বৃহস্পতিবার,

২৫ এপ্রিল ২০২৪,

১২ বৈশাখ ১৪৩১

বৃহস্পতিবার,

২৫ এপ্রিল ২০২৪,

১২ বৈশাখ ১৪৩১

Radio Today News

১৩০ বছরের মিষ্টির দোকান খুলনার `ইন্দ্রমোহন সুইটস`

শুভ্র শচীন, খুলনা 

প্রকাশিত: ১৫:৫৫, ৩১ অক্টোবর ২০২১

Google News
১৩০ বছরের মিষ্টির দোকান খুলনার `ইন্দ্রমোহন সুইটস`

মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার তার স্ত্রী ও দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিয়ে ইন্দ্রমোহন সুইটসে

ছেলেবেলায় ভাগ্যান্বেষণে খুলনায় আসেন মানিকগঞ্জের ধূলসরা গ্রামের ইন্দ্রমোহন দে। ১৮৯০ সালে শহরের বড়বাজার এলাকার ১০ নম্বর হেলাতলার একটি দোতলা বাড়ির নিচতলার ঘর কিনে ছোট পরিসরে নিজেই মিষ্টি বানিয়ে 'ইন্দ্রমোহন সুইটস' নাম দিয়ে মিষ্টান্নের দোকান প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। পরে ঝালকাঠির নলছিটির সুরেন দাশ নামের একটি ছেলেকে কর্মচারী হিসেবে রাখেন।

ছেলেটি বিশ্বস্ত হয়ে উঠলে তাকেও মিষ্টি বানানো শেখান ইন্দ্রমোহন। সুরেন ৭০ বছর ধরে এই দোকানে কাজ করছেন। তার বানানো রসগোল্লা, পানতোয়া ও গুড়ের সন্দেশের সুখ্যাতির কথা বড়বাজার এলাকার ব্যবসায়ীমহলে সাড়া ফেলে। শহরের রাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে আরম্ভ করে সবমহলে ইন্দ্রমোহনের মিষ্টির স্বাদ ও মানের কথা ছড়িয়ে পড়ে। খুবদ্রুতই এই মিষ্টি খুলনায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্রতিদিন দোকানে মিষ্টির জন্য ভিড়ও বাড়তে থাকে। এরপর ইন্দ্রমোহনকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।

সরকারি-বেসরকারি এবং ব্যক্তিপর্যায়ে যেকোনো উৎসব, পার্বণ বা অনুষ্ঠানে সবার অন্যতম পছন্দ ইন্দ্রমোহনের রসগোল্লা, পানতোয়া, চমচম আর খেজুর গুড়ের সন্দেশ। তীব্র আকর্ষণে মানুষ বারবার ছুটে যান ইন্দ্রমোহন সুইটসে। এই মিষ্টি এতটাই জনপ্রিয় যে, মানুষের মুখে মুখে প্রচারে দিনে দিনে এই মিষ্টির জনপ্রিয়তা ছড়িয়েছে দেশে-বিদেশে। খুব দ্রুতই মিষ্টির জগতে ইন্দ্রমোহন একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। প্রায় ১৩০ বছর ধরে ইন্দ্রমোহনের মিষ্টি স্বাদ ও মান বজায় রেখে মিষ্টির রাজ্যে রাজত্ব করে চলেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, দোকানের আলমারিতে থরে থরে সাজানো গোল গোল রসগোল্লা আর ছোট ছোট পটোল আকৃতির বাদামি রঙের পানতোয়া। এরসঙ্গে রয়েছে খেজুর গুড়ের সন্দেশও। এই তিন পদের মিষ্টিতে থাকা অদৃশ্য এক জাদু সবাইকে টেনে নিয়ে আসে এখানে। 
কৃষ্ণপদ দাস নামে একজন বলেন, তিনি দোকানটিতে প্রায় ৬০ বছর ধরে আসেন। আগে তার বাবার সাথে আসতেন। এখন নাতিদের নিয়ে আসেন।

দোকানের দেখভালকারী ও কারিগর কমল চন্দ্র শীল জানান, নেতাজি সুভাস চন্দ্র বসু খুলনায় এসে ইন্দ্রমোহনের মিষ্টি খেয়ে প্রশংসা করেছিলেন। ২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার খুলনা এসে তার স্ত্রী ও দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিয়ে হেলাতলা মোড়ের একপ্রকারের ঘিঞ্জি পরিবেশে ইন্দ্রমোহন সুইটসে যান। তারা দোকানের বেঞ্চে বসে ইন্দ্রমোহনের ঐতিহ্য অনুযায়ী স্টিলের থালায় হাত দিয়ে তৃপ্তিসহকারে রসগোল্লা ও পানতোয়া খান। সঙ্গে করে মিষ্টি নিয়েও যান।

কমল বলেন, সম্প্রতি বাড়ির বর্তমান মালিকের সঙ্গে দোকানঘর নিয়ে মামলা-মোকদ্দমার কারণে মিষ্টির দোকান উচ্ছেদ করা হয়। ২০১৯ সালের ৩০ জুন আদালতের আদেশে দোকানটি ছেড়ে দিতে হয়। ফলে ঐতিহ্যবাহী এই জনপ্রিয় মিষ্টান্নের দোকানটি বন্ধ হয়ে যায়। খুলনার সচেতন মহল এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

কমল বলেন, পরবর্তী সময়ে খুলনা চেম্বারের সভাপতি কাজী আমিনুল হক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মিলে আগের দোকানের একটু কাছাকাছি হেলাতলা মসজিদের পেছনে ১৭ নম্বর হেলাতলায় একটি দোকানঘর বরাদ্দ দেন। বর্তমানে সেখানেই মিষ্টির দোকানটি পুনরায় চালু করা হয়েছে। 


 

রেডিওটুডে নিউজ/এইচবি

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের