আহমেদকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল থেকে জেনারেল পদে পদোন্নতি দেয়ার কথা জানানো হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশে জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে তাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নতুন প্রধান ঘোষণা করা হয়। আগামী তিন বছর তিনি সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে থাকবেন।
দায়িত্ব গ্রহনের পর নবনিযুক্ত সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ শিখা অনির্বাণে পুস্পস্তবক অর্পণ করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর সেনাকুঞ্জে সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করে এবং সেখানে তিনি একটি গাছের চারা রোপন করেন।
জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ০১ ডিসেম্বর ১৯৬৩ সালে খুলনা জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন আহমেদ স্বাধীনতা-পূর্বকালে একনাগারে দুই যুগ জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ ২৩ ডিসেম্বর ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি হতে ৯ম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সাথে কমিশন লাভ করেন। কমিশন পরবর্তী তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে অপারেশন এলাকায় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগদানপূর্বক তার সামরিক কর্মজীবন শুরু করেন।
তিনি ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এ্যান্ড ষ্টাফ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে মাষ্টারস্ ইন ডিফেন্স ষ্টাডিজ এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ (বিইউপি) হতে ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড সিকিউরিটি ষ্টাডিজ -এ প্রথম বিভাগে অসামান্য ফলাফলসহ এমফিল সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি বিইউপি এর অধীনে পিএইচডি সম্পন্নের উদ্দেশ্যে অধ্যয়নরত আছেন। জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ প্রথম স্থান অধিকার এবং এমআইএসটি গোল্ড মেডেল অর্জনসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এমবিএ ডিগ্রী অর্জন করেন।
২০১০ সালে তিনি সফলতার সাথে চীনের ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটি (এনডিইউ) হতে ডিফেন্স এ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক ষ্টাডিজ কোর্স এবং মিরপুরে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এ্যান্ড স্টাফ কলেজ হতে আর্মি স্টাফ কোর্স সম্পন্ন করেন। পাশাপাশি তিনি এনডিইউ, ওয়াশিংটন হতেও গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন।তাঁর বর্ণাঢ্য চাকুরি জীবনে তিনি জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) হিসেবে আমি ট্রেনিং এ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একমাত্র লজিষ্টিকস্ ফরমেশন এবং ১৯ পদাতিক ডিভিশন কমান্ড করেন। এছাড়াও তিনি একটি পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার, বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে কাউন্টার ইন্সারজেন্সি অপারেশন এলাকায় একটি পদাতিক ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক হিসেবে কমান্ড নিযুক্তিতে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ইনষ্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ষ্টাডিজ (বিআইআইএস) এর মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন পাইওনিয়ার ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার হিসেবে ২০১৪-২০১৬ পর্যন্ত ইউনাইটেড ন্যাশনস্ মাল্টিডাইমেনশনাল ইন্টিগ্রেটেড স্ট্যাবিলাইজেশন মিশন ইন দ্যা সেন্ট্রাল আফ্রিকা (মিনুস্কা)তে বহুজাতিক বাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং অসামান্য কর্মদক্ষতা প্রদর্শনের জন্য এসআরএসজি কর্তৃক সাইটেশন প্রাপ্ত হন। তিনি বিভিন্ন ফরমেশন সদর দপ্তরে সিনিয়র অপারেশনাল এবং প্রশাসনিক ষ্টাফ অফিসারসহ সিনিয়র ডাইরেক্টিং স্টাফ হিসেবে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, প্রশিক্ষক হিসেবে ক্যাডেট কলেজ ও প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি সদর দপ্তর আর্মি ট্রেনিং এ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড (আর্টডক) এর চিফ অব ডকট্রিন ডিভিশন এবং সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে সামরিক প্রশিক্ষণ পরিদপ্তরের পরিচালক হিসেবে অত্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে তিনি সেনাসদরে কোয়ার্টার মাষ্টার জেনারেল হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত ও দুই কন্যা সন্তানের পিতা।
তথ্যসূত্র: আইএসপিআর