আলফা কনডে (ফাইল ছবি)
আলফা কনডে। আফ্রিকার দারিদ্রপীড়িত দেশ গিনির সাবেক প্রেসিডেন্ট। দাম্ভিক কনডে সাংবাদিকদের প্রায়ই বলে বেড়াতেন তার বিকল্প শাসক নেই। তিনিই একমাত্র নেতা যিনি গিনিকে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম। আলফা কনডে ভেবেছিলেন তিনি আজীবন ক্ষমতায় থাকবেন, তাকে কেউ ক্ষমতাচ্যূত করতে পারবে না। এমনকি সেনাবাহিনীও তাকে সরাবে না, সরাতে পারবে না।
কিন্তু গত ৫ সেপ্টেম্বর কনডে ভুল প্রমাণিত হন। যে সেনাবাহিনীর ওপর ভরসা রেখে তিনি কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠেছিলেন, তারাই তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ছবিতে সেনাসদস্য পরিবেষ্টিত কনডেকে খালি পায়ে সোফায় বসে থাকতে দেখা যায়।
সেদিন রাজধানী কনেকরি’র প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে ঢুকে পড়েছিল দেশটির এলিট ফোর্সের সদস্যরা। ঘন্টাখানেক পরই রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের পর্দায় হাজির হন গিনির সেনা কর্মকর্তা কর্নেল মামাদি দুম্বুইয়া। বিশ্ব জানতে পারে অভ্যুত্থানের নেপথ্য নেতাকে। গিনির নতুন নেতা জানালেন প্রেসিডেন্ট আলফা কনডেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং সংবিধান বাতিল করা হয়েছে। কনডেকে কেন অপসারণ করা হলো সেদিন তার ব্যাখ্যাও দেন সেনা কর্মকর্তা মামাদি। তিনি বলেন, কোন একক ব্যক্তির হাতে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়া হবে না। রাজনীতি মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করবে তা হতে দেওয়া হবে না, বরং জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। দেশকে রক্ষা করা একজন সৈনিকের কর্তব্য।
সেনা কর্মকর্তার এ ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় দেশটির ভেতরের ও বাইরের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে। গত এক দশকের মধ্যে অ্যালুমিনিয়ামের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। কারণ অ্যালুমিনিয়াম তৈরিতে ব্যবহৃত হওয়া বক্সাইটের সর্বোচ্চ মজুদ রয়েছে গিনিতে। তবে খনির কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন গিনির নতুন নেতা।
আলফা কনডে হলেন গিনির প্রথম গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট। অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে ২০১০ সালে ক্ষমতায় আসেন তিনি। তখন অনেকেই ভেবেছিলেন হয়তো এবার গিনিতে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটবে। তার আগের দুই শাসক মোট ৫০ বছর ক্ষমতা দখল করে রেখেছিলেন।
২০১৫ সালে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হন কনডে। গিনির সংবিধান অনুযায়ী ,পরপর দুবার কেউ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে, তৃতীয়বার তিনি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে পারেন না। কিন্তু তিনিও পূর্বসূরীদের মত ক্ষমতার লোভ ছাড়তে পারলেন না। বিতর্কিত গণভোটের মাধ্যমে সংবিধানে সংশোধনী আনেন কনডে। ফলে তৃতীয় দফায় তাঁর প্রেসিডেন্ট হবার পর খুলে যায়। এরপর এই সংশোধনীর ওপর ভর করেই ২০২০ সালে বিতর্কিত এক নির্বাচনের মাধ্যমে তৃতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন আলফা কনডে। গণভোটকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে গিনিতে। দুই দফা গণবিস্ফোরণের সময় কয়েকশ' মিছিলকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ফলে জোর করে ভোটে জিতলেও জনপ্রিয়তায় ব্যাপক ধস নামে কনডের। সবশেষ এই অস্থিতিশীলতারই সুযোগ নিলো সেনাবাহিনী।
কর্নেল মামাদি বলছেন, গিনিতে দুর্নীতি, দুঃশাসন, ক্ষমতার অপব্যবহার, দারিদ্র যেভাবে বাড়ছিল, তাতে সংস্কার জরুরী হয়ে পড়েছিল। কনডেকে অপসারণ করতে গিয়ে বড় কোন প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়নি সেনাবাহিনীর এলিট ফোর্সকে। বরং অভ্যুত্থানের পর সেনাবাহিনীকে স্বাগত জানিয়ে রাজপথে মিছিল করতে দেখা গেছে গিনির সাধারণ মানুষকে।
রেডিওটুডে নিউজ/জেএফ