সোমবার,

০৬ মে ২০২৪,

২৩ বৈশাখ ১৪৩১

সোমবার,

০৬ মে ২০২৪,

২৩ বৈশাখ ১৪৩১

Radio Today News

১০ হাজার লালিমা বদলে দিয়েছে কৃষক বেলালের ভাগ্য

সিদ্দিক আলম দয়াল, গাইবান্ধা

প্রকাশিত: ০২:৩৮, ২ জানুয়ারি ২০২২

আপডেট: ০২:৩৮, ২ জানুয়ারি ২০২২

Google News
১০ হাজার লালিমা বদলে দিয়েছে কৃষক বেলালের ভাগ্য

নিজের জমির ফসল হাতে কৃষক বেলাল হোসেন

লালিমা বা লাল বাধাকপি। সারা বছর অন্যান্য সবজি চাষের পাশাপাশি এবার এর নতুন বীজ রোপন করেছেন কৃষক বেলাল। ফলন ও দাম দুটোই বেশ ভালো। ওজনে নয়, পিস হিসেবে বিক্রি করে লাভের অংশ গুনছেন ২ লাখ টাকা।

গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের ভাষারপাড়ায় বাড়ি কৃষক বেলাল হোসেনের। দুই মেয়ে আর স্ত্রী সহ পাঁচজনের সংসার। নিজের জমি বলতে সামান্য। তাই অন্যের জমি নিয়ে চাষাবাদ করেন। 

কৃষক বেলাল মিয়া বলেন, জমিতে কাজ করি আমি, আমার স্ত্রী শিল্পী, মেয়ে সিনথি, বন্যা, ছেলে সিহাব সহ সবাই। সময় হলে মেয়েরা বই-খাতা নিয়ে কলেজে যায়। তারপর আবার জমির আইলে বাপের সাথে কাজ করে। সে কারনে আমার কামলা খরচটা কম হয়। একটার পর একটা সবজি চাষ করেন জমিতে। কখনো ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, মরিচ, আলু, টমোটে, লাউ, সিম, ক্যাপসিক্যাম, মিষ্টি কুমড়া সহ বারো মাস সবজির চাষ করে প্রতি বছর অন্তত ২ লাখ টাকা ঘরে তোলেন। লাভের টাকায় তিনি বাড়িঘর করেছেন। মেয়েদের কলেজে পড়ালেখা শেখাচ্ছেন। আর নিজের পকেট খরচ, বাজার-হাট করে রাজার হালে সংসার চালিয়ে হাতে রাখেন নগদ টাকা, কখন কি লাগে।

ঢাকায় গিয়ে বিভিন্ন বীজ ভান্ডারে খোঁজ করে ভিন্ন কিছু চাষ করার। মনে মনে ভাবেন জমিতে এবার ভিন্ন কিছু চাষ করতে হবে । যে কথা সেই কাজ। এবার তাক লাগিয়ে দিতে চান মানুষকে । সেই সাথে নিজের স্বপ্নের বাস্তবায়ন । মেয়েদের বিয়ে দিতে হবে । তখন টাকার দরকার হবে। ঝুঁকি নিয়ে লাভের স্বপ্নে বিভোর হয়ে ঢাকায় দিয়েছেন কৃষক বেলাল হোসেন। তারপর বীজ ভান্ডার থেকে খুঁজে পেয়েছেন লাল বাঁধাকপি লালিমার। তার কাছেই শোনা গেলো এই বাঁধাকপির জন্ম নাকি জাপানে। 

কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আকবর হোসেন জানান, গাইবান্ধায় এর আগে কখনো লাল বাঁধাকপি দেখা যায়নি কোথাও। তারপর তিনি বীজ বপন করেন তার জমিতে। জমি থেকে চারা বড় হলে ১০ হাজার চারা বপন করেন তার দুটি জমিতে। অল্প সময়ে লাল বাঁধাকপি তরতাজা হয়ে সারিসারি লাল বাঁধাকপি জমি জুড়ে ছেয়ে যায়। উপড়ের পাতা ছিড়ে ফেললেই বের হয়ে আসে লাল টসটসে বাঁধাকপি । জমি দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। সবুজের ভেতরে লাল কপি গাইবান্ধায় এই প্রথম। লাল বাঁধাকপি দেখতে দুরদুরান্ত থেকে লোকজন আসেন । দেখেন চারিদিক ঘুরে ফিরে ।

ভাষারপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান জানান, কৃষক বেলাল আমাদের গ্রামের গর্ব। বেলাল বারো মাসে ১৩ ফসলের আবাদ করেন। সে শুধু সবজি চাষ করেই নিজেকে কৃষক হিসাবে পরিচিতি করতে পেরেছে। লোকজনের মুখে মুখে বেলালের নাম ।  এ মাসের শেষ দিকে কৃষক বেলালের কপি বিক্রির উপযোগী হয়েছে। প্রতিদিন বস্তায় ভরে কপি নিয়ে যায় ভ্যানে করে। আড়তে নিয়ে যেতেই প্রতি কপি পিস ৩০ থেকে ৪০ টাকা হিসাবে পাইকারী বিক্রি করেন। তারপর টাকা নিয়ে আসেন বাড়িতে । এভাবে তিনি প্রায় প্রতিদিন জমি থেকে তুলে লালিমা বিক্রি করে অন্তত ১২ থেকে ২ হাজার টাকা আয় করেন। 

কৃষক বেলাল হোসেন জানান, এই লালিমা বিক্রি করে তার হাতে লাভ আসবে অন্তত ২ লাখ টাকা । এই টাকায় মেয়ের বিয়েতে খরচ করবেন বলে ভাবছেন । 

ফুলছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সেলিম পারভেজ জানান ,বন্যা দুর্গত এলাকা ফুলছড়ির মাটি সোনার মতো। এই মাটিতে সোনা ফলে। তিনি বলেন ,আমার জনমে আমি লাল বাঁধা কপি দেখিনি । আমার বাপ দাদাও দেখেনি কিন্তু আমি দেখলাম আমাদের ফুলছড়ির মাটিতে হয়েছে লাল বাঁধাকপি। কৃষক বেলাল হোসেনের মুখে নাম শুনেছি তার নাম লালিমা। তার সংসারের সচ্ছলতা ফিরেছে লাল বাঁধাকপি বিক্রি করে।
 
 

রেডিওটুডে নিউজ/ইকে

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের