বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যখন মাত্র দেড় মাস বাকি, তখন ঢাকা সফর করলেন আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফার্স্ট পলিটিক্যাল ডিভিশনের মহাপরিচালক নূর আহমাদ নূর।
এক সপ্তাহের সফরকালে তিনি বাংলাদেশ খেলাফতে মসলিসের আমির মামুনুল হকসহ ইসলামপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, যা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হতে দেখা যাচ্ছে।
এছাড়া ঢাকা ও এর আশেপাশের বিভিন্ন এলাকার বেশকিছু মাদ্রাসাও পরিদর্শন করতে দেখা গেছে মি. নূরকে।
এর আগে, গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ইসলামপন্থী সাতজন নেতা ও পণ্ডিত বাংলাদেশ থেকে আফগানিস্তান সফরে গিয়েছিলেন, যাদের মধ্যে খেলাফত মজলিসের আমির মি. হকও ছিলেন।
সফর নিয়ে তখন তিনি জানিয়েছিলেন, তালেবান সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও কর্মকর্তার সঙ্গে তাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তালেবান সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলেও জানিয়েছিলেন মি. হক।
ওই ঘটনার তিন মাসের মাথায় তালেবান সরকারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ঢাকা সফর করলেন।
তালেবান সরকারের পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে মি. নূরকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অন্যদেশের কাছ থেকে তালেবান সরকারের পক্ষে স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
এরই অংশ হিসেবে গত জুলাইয়ে মি. নূর পাকিস্তান সফরেও গিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি ছিল রাষ্ট্রীয় সফর।
তবে বাংলাদেশে তাকে সরকারিভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র। ফলে তার এই সফর 'ব্যক্তিগত' বলে জানানো হয়েছে।
তবে তালেবান সরকারের এই শীর্ষ কর্মকর্তা কূটনৈতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন কি-না, সে বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য যে, ২০২১ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর রাশিয়া ছাড়া বিশ্বের আর কোনো দেশ আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি।
তবে স্বীকৃতি না দিয়েও অনেক দেশ তাদের সঙ্গে আর্থিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে, ভারত যাদের মধ্যে অন্যতম।
সম্প্রতি রাষ্ট্রীয়ভাবে ভারত সফরও করতে দেখা গেছে তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকিকে।
"ভারতের পর তালেবান সম্ভবত এখন বাংলাদেশের সঙ্গেও সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাচ্ছে। তাদের কর্মকর্তার ঢাকা সফর সেটারই অংশ বলে আমি মনে করি," বিবিসি বাংলাকে বলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবির।
বৈঠক ঘিরে কৌতুহল
গত ২১শে ডিসেম্বর রাত পৌনে ১২টার দিকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে করে তালেবান সরকারের অন্যতম এই কর্মকর্তা ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
ঢাকায় আসার পর তালেবান সরকারের কর্মকর্তা নূর আহমাদ নূর বেশ কয়েকটি কওমি মাদ্রাসা পরিদর্শন করেন, যেগুলোর একটি মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা।
গত ২৫শে ডিসেম্বর তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত ওই মাদ্রাসায় যান। সেখানে মাদ্রাসাটির শিক্ষক ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হকের সঙ্গে মি. নূরের বৈঠক হয়।
বৈঠকে ঠিক কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সেটি জানার জন্য মি. হকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
ওই বৈঠকে মাদ্রাসাটির আরেক শিক্ষক ও কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের মহাসচিব মাহফুজুল হকও উপস্থিত ছিলেন।
বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনিও বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে তালেবান সরকারের কর্মকর্তার সঙ্গে মামুনুল হকের বৈঠকটির সঙ্গে বাংলাদেশ খেলাফতে মসলিসের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব জালালুদ্দীন আহমদ।
"উনি দলের প্রতিনিধি হিসেবে ওই বৈঠক করেননি," বলেন মি. আহমদ।
"যেহেতু আফতানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ওই মাদ্রাসা পরিদর্শনে গেছেন, সেখানে তার সঙ্গে একজন শিক্ষক হিসেবে আমাদের দলের আমিরের বৈঠক হয়েছে," যোগ করেন তিনি।
মি. নূরের সফরের বিষয়ে আগে থেকে কিছু জানতেন না বলেও দাবি করেন খেলাফত মসলিসের মহাসচিব।
"কে আনছে, কারা আনছে- এগুলোর ব্যাপারে আমি কিছুই অবহিত না," বলেন মি. আহমদ।
মি. নূরের বাংলাদেশ সফরের উদ্দেশ্যের বিষয়ে ঢাকায় অবস্থিত আফগান দূতাবাসের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
ঢাকায় নামার পর মি. নূরকে যারা স্বাগত জানিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশ-আফগানিস্তান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (বিএসিসিআই) চেয়ারম্যান আবু সায়েম খালেদ।
তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে, তালেবান সরকারের কর্মকর্তার বাংলাদেশ সফরের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো দু'দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ।
তবে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া গেছে।
নূর আহমাদ নূরের ঢাকা সফর নিয়ে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো থেকে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ না করার কারণে বিভিন্ন মহলে নানান সন্দেহ ও সংশয় তৈরি হয়েছে।
"এখন সরকারের উচিত বিষয়টি পরিষ্কার করা," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবির। সূত্র: বিবিসি বাংলা
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

