শুক্রবার,

১৯ এপ্রিল ২০২৪,

৬ বৈশাখ ১৪৩১

শুক্রবার,

১৯ এপ্রিল ২০২৪,

৬ বৈশাখ ১৪৩১

Radio Today News

চেকপোস্ট বসিয়ে ছিনতাই, গ্রেফতার ৪

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ১৫ জুলাই ২০২১

Google News
চেকপোস্ট বসিয়ে ছিনতাই, গ্রেফতার ৪

কোমরে পিস্তল ঝোলানো একজনের, আরেকজনের হাতে ওয়াকিটকি। অন্যজনের হাতে থাকে হ্যান্ডকাফ। সবার গায়েই গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) জ্যাকেট। রাস্তায় চেকপোস্ট বসিয়ে রীতিমতো তল্লাশি চালাতেন তারা। কিন্তু তারা কেউ সত্যিকারের পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নন। ডাকাতি-ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ডিবি পুলিশের ছদ্মবেশে থাকতের তারা। রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলা শহরের নির্জন রাস্তায় তারা ছিনতাই-ডাকাতি করে বেড়াতো।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বছিলা এলাকা থেকে এই চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। তারা হলেন- মানিক ব্যাপারী ওরফে দারোগা মানিক, জাহিদ হাসান ওরফে রেজাউল, ফারুক হোসেন ওরফে নাসির উদ্দিন ও রুবেল সিকদার ওরফে রুস্তুম। তাদের কাছ থেকে ডিবি পুলিশ লেখা জ্যাকেট, একটি বন্দুক, একটি খেলনা পিস্তল, ওয়াকিটকি, একটি ওয়ারলেস সেটসহ ডাকাতি ও ছিনতাইকাজে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে।

আজ বুধবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম-কমিশনার (ডিবি-উত্তর) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেফতারকৃত চারজন সংঘবদ্ধ ডাকাত ও ছিনতাইকারী দলের সদস্য। তারা ঈদ উপলক্ষে পশুর হাটে আগত ব্যাপারী ও ক্রেতাদের ডাকাতি-ছিনতাই করার পরিকল্পনা করছিল। তারা ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশির নামে সর্বস্ব লুটে নিতো।

একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি-ছিনতাই করে আসছিল। কিন্তু ডিবি পুলিশ বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সবসময় বা সব জায়গায় চেকপোস্ট বসায় না। পুলিশ পরিচয়ে কেউ তল্লাশি করতে চাইলে তার পরিচয় নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি। আশপাশে পোশাকে অন-ডিউটিতে থাকা অন্য পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার কথাও বলেন তিনি।

যুগ্ম-কমিশনার হারুন আরও বলেন, এই চক্রের মূলহোতা হলো ‘মানিক’। ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি-ছিনতাই করার সময় সে টিম লিডার হিসেবে নিজেকে দারোগা বা সাব-ইন্সপেক্টর পরিচয় দিতো। এজন্য চক্রের সবাই তাকে মানিক দারোগা বলে ডাকে। এই চক্রের সদস্যরা একাধিকবার ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি-ছিনতাই করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছে। কিন্তু গ্রেফতারের পর কিছুদিন কারাগারে থাকলেও আদালতের মাধ্যমে জামিন নিয়ে বাইরে এসে আবারও একই কাজে লিপ্ত হতো তারা।

গত ৭ জুন গাজীপুরের লিবার্টি নিট ওয়্যার নামে একটি গার্মেন্টস কারখানার দুই কর্মকর্তা শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের শফিপুর শাখা থেকে ১৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা তুলে মোটরসাইকেলে কারখানায় ফিরছিলেন। কারখানার শ্রমিক ও স্টাফদের বেতন দেওয়ার জন্য তারা টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে নেওয়ার খবর পেয়েছিল এই ভুয়া ডিবি পুলিশের চক্রটি।

তারা চান্দরা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের পাশে সাধারণ পুলিশ সদস্যের মতোই একটি চেকপোস্ট বসিয়ে মোটরসাইকেল আরোহী দুই গার্মেন্টস কর্মকর্তাকে আটক করে। অস্ত্রের মুখে তাদের দ্রুত গাড়িতে তুলে মারধর করে টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ওই গার্মেন্টস কারখানার ডেপুটি ম্যানেজার জসিম উদ্দিন বাদী হয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানায় একটি মামলা করেন।

ভুয়া ডিবি পুলিশের এই চক্রটিকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তারা গাজীপুরের ওই ঘটনাটি স্বীকার করে। গার্মেন্টস কারখানার বেতন-ভাতার সেই টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার পর তারা ছয়জন ভাগ করে নেন। টিম লিডার ‘দারোগা মানিক’ নিয়েছিলেন ৫ লাখ। বাকিরা কেউ ২ লাখ, কেউ ৩ লাখ করে ভাগ করে নেয়। ঈদকে কেন্দ্র করে এই গ্রুপটি আবারও রাজধানীতে গরুর হাটে আগত ক্রেতা ও বেপারীদের টার্গেট করে মাঠে নেমেছিল।

পুলিশ পরিচয়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গাড়িতে তুলে সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে নির্জন রাস্তায় নামিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এজন্য চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন গরুর হাটে রেকি শুরু করে। গ্রেফতার চারজনের নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এর মধ্যে মানিকের নামে দুটি, রেজাউলের নামে দুটি, ফারুকের নামে একটি ও রুবেলের নামে সাতটি মামলার তথ্য পেয়েছে ডিবি। তাদের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় অস্ত্র আইনসহ পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে।

ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, এই চক্রের একাধিক ব্যক্তি বিভিন্ন ব্যাংকে গিয়ে কে বেশি পরিমাণ টাকা তুলছে তা রেকি করে। গাজীপুরের ঘটনাটির আগে তাদের স্বাধীন নামে একজন সদস্য তিন দিন ওই ব্যাংকে গিয়ে ঘোরাঘুরি করে। কেউ বেশি পরিমাণ টাকা তুললেই মোবাইল ফোনে তাদের শারীরিক বর্ণনা বা পোশাকের রঙ বলে দেয় সহযোগী আরেকজনের কাছে। সহযোগী চক্রের এক সদস্য দাঁড়িয়ে থাকে ব্যাংকের সামনে। চক্রের ওই সদস্য পিছু নেয় টাকা তুলে কর্মস্থল বা বাসায় ফেরা ব্যক্তির। তারপর চক্রের অপর সদস্যরা দ্রুত গাড়ি নিয়ে কোনও একটি নির্জন জায়গা বেছে নিয়ে চেকপোস্টের নামে তল্লাশি শুরু করে। এই চক্রের আরও বেশ কয়েকজন সদস্যের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। তাদের ধরতে অভিযান চলছে।

রেডিওটুডে নিউজ/ইকে

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের