বৃহস্পতিবার,

২৮ মার্চ ২০২৪,

১৪ চৈত্র ১৪৩০

বৃহস্পতিবার,

২৮ মার্চ ২০২৪,

১৪ চৈত্র ১৪৩০

Radio Today News

রুপগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের যথেষ্ট ক্ষতিপূরণ দিতে হবে: বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০১:৫৮, ১৬ জুলাই ২০২১

আপডেট: ০১:৫৯, ১৬ জুলাই ২০২১

Google News
রুপগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের যথেষ্ট ক্ষতিপূরণ দিতে হবে: বিএনপি

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান

কল-কারখানার দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের যথাযথ ক্ষতিপুরণ নির্ধারণে ‘জাতীয় মানদন্ড আইন’ প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জে হাসেম ফুড কোম্পানির জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নিহত-আহত শ্রমিকদের পর্যাপ্ত ক্ষতি পূরণের দাবি জানাতে গিয়ে দলের পক্ষ থেকে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এই দাবি জানান। গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
তিনি বলেন, একটা ঘটনা ঘটবে, আমরা কয়েকদিন হৈচৈ করব তারপর সবাই আবার চুপ করে যাবো। সেটা না, এটার একটা স্থায়ী সমাধানের জন্য আমরা প্রস্তাব করেছি যে, একটা জাতীয় মানদন্ড আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হওয়া দরকার যে, এই ধরনের দুর্ঘটনায় শ্রমিকরা কি ক্ষতিপূরণ পাবে, আহতরা কি ক্ষতিপূরণ পাবে, নিহতরা কি ক্ষতিপূরণ পাবে এবং মালিকের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা হবে এবং যারা এটার পরিদর্শনের দায়িত্বে তাদের কোনো অবহেলা থাকলে তার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা হবে- সবকিছু সেটার মধ্যে থাকা দরকার। যাতে করে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থ-আইএলও কনভেনশন ১২১, তার প্রাসঙ্গিক রেকমেন্ডেশন, ১৯৫৮ সালের মারাত্মক দুর্ঘটনা আইন এবং রানা প্লাজার (সাভার) দৃষ্টান্ত অনুযায়ী এই জাতীয় মানদন্ড প্রণয়ন করার জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, মনে রাখতে হবে যে, মানুষ কাজ করতে যায় জীবন বাঁচানোর জন্য, জীবিকা অর্জনের জন্য। সেখানে কাজ করতে গিয়ে যদি মানুষকে অকালে জীবন দিতে হয় তাহলে তো সেটা কারখানা না, ওটা একটা মৃত্যুকূপ। এটা তো কোনো রাষ্ট্র মেনে নিতে পারে না, মানা উচিত না। অতত্রব এটা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। আমরা আশা করবো রাষ্ট্রে সে দায়িত্ব পালন করবে।
তিনি বলেন, পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী হাসেম ফুড কোম্পানির ৯৯৩ কোটি টাকাসহ পুরো সজীব গ্রুপের ব্যাংক ঋণের পরিমান প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।
অথচ এই কারখানার শ্রমিকেরা গত ২ মাস ধরে বেতন ও ওভারটাইম ভাতা না পাওয়ায় বিক্ষোভ করেছে এবং পুলিশের মধ্যস্থতায় গত ৫ তারিখ আংশিক পাওনা পরিশোধের কথা থাকলেও তা করা হয়নি বলে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। এই অবস্থায় শ্রমিকেরা অকালে নিহত হলেন এবং গতকাল পত্রিকায় এসেছে তাদের স্বজনেরা খালি হাতে ফিরে গেছেন।এমন অমানবিক ঘটনা নিন্দনীয় এবং বিচারযোগ্য অপরাধ।
জানা গেছে, চাপের মুখে গতকাল কিছু শ্রমিক জুন মাসের বেতন পেয়েছেন। অন্যদেরে প্রাপ্যতা অনিশ্চিত। এখনো ওভার টাইম এবং বোনাস দেয়া হয়নি। অবিলম্বে সকল শ্রমিকদের বেতন, ওভারটাইম ও ঈদ বোনাস প্রদানের জন্য আমরা দাবি জানাচ্ছি।
নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে গত মঙ্গলবার রুপগঞ্জের ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন করেন বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। সেই কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সেখানে গিয়ে কর্মহীন শ্রমিকদের কাজের প্রত্যাশায় দাবি জানাতে দেখেছি।
আমরা মনে করি, দীর্ঘদিন বেতনহীন এসব শ্রমিকদের অবিলম্বে প্রাপ্য পরিশোধ করা জরুরী। একই সাথে আমরা চাই, সজীব গ্রুপের প্রত্যেকটি কারখানা যথাযথ পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য ও নিরপত্তা ব্যবস্থা কর্মোপযোগী করে যত দ্রুত সম্ভব শ্রমিকদের কাজে ফেরার পরিবেশ নিশ্চিত করা দরকার। যাতে তারা পরিশ্রম করে জীবিকা অর্জন করতে পারে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, জাতীয় ভবন নীতিমালা অনুযায়ী এই আয়তনের ভবনে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচটি সিঁড়ি থাকা জরুরী ছিলো। অথচ ছিলো মাত্র ২টি।
পুড়ে নিহত হওয়া ৪৯টি লাশই পাওয়া গেছে ভবনের চতুর্থ তলায়। সেখানে কর্মরতদের কাছে জানা যায় যে, চতুর্থ তলার গেট বন্ধ ছিলো বলে কেউ বের হতে পারেনি। বিষয়টি উপযুক্ত তদন্ত আমরা দাবি করছি।
১১ বছর ৪ মাস বয়সের হাসনাইন, ১২ বছর বয়সের শান্তা, ১৪ বছর বয়সের মুন্না, ১৫ বছর বয়সের শাহানা ও নাজমুল, ১৬ বছর বয়সের ফয়সাল, ১৭ বছর বয়সের ইউসুফ ও আল আমীনের মতো শিশু-কিশোরসহ ১৬ জন নারী ও ২৩ জন পুরুষ শ্রমিকের অগ্নিদগ্ধ হয়ে এমন মর্মান্তিক ও অকাল মৃত্যুতে এবং ১২ বছরের রুমা ও ১৫ বছরের নদিয়ার মতো অসংখ্য আহতদের শোকার্ত পরিবারের সদস্যদের শান্তনার ভাষা আমাদের নেই। গত পরশু ওই কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে শোকার্ত পরিবারের আহজারি এবং বেতন না পাওয়া কর্মহীন শ্রমিকদের দুরাবস্থা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি।
তিনি জানান, শিশুশ্রম আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ। আমরা জেনেছি, সেখানে প্রচুর শিশু শ্রমিক ছিলো। বেতন পায় না অনেকদিন। এটা নিয়ে তারা বিক্ষোভ করেছে রাস্তায়।
পুলিশ গিয়ে মালিকপক্ষের সাথে আলোচনা করে, সমঝোতা করে বলা হয়েছিলো যে, ৫ তারিখে আংশিক পরিশোধ করা হবে। সেটাও ৫ তারিখে পরিশোধ করা হয়নি। ৮ জুলাই বিনা বেতনে চলে গেলো আমাদের এই ভাই-বোনেরা।
যারা মারা গেছেন তাদের আত্বীয়স্বজনরা খালি হাতে ফিরে গেছেন। মালিকপক্ষ থেকে নাকী বলা হয়েছে যে, তারা তাদের কার্ড দেন বা পরিচিতির ইয়ে দেন। কোথাও পাবে সেই কার্ড। যারা মারা গেছে তারা তো কার্ডসহ জ্বলে-পুড়ে চলে গেছে। এটা চেয়ে যদি আপনি বকেয়া পরিশোধ না করেন তার মানে আপনি পেমেন্ট করতে চাচ্ছেন না।

রেডিওটুডে নিউজ/এসআই

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের