সোমবার,

০৬ মে ২০২৪,

২৩ বৈশাখ ১৪৩১

সোমবার,

০৬ মে ২০২৪,

২৩ বৈশাখ ১৪৩১

Radio Today News

গাইবান্ধায় জিনের বাদশা’র সন্ধান

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ৩০ নভেম্বর ২০২১

আপডেট: ০৭:৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২১

Google News
গাইবান্ধায় জিনের বাদশা’র সন্ধান

প্রতীকী ছবি

জিনের বাদশা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র গভীররাতে ঘুমান্ত মানুষকে টেলিফোনে ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি ও স্বর্ণলংকার হাতিয়ে নিচ্ছে। গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জে এই ধরনের পাঁচ থেকে ছয়টি প্রতারক চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রতিটি চক্রে ৫ থেকে ৬ জন প্রতারক রয়েছে। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তি থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণলংকার লুট ও চাঁদাবাজি করেছে। সম্প্রতি একটি অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) টিম অনুসন্ধান তদন্ত চালিয়ে এ প্রতারক চক্রকে চিহ্নিত করেছে। তাদের মধ্যে সম্প্রতি তিন প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গ্রেফতারকৃত প্রতারকরা পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার নানা কাহিনী বর্ণনা দিয়েছে। পিবিআইয়ের যশোর জেলা পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন ও ধানমন্ডিস্থ প্রধান কার্যালয় থেকে সোমবার এসব তথ্য জানা গেছে।

গ্রেফতারকৃত তিন প্রতারক হলো, সেলিম সরকার, দুদু মিয়া ও তাপস মহন্ত । তারা সবাই গাইবান্ধার বাসিন্দা।  তাদের স্বীকারোক্তিতে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। পলাতক অন্যদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পিবিআইয়ের তৎপরতা অব্যহত আছে। 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মানুষের কাছে গভীররাতে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে নিজেদেরকে কখনও ফেরেশতা, কখনও জিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে মানুষের সরলতার সুযোগে প্রতারণার মাধ্যমে নগদ অর্থসহ স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে দিচ্ছে।

অভিযুক্ত সেলিম সরকার তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর থেকে গত ৪ নভেম্বর গভীর রাতে সোহরাব হোসেন  নামে যশোরের এক ব্যক্তির মেয়েকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে নিজেকে ফেরেশতা পরিচয় দিয়ে  আল্লাহর কুদরত থেকে এসেছে বলে জানায়। তারপর ওই মেয়েকে জায়নামাজ ও কোরআন শরীফ নিয়ে বসতে বলেন। 

এক পর্যায়ের মেয়েটির মায়ের অসুস্থতা ও পরিবারের অনেক সমস্যার বিষয়ে উল্লেখ করে তার মনকে দুর্বল করে। এরপর বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে  বলে এই বিষয়ে যেন সে কাউকে কিছু না জানায়।  যদি কেউ জানে তাহলে মামলার বাদি সোহরাব হোসেনের মেয়েসহ পরিবারের সকলের মারাত্বক ক্ষতি হয়ে যাবে বলে  ভয় দেখায়।

মামলার বাদির মেয়ের কাছে অভিযুক্ত সেলিম সরকার জায়নামাজ ও উট কেনার কথা বলে বিকাশ নং- ০১৮৩২৫৮২৭০২, ০১৮৮৪৫২৮৮৭০ এর মাধ্যমে টাকা চায়। তখন মেয়েটি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করার জন্য ঘরে থাকা তার পিতার বেতন ও জিপিএফ এর উত্তোলনকৃত টাকা হতে অভিযুক্তদের দেওয়া মোবাইল নং- ০১৮৩২৫৮২৭০২, ০১৮৮৪৫২৮৮৭০ এ বিভিন্ন সময়ে সর্বমোট ৯২ হাজার ৫০০ (বিরানব্বই হাজার পাঁচশত) টাকা বিকাশ নাম্বারের মাধ্যমে পাঠায়।

অভিযুক্তরা বাদির মেয়েকে যশোর কোতয়ালী থানাধীন পালবাড়ী মুর্তির মোড়ে সিঙ্গার কোম্পানীর শো-রুমের কাছে বিদ্যুতের খাম্বার গোড়ায় যেতে বলে। সেখানে চিপসের প্যাকেটের ভিতরে একটি স্বর্ণের মুর্তি আছে বলে জানায়।  ওই মুর্তিটি বাদির মেয়েকে বাসায় নিয়ে যেতে বলে। আর স্থানীয় খয়েরতলা মাধ্যমিক স্কুলের গেটের ভিতরে মেহগনি গাছের গোড়ায় পরিবারের সদস্যদের ব্যবহৃত সকল স্বর্ণের গহনা রেখে দিতে বলেছে।
 
স্বর্ণলংকার রেখে রেখে যাওয়ার সময় যেন পেছন ফিরে না তাকায় এই জন্য সতর্ক করে দেয়। যদি পেছনে তাকায় তাহলে আগুনের ঝলক পড়ে পুরো শরীর ঝলসে যাবে বলে ভয় দেখায়। 

অভিযুক্ত সেলিম সরকারের কথায় ও ভয়ে ভীত হয়ে বাদীর মেয়ে প্রতারকদের কথামত বিদ্যুতের খাম্বার গোড়া থেকে পটেটো চিপসের প্যাকেটে থাকা কথিত স্বর্ণের মুর্তি বাসায় নিয়ে যায়। এরপর সরল বিশ^াসে পরিবারের সদস্যদের স্বর্ণের ৪টি কানের দুল ওজন ২ ভরি ২ আনা, স্বর্ণের গলার চিক ২টি। ওজন ১ ভরি ১২ আনা, ১টি স্বর্ণের আংটি ওজন ৮ আনা সর্বমোট ওজন অনুমান ৪ ভরি স্বর্ণলংকার  কাগজে মুড়ে রেখে আসে।

পরবর্তীতে বাদির মেয়ে আসামীদের মোবাইলে ফোন করলে অভিযুক্তদের দেয়া সকল মোবাইল নম্বর বন্ধ পায়। ঘটনার বিষয়ে মেয়েটি তার পিতাকে জানালে সে কথিত স্বর্ণের মুর্তিটি দেখে বুঝতে পারে স্বর্ণের রঙের মুর্তিটি আসলে পিতলের তৈরী। প্রতারক সেলিম সরকার পরিকল্পিত ভাবে বাদীর মেয়ের সঙ্গে কথা বলে তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মোবাইল ফোনে টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে।

অভিযুক্ত প্রতারক সেলিম সরকার এবং দুদু মিয়া বাদির মেয়ের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া স্বর্ণ ও টাকা পয়সা ভাগ করে নেয়। আর প্রতারণাপূর্বক আদায়কৃত স্বর্ণ অভিযুক্ত তাপস মহন্তর নিকট বিক্রয় করে বলে প্রাথমিক ভাবে স্বীকার করেছে।

অভিযুক্ত মো. সেলিম সরকার, দুদু মিয়া ও তাপস মহন্ত আদালতে নিজেদেরকে জড়িয়ে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আলোচিত মামলাটি এখনো তদন্ত অব্যহত আছে।

পিবিআইয়ের যশোর জেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত এসপি রেশমা শারমিন জানান, পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারের গাইডলাইন ও আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ প্রতারক চক্রের সন্ধান পেয়েছে।  প্রতারণায় জড়িত অন্য সদস্যদেরকে গ্রেফতারে পিবিআইয়ের অভিযান অব্যাহত আছে।
 

রেডিওটুডে নিউজ/ইকে

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের