
সুগন্ধিযুক্ত ও জিংক সমৃদ্ধ নতুন ধানের জাত জিএইউ-৩ কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। গবেষণার মাধ্যমে নতুন এই ধানের জাত জিএইউ-৩ উদ্ভাবন করেছে গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (গাকৃবি)। গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রজননবিদ অধ্যাপক ড. নাসরীন আক্তার আইভী।
প্রিমিয়াম কোয়ালিটির এই নতুন জাতটি সুগন্ধিযুক্ত ও জিংক সমৃদ্ধ হওয়ায় পুষ্টি এবং মানের দিক থেকে একটি ব্যতিক্রমী সংযোজন হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের সহকারী রেজিস্টার মো. আব্বাস উদ্দীন জানান, এ জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষিতে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হলো। এই নিয়ে গাকৃবি উদ্ভাবিত মোট জাতের সংখ্যা ৯০টি পৌঁছালো।
গাকৃবি উপাচার্য প্রফেসর ড. জি কে এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জিএইউ ধান-৩ শুধু একটি জাত নয়, এটি আমাদের কৃষি গবেষণার গৌরবময় প্রতীক। ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির জন্য এটি অপরিসীম অবদান রাখবে আমরা আশা করছি।
দীর্ঘ চার বছর গবেষণা ও ফলন পরীক্ষার পর ২০২১ ও ২০২২ সালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাঠে এ জাতটি পরীক্ষা করা হয়। পরবর্তীতে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি কর্তৃক প্রস্তাবিত ফলন পরীক্ষায় সন্তোষজনক ফলাফলের সুপারিশের প্রেক্ষিতে জাতীয় বীজ বোর্ড চলতি বছরের ২০ এপ্রিল জিএইউ ধান-৩ এর ছাড়পত্র দেয়।
জানা গেছে, এ ধানে আধুনিক উফশী ধানের সব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। চালে অধিক জিংক এবং লৌহ রয়েছে যা মানুষের শরীরকে একদিকে যেমন রোগ প্রতিরোধী করে জীবাণু ও ভাইরাস থেকে রক্ষা করে তেমনি শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরির মাধ্যমে শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে।
এছাড়া দানা চিকন ও লম্বা এ জিএইউ ধান-৩ তুলনামূলক কম সময়ের মধ্যে পরিপক্ব হয়, আমন মৌসুমে প্রায় তিন মাস এবং বোরো মৌসুমে সাড়ে তিন মাস পর উৎপাদন পাওয়া যায়। ফলে অল্প সময়ে অধিক ফলন পেয়ে কৃষকরা লাভবান হতে পারেন।
অন্যদিকে, এ ধানের গাছের আকার বড়, কাণ্ড মোটা ও কুশির সংখ্যা বেশি হওয়ায় এটি থেকে অধিক পরিমাণ খড় পাওয়া যায়। ফলে গবাদি পশুর খাদ্য চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাধারণ জাতের তুলনায় এটি গড়ে ১৫ শতাংশ বেশি ফলন দিতে সক্ষম, যা বাংলাদেশের মতো ধান নির্ভর কৃষিভিত্তিক দেশের উপযোগিতা অনেক। উৎকৃষ্টমানের এ জাতের ফলন হেক্টর প্রতি সাড়ে ৫ টন থেকে ৬ টন।
সার্বিক বিষয়ে জিএইউ ধান-৩ এর উদ্ভাবক ড. আইভী বলেন, আজকের বিশ্বে খাদ্যের পরিমাণের পাশাপাশি গুণগত মান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের অপুষ্টি ও খনিজ ঘাটতি দূর করতে জিঙ্কসমৃদ্ধ ধান উদ্ভাবন একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম