মঙ্গলবার,

১৭ জুন ২০২৫,

৩ আষাঢ় ১৪৩২

মঙ্গলবার,

১৭ জুন ২০২৫,

৩ আষাঢ় ১৪৩২

Radio Today News

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য মার্কিন গণমাধ্যমের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:০৪, ১৭ জুন ২০২৫

Google News
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য মার্কিন গণমাধ্যমের

গত সপ্তাহে ইরানের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক হামলা শুরুর কারণ হিসেবে ইসরায়েল দাবি করে ইরান দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে এবং সেই ফলাফল এড়াতে এই হামলাগুলো প্রয়োজনীয় ছিল। কিন্তু ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইসরায়েলের দাবি ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিশ্লেষণের মধ্যে বড় ধরনের মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান এখনো পারমাণবিক বোমা বানানোর সক্ষমতা অর্জন থেকে অন্তত তিন বছর দূরে। চারটি স্বতন্ত্র সূত্রের বরাতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ইরান এখনো সক্রিয়ভাবে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে নেই। বরং তারা মূলত পারমাণবিক গবেষণা ও জ্বালানিভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

ইসরায়েল সম্প্রতি ইরানের নাতাঞ্জ পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। হামলায় স্থাপনাটির কিছুটা ক্ষতি হলেও তেহরানের মূল ফোর্ডো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র অক্ষত রয়েছে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্দিষ্ট মার্কিন অস্ত্র এবং বিমান সহায়তা ছাড়া ফোর্ডোকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ক্ষমতা ইসরায়েলের নেই।

মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য নীতির সাবেক কূটনীতিক ব্রেট ম্যাকগার্ক এ প্রসঙ্গে বলেন, ইসরায়েল এসব স্থাপনা অকার্যকর করতে পারে, তবে পুরোপুরি ধ্বংস করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে জড়াতে হবে বা কূটনৈতিকভাবে কোনো সমঝোতা করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এ বিষয়ে তার স্পষ্ট অবস্থান জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা এতে জড়িত নই।’ তবে সংঘাতে জড়ানোর ইঙ্গিত দেন তিনি এবং বলেন, ‘দেরি হওয়ার আগেই ইরানের সংলাপে বসা উচিত।’

তবে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ভিন্ন মূল্যায়নের বিষয়টি নতুন নয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ ও বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থা বহু বছর ধরে ইসরায়েলের সঙ্গে তথ্য ভাগাভাগি করলেও তথ্য বিশ্লেষণে তারা প্রায়ই ভিন্নমত পোষণ করে।

ট্রাম্প প্রশাসনের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড গত মার্চ মাসে কংগ্রেসে বলেছিলেন, ‘আমাদের মূল্যায়নে এখনো মনে হয় না যে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে বা সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সর্বোচ্চ নেতা খামেনেয়ি ২০০৩ সালে স্থগিত করা পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি অনুমোদন করেননি।’

কয়েক মাস আগে গ্যাবার্ডের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কতটা কাছাকাছি, সে সম্পর্কে ব্যক্তিগত অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে ট্রাম্প এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের বলেন, ‘খুব কাছাকাছি।’ নেতানিয়াহুও জানান, তাদের ও মার্কিন গোয়েন্দাদের তথ্য থেকে পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ইরান।

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থাও (আইএইএ) জানায়, ইরান এ ধরনের অস্ত্র তৈরির জন্য ইউরেনিয়াম মজুদ করেছে, যা দিয়ে নয়টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করা যেতে পারে। তবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের পাশাপাশি বোমা তৈরির নকশা এবং ডেলিভারি সিস্টেম বা বহনের প্রযুক্তি তৈরি করাও দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল প্রক্রিয়া।

তবে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ইসরায়েলি হামলার কারণে হয়ত ভবিষ্যতে অস্ত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিকে ঠেলে দিতে পারে ইরানকে—যা এতদিনে তারা নেয়নি। তবে সাম্প্রতিক আঘাতে ইরানের প্রযুক্তিগত ও সামরিক সক্ষমতা কতটা অক্ষত রয়েছে তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। সর্বশেষ গোয়েন্দা তথ্যের সাথে পরিচিত একটি সূত্র জানিয়েছে, ইরান এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ফলে পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জন করার ক্ষমতা বা দক্ষতা দেশটির রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত নয়। 

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের