বুধবার,

১৮ জুন ২০২৫,

৫ আষাঢ় ১৪৩২

বুধবার,

১৮ জুন ২০২৫,

৫ আষাঢ় ১৪৩২

Radio Today News

মঙ্গল গ্রহে মানব বসতি স্থাপনে যুগান্তকারী সাফল্যের দাবি চীনা বিজ্ঞানীদের

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৩:২১, ১৭ জুন ২০২৫

আপডেট: ২৩:২৩, ১৭ জুন ২০২৫

Google News
মঙ্গল গ্রহে মানব বসতি স্থাপনে যুগান্তকারী সাফল্যের দাবি চীনা বিজ্ঞানীদের

মঙ্গল গ্রহে মানব বসতি স্থাপন এবং দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা পরিচালনার পথে এক যুগান্তকারী সাফল্যের দাবি করেছেন চীনা বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে, চীনের সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সংরক্ষণের একটি নতুন পদ্ধতি আবিষ্কারের কথা জানিয়েছেন। এই উদ্ভাবন লাল গ্রহে ভবিষ্যৎ মিশনগুলোর জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, যা মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।

গবেষকদের দাবি অনুযায়ী, তারা মঙ্গলের বাতাসকে ব্যবহার করে তাপ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন। মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলের উচ্চ ঘনত্ব এবং তুলনামূলকভাবে উচ্চ তাপ ধারণক্ষমতা এই তাপ-থেকে-বিদ্যুৎ রূপান্তর প্রক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত সহায়ক বলে প্রমাণিত হয়েছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, তারা মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে থাকা কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর একটি উপায় খুঁজে পেয়েছেন। এর ফলে হিলিয়াম বা জেননের মতো ব্যয়বহুল গ্যাসের প্রয়োজন পড়বে না।

এই মাধ্যমটি একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থায় শক্তি রূপান্তরকারী হিসেবে কাজ করে। সহজভাবে বললে, আমরা এটিকে সিস্টেমের 'রক্ত' হিসেবে তুলনা করতে পারি। মঙ্গল গ্রহের বাতাসে তাপ-থেকে-বিদ্যুৎ রূপান্তর খুব ভালো হয়। এর আণবিক ওজন বেশি এবং উচ্চ আপেক্ষিক তাপ ধারণ ক্ষমতা রয়েছে, যার অর্থ এটি তাপ-থেকে-বিদ্যুৎ রূপান্তরে চমৎকার," বলেছেন USTC-এর গবেষক শি লিংফেং। শি বলেন, "মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডল ব্যবহার করার অর্থ হল সেখানকার সম্পদ ব্যবহার করা। অতএব, এটি ভবিষ্যতে একটি টেকসই মঙ্গল গবেষণা কেন্দ্র তৈরির জন্য একটি খুব ভালো প্রযুক্তিগত সমাধান।"

এই গবেষণার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো ‘মার্স ব্যাটারি’নামে একটি নতুন ধারণার উদ্ভাবন। এই ব্যাটারি মঙ্গলের বাতাসে থাকা উপাদান শোষণ করে তা থেকেই বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারে। এর মানে হলো, ভবিষ্যৎ মঙ্গল মিশনগুলিতে পৃথিবী থেকে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি পরিবহনের পরিবর্তে, তারা মঙ্গলের নিজস্ব সম্পদ ব্যবহার করে নিজেদের শক্তি উৎপন্ন করতে পারবে। এটি মহাকাশযাত্রার খরচ এবং জটিলতা উভয়ই উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করবে।

শুধু উৎপাদন নয়, গবেষকরা উদ্ভাবন করেছেন 'মার্স ব্যাটারি' নামের একটি ধারণা, যা মঙ্গলের বাতাসে থাকা উপাদান শোষণ করে তা থেকেই তৈরি করে বিদ্যুৎ। লিথিয়াম-এয়ার বা লিথিয়াম-CO₂ ব্যাটারির মতো প্রযুক্তির মাধ্যমে রোভার কিংবা হেলিকপ্টারও চালানো সম্ভব। মঙ্গলগ্রহের দিন-রাত্রির বিশাল তাপমাত্রা পার্থক্যেও এই ব্যাটারি কাজ করতে সক্ষম বলে পরীক্ষায় দেখা গেছে। শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসেও এটি নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ করে, যা ভবিষ্যতের গবেষণা ঘাঁটি নির্মাণে বড় সহায়ক।

অন্য একজন গবেষক সিয়াও সু বলেন, "মার্স এয়ার ব্যাটারির আসলে লিথিয়াম-এয়ার ব্যাটারি এবং লিথিয়াম-কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যাটারির একই অপারেটিং নীতি রয়েছে। এটি মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডল থেকে উপাদানগুলি শোষণ করে এবং সেগুলিকে প্রধান সক্রিয় গ্যাস হিসেবে ব্যবহার করে বৈদ্যুতিক শক্তি নির্গত করে, যা মঙ্গল রোভার বা মঙ্গল হেলিকপ্টার দ্বারা ব্যবহার করা যেতে পারে।"

 চীনা বিজ্ঞানীদের দলটি মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল এবং তাপমাত্রা (যেমন শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে) অনুকরণ করে ল্যাবরেটরিতে এই ব্যাটারির কার্যকারিতা পরীক্ষা করেছে। প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে যে, প্রতিকূল পরিবেশেও এই ব্যাটারি স্থিরভাবে ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতিতে শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এটি মঙ্গলে দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন এবং মানব মিশনের জন্য একটি নিরবচ্ছিন্ন ও টেকসই বিদ্যুৎ সরবরাহের পথ প্রশস্ত করবে।

যদি এই দাবিগুলো বাস্তবে রূপ নেয়, তবে এটি মঙ্গল গবেষণায় এক বিশাল পদক্ষেপ হবে। নিজস্ব শক্তির উৎস থাকার অর্থ হলো মঙ্গল গ্রহে আরও বেশি সময় ধরে রোভার এবং ল্যান্ডার পরিচালনা করা যাবে, এমনকি ভবিষ্যতে মানব বসতি স্থাপনের ক্ষেত্রেও এটি একটি মৌলিক প্রয়োজনীয়তা পূরণ করবে। এই আবিষ্কার চীনের মহাকাশ গবেষণার সক্ষমতা এবং উদ্ভাবনী শক্তিকে আরও একবার প্রমাণ করল। এখন বিশ্ব তাকিয়ে আছে এই প্রযুক্তির বাস্তব প্রয়োগ এবং মঙ্গলে এর চূড়ান্ত সাফল্যের দিকে।

চীন সাম্প্রতিক বছরগুলিতে তার মঙ্গল অনুসন্ধানকে ত্বরান্বিত করেছে, তিয়ানওয়েন-৩ প্রোবটি ২০২৮ সালের কাছাকাছি উৎক্ষেপণ করা হবে এবং ২০৩১ সালের কাছাকাছি মঙ্গল গ্রহের নমুনা পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
 

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের