
বাংলাদেশে ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনকে "একটি ঐতিহাসিক বিপ্লব" হিসেবে আখ্যায়িত করে বক্তারা বলেছেন, এই দিন স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার নতুন সূচনা করেছে।
শনিবার (১৪ জুন) যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরে অনুষ্ঠিত 'ইউএস-বাংলাদেশ অ্যাডভোকেসি কাউন্সিল (UBAC)' আয়োজিত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরে 'ইউএস-বাংলাদেশ অ্যাডভোকেসি কাউন্সিল' আয়োজিত "দ্য ফিউচার ডেমোক্রেসি: দ্য রুল অব ইন্টেরিম গভর্ণমেন্ট ইন বাংলাদেশ" শীর্ষক আলোচনায় এমন মন্তব্য করেন মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা, এবং মার্শা বার্নিকাট।
ড্যান মজিনা বলেন, “৫ আগস্টে আমরা এমন এক ঘটনা দেখেছি যা সত্যিকারের বিপ্লব। হাসিনার শাসন দেখেছি বহু বছর, কিন্তু এত দ্রুত পতন হবে ভাবিনি। হেলিকপ্টারে তার পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য বাংলাদেশের ইতিহাসে বিস্ময়কর ঘটনা হয়ে থাকবে। এই বিপ্লবের মাধ্যমে কোনো অরাজকতা হয়নি, বরং শুরু হয়েছে স্থিতিশীল গণতন্ত্রের পথচলা।”
তিনি আরও বলেন, “এই বিপ্লবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, নেতৃত্বের লালসা থেকে সরে এসে জনগণ একজন নিরপেক্ষ, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নেতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বেছে নিয়েছে। এটা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা।”
রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে শেখ হাসিনা মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে ছিলেন। ৫ আগস্ট সেই অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। তরুণরা এই পরিবর্তনের নায়ক, যারা জীবন দিয়ে গণতন্ত্রের পথ রচনা করেছে।”
তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে ১১টি স্বাধীন কমিশন গঠন করেছে যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে। তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হবে।”
তিনি আরও জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ড. ইউনূসের মধ্যে সদ্য অনুষ্ঠিত বৈঠক একটি টার্নিং পয়েন্ট, এবং আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য রোডম্যাপ তৈরি করা হচ্ছে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেন, “বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ, যার সবচেয়ে বড় সম্পদ তার জনগণ, বিশেষ করে তরুণরা। ২০১৮ সালে ট্রাফিক আন্দোলনে তরুণদের সংগঠিত, শান্তিপূর্ণ ভূমিকা আমাকে অভিভূত করেছিল।”
তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে যেমন অভিবাসীরা গণতন্ত্রে ভূমিকা রাখছে, তেমনি প্রবাসী বাংলাদেশিরাও বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রাখতে পারে।”
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন কবি ও লেখক সামছুদ্দীন মাহমুদ এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রফেসর জামাল উদ্দিন। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন প্রফেসর ড. জামাল উদ্দিন, মেজর (অব.) মনজুরুল হক, ডা. মাকসুমুল হাকিম, ডা. আহমেদ নেওয়াজ খান সেলাল, মুশফিকুর রহমান, শামারুখ মহিউদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার খুরশিদ সাব্বির, স্যাম রিয়া, রফিকুল হক, শামীমা সেলিমুদ্দীন, নওশের আলী প্রমুখ।
সভা সঞ্চালনা করেন মেজর (অব.) সাফায়াত আহমেদ ও রাইশা ফারিন। তরুণদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন সামায়লা নারমিন ইরশিয়া এবং সঙ্গীত পরিবেশন করেন কনিকা খান। একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন সামায়লা নারমিন ইরশিয়া এবং মিউজিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন কনিকা খান।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম