বুধবার,

১৮ জুন ২০২৫,

৫ আষাঢ় ১৪৩২

বুধবার,

১৮ জুন ২০২৫,

৫ আষাঢ় ১৪৩২

Radio Today News

মাঝ আকাশে মিসাইল হামলার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা জানালেন বাংলাদেশি পাইলট

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৯:৩৯, ১৭ জুন ২০২৫

Google News
মাঝ আকাশে মিসাইল হামলার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা জানালেন বাংলাদেশি পাইলট

ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের মাঝ আকাশে মিসাইল হামলার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন বাংলাদেশি এক পাইলট। এনাম তালুকদার নামে সেই পাইলট বর্ণনা করছেন তার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। 

তিনি জানান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রিয়াদের উদ্দেশ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট যখন রাত ২টা ১৫ মিনিটে উড্ডয়ন করে, তখন আকাশ শান্ত ছিল, আবহাওয়া অনুকূল ছিল। ককপিটের দায়িত্বে ছিলেন বিমানের ফ্লাইট সেফটির প্রধান ক্যাপ্টেন এনামুল হক এবং তার পাশে ছিলেন কো-পাইলট রাফসান রিয়াদ।

ক্যাপ্টেন এনামুল স্মরণ করেন, ‘ভারত, ওমান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের আকাশসীমা পেরিয়ে আমরা বাহরাইনের দিগন্তের কাছাকাছি পৌঁছলাম। স্থানীয় সময় তখন ভোর ৫টা (১৪ জুন)। ৪০,০০০ ফুট উচ্চতায় পৃথিবী দেখতে সব সময়ই অসাধারণ লাগে। কিন্তু সেই অনুভূতি দ্রুতই মিলিয়ে গেল – তার বদলে নেমে এলো আতঙ্ক ও ভয় – কারণ আমরা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত কিছু দেখলাম।’

তাদের বিমান পারস্য উপসাগরের উপর দিয়ে যাচ্ছিল। ডানদিকে ইরান; বামে এবং কিছুটা পেছনে বাহরাইন। সূর্য তখনো ওঠেনি, তবে পূর্ব দিগন্তে একটি ক্ষীণ আভা দেখা দিতে শুরু করেছিল।

হঠাৎ করেই ইরানের আকাশে একটি উজ্জ্বল ঝলক দেখা গেল। প্রথমে এনামুল ভেবেছিলেন এটি হয়তো কোনো নিয়মিত সামরিক মহড়ার অংশ। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই তিনি এবং তার কো-পাইলট দেখতে পেলেন – ক্ষেপণাস্ত্র। ডজন ডজন, এমনকি তারও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র দ্রুত গতিতে একের পর এক পশ্চিম দিকে ছুটে যাচ্ছিল।

‘আমার কো-পাইলটও হতবাক হয়ে গিয়েছিল। আমরা অবিলম্বে আমাদের উড্ডয়নের রুট পর্যালোচনা করতে শুরু করলাম। একটি প্রশ্ন আমার মনে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছিল: যদি সেই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে একটিও পথচ্যুত হয়? এই চিন্তাই আমার মেরুদণ্ড দিয়ে ঠাণ্ডা স্রোত বইয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল।’

একজন অভিজ্ঞ পাইলট হিসেবে তিনি এর আগেও উচ্চ-ঝুঁকির পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন – কিন্তু এমন কিছু কখনো নয়। ‘আকাশ জুড়ে জ্বলন্ত তীর ছুটে যাচ্ছে, আমাদের বিমান থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে।’

কর্মীরা দ্রুত নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে তাদের গতিপথ পরিবর্তন করেন এবং অবশেষে রিয়াদে নিরাপদে অবতরণ করেন।

‘ভূমিতে নামার পর আমি আমার ফোন চালু করলাম – এবং শিরোনামগুলো ভেসে উঠল: 'ইরান ইসরায়েলের উপর বিশাল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে',’ তিনি বলেন।

এটি কেবল একটি সামরিক পদক্ষেপ ছিল না – এটি একটি যুদ্ধের শুরু বলে মনে হয়েছিল, এমন একটি যুদ্ধ যা দুটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নাও থাকতে পারে। পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতা এখন ঝুঁকির মধ্যে বলে মনে হচ্ছিল।

‘সেদিন সকালে আমি কেবল একজন পাইলট ছিলাম না। আমি ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছিলাম – স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের কিনারা থেকে একটি সংঘাতের শুরু উন্মোচিত হতে দেখেছিলাম।’

তারা যে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো দেখেছিলেন সেগুলো সম্ভবত দীর্ঘ-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছিল – কেবল অস্ত্র নয়, এনামুল পর্যবেক্ষণ করেন; এগুলো ছিল একটি কৌশলগত বার্তা। এই প্রক্ষেপণগুলো লক্ষ্যবস্তুতে ফিরে আসার আগে শত শত কিলোমিটার উপরে প্রায় মহাকাশে উঠে যায়।

তিনি যোগ করেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের আকাশসীমা আর কেবল একটি ট্রানজিট করিডোর নয়; এটি একটি বিতর্কিত এবং সম্ভাব্য বিপজ্জনক অঞ্চলে পরিণত হচ্ছে।’

সৌভাগ্যবশত, যাত্রীরা তারা যে বিপদের মধ্য দিয়ে অজান্তেই পার হয়ে এসেছেন তা জানতে পারেননি। ‘আমরা নিরাপদে অবতরণ করতে পেরেছিলাম, কিন্তু প্রশ্নটি এখনো আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে: আমরা যে আকাশে উড়ি তা কতটা নিরাপদ

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের