বুধবার,

০৮ মে ২০২৪,

২৫ বৈশাখ ১৪৩১

বুধবার,

০৮ মে ২০২৪,

২৫ বৈশাখ ১৪৩১

Radio Today News

পায়রা ‘শান্তির প্রতীক’, সেতুর কারনে জনগণের শান্তি আসবে: প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৭:০২, ২৪ অক্টোবর ২০২১

আপডেট: ২৩:৪৪, ২৪ অক্টোবর ২০২১

Google News
পায়রা ‘শান্তির প্রতীক’, সেতুর কারনে জনগণের শান্তি আসবে: প্রধানমন্ত্রী

গণভবনে পায়রা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বরিশাল-পটুয়াখালীর মধ্যে সংযোগ কেবলমাত্র দুই জেলার মধ্যেই নয়। এটি পুরো দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক যোগসূত্র ঘটাবে। পায়রা বন্দরের মাধ্যমে এ অঞ্চলের যে অগ্রগতি সেটি পায়রা সেতুর ওপর দিয়ে তরান্বিত হবে। পায়রা শান্তির প্রতীক। সেতু হওয়ার পর এ অঞ্চলে আর্থিক উন্নতি হবে। এর ফলে মানুষের মধ্যে শান্তি আসবে। এ জন্যই আমি নামটি পছন্দ করেছি। এর মাধ্যমে সেতুর পাশাপাশি নদীটিরও একটা পরিচিতি হবে।  

রোববার গণভবনে পায়রা সেতুর উদ্বোধন ও ঢাকা-সিলেট ও সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপণ অনুষ্ঠানে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বরিশাল বিভাগে কেবল রাস্তাই আমরা করিনি সেখানে ক্যান্টনমেন্ট, বিদ্যুৎকেন্দ্র, বীজ গবেষণা, পায়রা পোর্টসহ অনেক কিছুই আমরা করে দিয়েছি। বরিশাল-পটুয়াখালীর সঙ্গে একটি সমস্যা ছিলো ফেরি পারাপার। আমরা মনে আছে, ৮১ সালে আমি সন্তানদের নিয়ে কুয়াকাটা যাবার জন্য রওয়ানা দেই। কিন্তু এতো ফেরি যে আমরা ক্লান্ত হয়ে পটুয়াখালী থেকে আবার ফিরে আসি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতার পর দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন শুরু করেন। সে সময় বেশ কিছু সেতু নির্মান করে তিনি আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সূচনা করেছিলেন। অথচ আন্তর্জাতিক মহল থেকে শঙ্কা ছিলো একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ। 

৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর ২১ বছর দেশের সমস্ত অগ্রযাত্রা থেমে যায়। আমরা যখন ক্ষমতায় আসি তখন বরিশালের যোগাযোগে গুরুত্ব দেই। গাবখান সেতু আমি শুরু করে যাই কিন্তু উদ্বোধন করে যেতে পারি নাই। পরবর্তী সরকার সেটি করে। 

এদিকে আজ রোববার থেকে পায়রা সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে নির্বিঘ্নে ভ্রমণের মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠলো সমুদ্রকন্যা কুয়াকাটা। বরিশাল থেকে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত বা পায়রা সমুদ্রবন্দর যেতে আর কোনো ফেরি থাকছেনা। ফলে এ রুটে সময় কমে বরিশাল থেকে কুয়াকাটা পৌঁছা যাবে মাত্র ২ ঘণ্টায়। পর্যটক আকর্ষণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরো এগিয়ে যাবে বরিশালের ছয় জেলাসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চল। 

এছাড়াও আগামী বছল পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানী ঢাকার থেকে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ও পায়রা সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এ রুটে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যেতে ৪ ঘণ্টার সময় বাঁচিয়ে পৌঁছা যাবে মাত্র ৫ ঘণ্টায়।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী সেতুর আদলেই এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল পদ্ধতিতে পায়রা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর ১৬৭টি বক্স গার্ডার সেগমেন্টের কারণে দূর থেকে দেখলে মনে হয় এটি শূন্যে ভেসে আছে। ১ হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতুটিতে বসানো রয়েছে ১৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের বেশ কিছু পাইল। যা পাইল পদ্মা সেতুতে বসানো পাইলের থেকেও অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। ৩২টি স্প্যানের মূল সেতুটি বিভিন্ন মাপের ৫৫টি টেস্ট পাইলসহ ১০টি পিয়ার পাইল ও পিয়ার ক্যাপের ওপর স্থাপিত।

পায়রা সেতু প্রকল্প কর্তৃপক্ষ জানায়, এই সেতু নির্মাণে ১ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে ৮২ শতাংশ অর্থায়নে ছিল কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এ্যাপেক্স ফান্ড। ২০১৩ সালের ১৯ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের লেবুখালী ফেরিঘাটের দক্ষিণে এই সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।

২০১৬ সালের ২৪ জুলাই সেতুর কাজ শুরু হয়। ৩ দফা সময় বাড়িয়ে ৮ বছরে এ সেতুর কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। জয়েন্ট ভেঞ্চারে সেতু নির্মাণে লিডিং ঠিকাদার চীনের লো ঝিয়াং কোম্পানি। সেতুর অধিকাংশ মালামালও এসেছে চীন থেকে।

সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী আব্দুল হালিম বলেন, সর্বোচ্চ জোয়ারেও নদীর উপরিভাগ থেকে ১৮.৩০ মিটার উঁচুতে থাকবে এ সেতুটি। ৪ লেনবিশিষ্ট এই সেতুর উভয় পাশে নির্মিত হয়েছে ১ হাজার ২৬৮ মিটার দৈর্ঘ্যের অ্যাপ্রোচ রোড। সেতুতে মনোরম আলোকসজ্জার পাশাপাশি নান্দনিকভাবে রং করা হয়েছে। সেতুর আলোতে ঝলমল করছে পায়রা নদী-সংলগ্ন এলাকা। দেশে এই প্রথম পায়রা সেতুতে বসানো হয়েছে হেলথ মনিটরিং সিস্টেম। ভূমিকম্প, বজ্রপাত এবং ওভারলোডেড গাড়ির ক্ষেত্রে এই সিস্টেম আগাম সংকেত দেবে। ফলে সেতুটি বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে- যোগ করেন প্রকল্প পরিচালক আব্দুল হালিম। 

রেডিওটুডে নিউজ/এমএস/এসএস

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের