শনিবার,

২০ এপ্রিল ২০২৪,

৭ বৈশাখ ১৪৩১

শনিবার,

২০ এপ্রিল ২০২৪,

৭ বৈশাখ ১৪৩১

Radio Today News

ঢাকার স্মৃতি ঢাকা কেন্দ্র

রায়হান আহমেদ

প্রকাশিত: ২৩:১৮, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

আপডেট: ২৩:২১, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২

Google News
ঢাকার স্মৃতি ঢাকা কেন্দ্র

এই তো এক দশক আগে চারশ বছর পূর্তি পালন করেছে ঢাকা শহর। যার যাত্রা শুরু ১৬১০। আর এই ৪০০ বছরের রয়েছে ঢাকার অজস্র স্মৃতি। যার অধিকাংশ স্মৃতি আর ইতিহাস-ঐতিহ্য জমাটবদ্ধ হয়ে আছে পুরান ঢাকার মোহিনী দাস লেনে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রে।  ঢাকার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির চর্চাকে সুদূরপ্রসারী করার লক্ষ্যে মাওলা বখ্শ সরদার মেমোরিয়াল ট্রাস্টেরউদ্যোগে ১৯৯৭ সালে ঢাকা কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়।


ঢাকা কেন্দ্রের দোতলা এই ভবনের নিচ তলায় মাওলা বক্স চক্ষু হাসপাতাল। যেখানে ১০ টাকায় চোখেরচিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে শিশুদের ছবি আকার আর্ট স্কুল। দোতলায় রয়েছে সর্দার পরিবারের ব্যবহৃত নানা রকম মাটিরহাঁড়ি-পাতিল সহ ব্যবহার্য জিনিসপত্র । উপরের একটি অংশে রয়েছে গ্রন্থাগার ও সুপরিসর পাঠকক্ষ। অপর অংশে রয়েছেসংগ্রহশালা, অডিটরিয়াম, সুদৃশ্য বাগান এবং মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ভাস্কর্য।

ঢাকা কেন্দ্রের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এটির লাইব্রেরী। যেখানে রয়েছে প্রায় ছয় হাজার বই। লাইব্রেরীতে  আবদুল করিমের ‘ঢাকাইমসলিন’, আবু যোহা নূর আহমদের ঊনিশ শতকের ‘ঢাকার সমাজজীবন’, কেদারনাথ মজুমদারের ‘ঢাকার বিবরণ ও ঢাকা ব্রাহ্মসমাজের ইতিহাস’, নাজির হোসেনের ‘কিংবদন্তির ঢাকা’, নির্মল গুপ্তের ‘ঢাকার কথা’, যতীন্দ্রমোহন রায়ের ‘ঢাকার ইতিহাস’, রফিকুল ইসলামের ‘ঢাকার কথা’, সত্যেন সেনের ‘শহরের ইতিকথা’, হরিদাস বসুর ‘ঢাকার কথা’ বইয়ের মত অসং্খ্ বিখ্যাতবই রয়েছে ঢাকা কেন্দ্রের লাইব্রেরীতে। ঢাকার অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে চর্চা করতে গেলে বা  গবেষণা করতে গেলেঅনেকেই ঢাকা কেন্দ্র ছাড়া অনেকটা অসম্ভব। এ ছাড়া ঢাকাবিষয়ক তথ্যসংবলিত পত্রিকা, সাময়িকীর সংশ্লিষ্ট অংশ সংগ্রহ করেএকত্রে সন্নিবেশ করা রয়েছে। এখানে এরূপ ৫০টির মতো পেপার ক্লিপিং ভলিউম রয়েছে, ঢাকা কেন্দ্রের রয়েছে ৪০০ বছর উপলক্ষে ঢাকাইয়া উর্দু ও বাংলায় কবিতা আবৃত্তির সিডি। 

এছাড়াও ঢাকা কেন্দ্রে রয়েছে মাওলা বখশ সরদার পারিবারিক গ্যালারি, পঞ্চায়েত গ্যালারি, ঢাকাবিষয়ক বই বিক্রয়কেন্দ্র, কমরেডওসমান গনি মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, সাহিত্যিক ও লেখক মুনতাসীর মামুন ঢাকা কর্নার, ঢাকা কেন্দ্র প্রকাশনা কর্ণার, বিলকিছ বানু স্মৃতিমিলনায়তন, বিজয় চত্বর, ফজলুল করিম তারা সংস্কৃতি চত্বর, সুদৃশ্য বাগান, মিলি শিশু চত্বর, পল্লী কবি জসীমউদ্দীন স্মৃতিচত্বর ইত্যাদি।

গত দুই দশক থেকে গুণীজনদের পদভারে মুখরিত শত শত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রদ্ধাভাজন গুণীর পদচারণায় মুখরিত হয়েছে ঢাকা কেন্দ্র। তাঁদের মধ্য থেকে ড. নওয়াজেশ আহমেদ, আবদুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দীন, অধ্যাপক সঞ্জীব সরকার, অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী, ক্যারোলিন অ্যাডামস প্রমুখের স্মৃতিমুখর দিন কেটেছে এই কেন্দ্রের সঙ্গে। ‘সাত সমুদ্র তের নদী পেরিয়ে’ শীর্ষক গ্রন্থটি লেখার জন্য বাংলা একাডেমি থেকে প্রাপ্ত পারিতোষিক ক্যারোলিন অ্যাডামস ঢাকা কেন্দ্রকে প্রদান করেছেন।

একটা সময় ঢাকা কেন্দ্রের উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা ছিল ‘ত্রৈমাসিক ঢাকা’। এ যাবৎ মোট আটটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। জনপ্রিয় এ পত্রিকার প্রকাশনা কিছুকাল যাবৎ বন্ধ। গবেষণাধর্মী বিধায় এ ধরনের কাজের ক্ষেত্রে জনবল সংকট প্রকট। এ ছাড়া ঢাকা কেন্দ্র তিনটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘ঢাকা রচনাপঞ্জি সংকলন’। এতে ঢাকাবিষয়ক গ্রন্থ, ম্যাগাজিন, জার্নাল, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধ-নিবন্ধের একটি বিশাল তালিকা রয়েছে। ঢাকাবিষয়ক গবেষকদের জন্য যা এক অনন্য প্রকাশনা।

বর্তমানে ঢাকা গবেষক ও প্রবীণ বাসিন্দাদের নিয়ে দুই মাস পর পর আয়োজন করা হয় আড্ডা। কেন্দ্রসংশ্লিষ্ট অডিটরিয়াম এবং সুপরিসর পাঠকক্ষে হয় ঘরোয়া আড্ডা আর পার্শ্ববর্তী বাগানে হয় ইতিহাস ও ঐতিহ্যবিষয়ক আড্ডা। তিন প্রজন্মের সমাগম হয় এতে। নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর আড্ডা হয়। সেই আড্ডা রেকর্ড হয় এবং পরে তা লিখিত আকারে প্রকাশ করা হয়। ঢাকাইয়া ভাষাচর্চার এক মোক্ষম জায়গা এই আড্ডা। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ঢাকা কেন্দ্র বিশিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনকে সংবর্ধনা প্রদান করে আসছে।

ঢাকা কেন্দ্রের এইসব কার্যক্রম পরিচালিত হয় মাওলা বখ্শসর্দার মেমোরিয়াল ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে। ট্রাস্টি হিসেবে পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন মাওলা বখশ সরদারের ছেলে ঢাকা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিম বখশ।


 

রেডিওটুডে নিউজ//ইআ

রেডিও টুডে/ আর এ

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের