
সাহস, ত্যাগ আর গৌরবের পথরেখা ধরে বিশ্বে প্রশংসিত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা। যে অধ্যায়ের শুরু হয়েছিল চার দশক আগে। ১৯৮৮ সালে ইরান ইরাকে সামরিক পর্যবেক্ষক দলে সেনাবাহিনীর ১৫ সদস্য পাঠানোর মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করে।
এর পর বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা ৪৩টি দেশ ও অঞ্চলে ৬৩টি জাতিসংঘ মিশন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে ১০টি দেশে ৫ হাজার ৮১৮ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত আছেন, তাদের মধ্যে ৪৪৪ জন নারী।
এ পটভূমিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস। এবারে প্রতিপাদ্য, ‘শান্তিরক্ষার ভবিষ্যৎ’। দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ ছাড়া বাণী দেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
রাষ্ট্রপতি বাণীতে বলেন, বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের বিভিন্ন যুদ্ধপীড়িত ও সংঘাতময় দেশে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বাণীতে বলেন, বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা সংঘাতময় বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও জরুরি মানবিক সহায়তা দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের কর্মদক্ষতা ও নিষ্ঠা যুদ্ধপীড়িত সাধারণ জনগণের আস্থা অর্জন করেছে; আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের মর্যাদাকে করেছে আরও সমুন্নত।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী বিশ্বের সব দেশের শান্তিরক্ষীদের অসামান্য অবদানকে এই দিনে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হবে। আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস পালনে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সকালে শান্তিরক্ষীদের স্মরণের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে ‘শান্তিরক্ষী দৌড়’ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করবেন। পরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আহত শান্তিরক্ষীদের জন্য সংবর্ধনা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ উপস্থাপনার আয়োজন করা হয়েছে।
শুরু থেকে এই পর্যন্ত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ১৬৮ শান্তিরক্ষী শহীদ হয়েছেন। এ বছর দু’জন আহত শান্তিরক্ষীকে সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে। আহত শান্তিরক্ষীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথি থাকবেন। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরার লক্ষ্যে বিশেষ জার্নাল ও জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে।
পুলিশ সদরদপ্তর সূত্র জানায়, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের পদযাত্রা সূচিত হয় ১৯৮৯ সালে নামিবিয়া মিশনের মাধ্যমে। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশের ২১ হাজার ৮১৫ শান্তিরক্ষী ২৪টি দেশে ২৬টি মিশনে পেশাদারিত্ব ও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশ্ব শান্তিরক্ষায় জীবন উৎসর্গ করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের ২৪ শান্তিরক্ষী। বর্তমানে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, সাউথ সুদান ও সেন্ট্রাল আফ্রিকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের ১২৮ পুরুষ ও ৭১ নারীসহ ১৯৯ শান্তিরক্ষী নিয়োজিত রয়েছেন।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম