এভি ম্যালফরমেশন, ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া, ব্রেন অ্যানিউরিজম―ভয়াবহ এই তিন রোগে আক্রান্ত বলিউড ভাইজান সালমান খান। সম্প্রতি ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কপিল শো’-এ অতিথি হিসেবে হাজির হয়ে সব শারীরিক জটিলতার কথা জানিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে ব্রেন অ্যানিউরিজম হচ্ছে প্রাণঘাতী রোগ।
অনেক আগেই অবশ্য একবার ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া রোগে আক্রান্তের কথা জানিয়েছিলেন অভিনেতা সালমান। তবে সম্প্রতি রোগ নিয়ে আবারও কথা বলায় উল্লেখিত রোগগুলো নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে শুরু হয়েছে নানা চর্চা। এ ব্যাপারে ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন নিউরোলজিস্ট ডা. যশোধারা চৌধুরী। তিনি বলেন, এটি এক ধরনের ফেসিয়াল নার্ভ ডিসঅর্ডার। মুখে থাকা স্নায়ুতে জটিলতা তৈরি হলে এই রোগ দেখা দেয়।
এ রোগে আক্রান্ত হলে মুখের একপাশে, চোখের চারপাশে, চোয়ালে ও গালে মারাত্মক ব্যথা হয়। এ স্নায়বিক রোগে মুখে হঠাৎ করেই যন্ত্রণা শুরু হতে পারে। এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তি আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নেন। এ কারণে একে ‘সুইসাইডাল ডিজিজ’ও বলা হয়।
এদিকে আর্টেরিয়োভেনাস ম্যালফরমেশন হচ্ছে শিরা ও ধমনীর মধ্যে এক ধরনের জটিল সমস্যা। এ রোগে আক্রান্ত হলে শিরা ও ধমনীর সাধারণ কাজ ঠিকঠাক মতো হয় না। অনেক সময় রক্তপাত, খিঁচুনি, মাথাব্যথার মতো নানা উপসর্গ দেখা দিয়ে থাকে। এ রোগও ভয়াবহ বিপজ্জনক, যদি ব্রেন অ্যানিউরিজমে আক্রান্ত হয়।
ব্রেন অ্যানিউরিজম কী:
নিউরোলজিস্ট ডা. যশোধারার ভাষ্য―অ্যানিউরিজম রোগ কখনো হঠাৎ করেই দেখা দেয় না। শতকরা মাত্র ৩ জন ব্রেন অ্যানিউরিজমে আক্রান্ত হতে পারেন। এরপরও আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কোনো উপসর্গ প্রকাশ পায় না। এই রোগে মস্তিষ্কের রক্তনালি বেলুনের মতো ফুলে যায়। প্রাথমিক স্তরে এই রোগ খুব একটা শনাক্ত হয় না। তবে জটিলতা তখনই দেখা দেয়, যখন কিনা ওই রক্তনালি ছিঁড়ে যায় এবং ব্রেন হ্যামারেজ হয়। অর্থাৎ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হলে। আর এ অবস্থায় আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
ব্রেন অ্যানিউরিজমে আক্রান্ত হওয়ার কারণ:
সাধারণত, ৩০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে যেকোনো বয়সের ব্যক্তিই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। হাই ব্লাড প্রেশার থাকলে ব্রেন অ্যানিউরিজমে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ ব্যাপারে নিউরোলজিস্ট ডা. যশোধারা বলেন, সালমান খানের আর্টেরিয়োভেনাস ম্যালফরমেশন রয়েছে। যেখানে শিরা-ধমনী ঠিকমত কাজ করে না। যেখান থেকে অ্যানিউরিজমে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আবার এ রোগের অন্যতম কারণ হচ্ছে জেনেটিক্স।
ব্রেন অ্যানিউরিজমের উপসর্গ:
এ রোগ হঠাৎ করেই দেখা দেয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগটির উপসর্গ প্রকাশ পায় না। কিন্তু এর কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে, যা কখনোই অবহেলা করা ঠিক নয়। যেমন- নিয়মিত মাথাব্যথা হলে সতর্ক হতে হবে। ডা. যশোধারা বলেন, একদিন মাথাব্যথা হলো, প্যারাসিটামল খেলেন। কিন্তু মাথাব্যথা যদি নিয়মিত হয়, তাহলে প্যারাসিটামল সেবনে কাজ হবে না। তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
মাথাব্যথার সঙ্গে যদি বমি হয়, মাথা ঘোরায়, চোখে একটি জিনিসকে দুটো দেখার মতো উপসর্গও দেখা দিতে পারে। আবার মাথাব্যথা হলেই যে ব্রেন অ্যানিউরিজম আক্রান্ত আপনি, তাও সঠিক নয়। এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়া উপযুক্ত। তা না হলে কালক্ষেপণ বা অবহেলায় ভয়াবহ কোনো রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
চিকিৎসা:
নিউরোলজিস্ট ডা. যশোধারার মতে, ব্রেন অ্যানিউরিজম শনাক্ত হওয়ার পরই এ রোগের চিকিৎসা নিতে হবে। কিন্তু এই রোগ খুব একটা প্রাথমিক স্তরে শনাক্ত হয় না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো ধরনের উপসর্গ ছাড়াও হঠাৎ কারও মৃত্যু হয় বা ব্রেন হ্যামারেজ শুরু হয়। ফলে এ ক্ষেত্রে কোনো চিকিৎসা কাজ করে না। তবে প্রাথমিক স্তরে রোগ শনাক্ত হলে চিকিৎসাধীন থেকে রোগকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম
