
চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিদেশি কোম্পানিকে যুক্ত করার পদক্ষেপ, রাখাইনের জন্য মানবিক করিডোরের উদ্যোগ, স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশকে ‘সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধচক্রে’ জড়ানোর চেষ্টা বন্ধের দাবিতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোড মার্চ শুরু করেছে ‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।
অর্ধশতাধিক সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের ছয় শতাধিক নেতাকর্মী এ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন বলে আয়োজকদের ভাষ্য। শুক্রবার (২৭ জুন) সকাল ১০টায় ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে রোড মার্চের সূচনা হয়। শুরুতে গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যের শিল্পীরা 'দুর্গম গিরি কান্তার মরু', 'জনতার সংগ্রাম চলবেই' গানগুলো গেয়ে শোনান। এর আগে মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা রোড মার্চে যোগ দিতে আসেন। তাদের প্রায় সবার হাতেই দেখা যায় প্ল্যাকার্ড, ব্যানার।
রোড মার্চ শুরুর আগে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। তিনি বলেন, 'চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার উদ্যোগের বিরোধিতাসহ রাখাইনের জন্য মানবিক করিডোর চালুর প্রতিবাদে এ রোর্ডমার্চ। মা মাটি মোহনা কোনোভাবেই আমরা বিদেশিদের হাতে দেব না।' ‘দেশবিরোধী যে কোনো ষড়যন্ত্র’ রুখে দিতে দেশপ্রেমিক সকল জনগণকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় জানান তিনি। এ সময় ‘সাম্রাজ্যবাদের আস্তানা/ ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’সহ নানা স্লোগান দেন রোড মার্চে অংশগ্রহণকারীরা।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, '৫০টার বেশি সংগঠনের নেতাকর্মীরা এই রোড মার্চে অংশ নিচ্ছেন। ঢাকা থেকে ছয় শতাধিক লোকজন রওনা করছি। পথে পথে আমাদের আরো অনেক লোকজন যুক্ত হবেন।' প্রথম দিন নারায়ণগঞ্জ এবং কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে পথসভা ও মিছিল শেষে কুমিল্লায় প্রথম দিনের সমাপনী সমাবেশ হবে টাউন হল ময়দানে এবং ফেনীতে রাত্রিযাপন করা হবে বলে জানান প্রিন্স।
রোড মার্চের দ্বিতীয় দিন শনিবার সকালে ফেনী থেকে যাত্রা করে মিরসরাই, সীতাকুণ্ডে পথসভা ও মিছিল শেষে চট্টগ্রাম বন্দরের সামনে সমাপনী সমাবেশ করা হবে। প্রিন্স বলেন, 'নিউমুরিংসহ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে পরিচালনা করতে হবে। রাখাইনে করিডোর দেওয়ার উদ্যোগ বন্ধ করতে হবে এবং জাতীয় সম্পদ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে বিগত সরকার এবং বর্তমান সরকারের যত গোপন চুক্তি আছে, তা প্রকাশ্যে আনতে হবে।'
রোড মার্চ উদ্বোধনের সংক্ষিপ্ত সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও গণমুক্তি ইউনিয়নের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন নসু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মুশতাক হোসেন, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, অধ্যাপক এম এম আকাশ, কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক হারুনার রশিদ ভূঁইয়া, বাংলাদেশের সোশালিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের সভাপতি মাসুদ খান, গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যের আহ্বায়ক মফিজুর রহমান লাল্টু।
উপস্থিত হতে না পারলেও অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ রোড মার্চের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন বলে জানান প্রিন্স। এছাড়া বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টসহ অনেক সংগঠন এ কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম