সোমবার,

৩০ জুন ২০২৫,

১৭ আষাঢ় ১৪৩২

সোমবার,

৩০ জুন ২০২৫,

১৭ আষাঢ় ১৪৩২

Radio Today News

স্নাইপার থেকে খাইবার-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের কমান্ডার: জেনারেল হাজিজাদেহ কে ছিলেন?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:৩১, ২৯ জুন ২০২৫

আপডেট: ২৩:৩৩, ২৯ জুন ২০২৫

Google News
স্নাইপার থেকে খাইবার-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের কমান্ডার: জেনারেল হাজিজাদেহ কে ছিলেন?

শহীদ মেজর জেনারেল আমির আলী হাজিজাদেহকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের অন্যতম বিশিষ্ট এবং প্রভাবশালী সামরিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হত যিনি ক্ষেপণাস্ত্র ও মহাকাশ ক্ষেত্রে দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

জেনারেল আমির আলী হাজিজাদেহ গত ১৩ জুনে ইরানের কিছু সামরিক, পারমাণবিক স্থাপনা এবং আবাসিক ভবনে ইহুদিবাদী সরকারের হামলায় শহীদ হন। পার্সটুডের আজকের নিবন্ধে জেনারেল হাজিজাদেহর জীবনী সম্পর্কে আমরা সংক্ষিপ্ত  আলোচনা করব।

আমির আলী হাজিজাদেহ ১৯৬১ সালের  ১৮ মে তেহরানে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার মূলত ইরানের কাজভিন প্রদেশের খোরামদাশতের বাসিন্দা। তার বাবা ছিলেন একজন হাতিয়ার বিক্রেতা এবং শিল্প সরঞ্জাম মেরামতকারী, এবং তার মা ছিলেন একজন গৃহিণী। হাজিজাদেহ বিবাহিত ছিলেন এবং তার তিন সন্তান ছিল।

হাজিজাদেহ সামরিক ব্যবস্থাপনা বা মহাকাশ সম্পর্কিত একটি বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। ১৯৮০ সালে যখন ইরানের বিরুদ্ধে ইরাকি বাথ সরকারের আরোপিত যুদ্ধ শুরু হয় তখন তিনি তৎক্ষণাৎ বাসিজ এবং আইআরজিসি-তে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সম্মুখ সারিতে যান। যুদ্ধের প্রথম দিকে সীমিত সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা সত্ত্বেও তার বুদ্ধিমত্তা,সহজ প্রযুক্তিগত বিষয়ে দক্ষতা এবং দলবদ্ধভাবে কাজ করার উচ্চ দক্ষতার কারণে তাকে প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এই পর্যায়ে তার দায়িত্বের মধ্যে ছিল স্থানীয় প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন,সম্মুখ সারির লজিস্টিক সহায়তা প্রদান এবং কখনো কখনো রাতে গোয়েন্দা টহল পরিচালনা করা। চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধের সময় আমির আলী হাজিজাদেহ পবিত্র প্রতিরক্ষার কিছু গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর স্নাইপার হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন।

চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের সমাপ্তির পর আমির আলী হাজিজাদেহ আরো বিশেষায়িত পথ বেছে নেন এবং বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর মহাকাশ বিভাগে প্রবেশ করেন। তিনি ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষেত্রে তার কর্মজীবন শুরু করেন এবং ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির জনক শহীদ হাসান তেহরানি-মোঘাদ্দামের একজন বিশিষ্ট ছাত্র হিসেবে বছরের পর বছর ধরে দেশের সংবেদনশীল এবং কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র কেন্দ্রগুলোতে ভূমিকা পালন করেন।

হাজিজাদেহ আইআরজিসিতে বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন যার মধ্যে রয়েছে আইআরজিসি মিসাইল কমান্ডের অপারেশন প্রধান,আইআরজিসি বিমান বাহিনীর কমব্যাট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কমান্ডার, আইআরজিসি বিমান প্রতিরক্ষার কমান্ডার, শহীদ মোন্তাজেরি ঘাঁটিতে আইআরজিসি মিসাইল কমান্ডের প্রতিষ্ঠাতা এবং আইআরজিসি এরোস্পেস ফোর্সের প্রথম কমান্ডার। আইআরজিসি এরোস্পেস ফোর্সের কমান্ডের সময় তিনি ইরানের প্রতিরক্ষা এবং সামরিক সক্ষমতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ইরানে সন্ত্রাসী অভিযানের পর দেইর এজরে আইসিস সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কমান্ড সেন্টারে হামলার নির্দেশ দেওয়া, জেনারেল কাসেম সোলাইমানি হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ইরাকে মার্কিন আইন আল-আসাদ ঘাঁটিতে হামলার নির্দেশ দেওয়া, "নূর-১" নামে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রথম সামরিক উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা, "প্রমিজ অফ ট্রুথ ১" এবং "প্রমিজ অফ ট্রুথ ২" অভিযানের সময় দখলকৃত অঞ্চলগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নির্দেশ দেওয়া,হাইপারসনিক ফাতাহ এবং ফাতাহ ২ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি ও উন্মোচন করা, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ইলেকট্রনিক ও সাইবার যুদ্ধক্ষেত্রের উন্নয়ন, ড্রোন বহর এবং যুদ্ধ ড্রোন সজ্জিত করার প্রযুক্তি উন্নয়ন করা তার কিছু কর্মকাণ্ড এবং অর্জন।

২০২৪ সালের অক্টোবরে এক অনুষ্ঠানের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক আয়াতুল্লাহ খামেনি ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর মহাকাশ বাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির আলী হাজিজাদেহকে বিজয়ের পুরষ্কার প্রদান করেন। "ট্রু প্রমিজ" অভিযানের জন্য এই পুরষ্কারটি দেওয়া হয়েছিল।

২০২৫ সালের ১৩ জুন ভোরে, ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পসের অ্যারোস্পেস ফোর্সের কমান্ডার জেনারেল হাজিজাদেহ ইসলামী ইরানের উপর ইহুদিবাদী সরকারের আক্রমণে শহীদ হন এবং তার মরদেহ তেহরানের বেহেশত জাহরা কবরস্থানে দাফন করা হয়।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের