শুক্রবার,

২০ জুন ২০২৫,

৬ আষাঢ় ১৪৩২

শুক্রবার,

২০ জুন ২০২৫,

৬ আষাঢ় ১৪৩২

Radio Today News

সরকারি সেবা নিতে তিনজনের একজন দুর্নীতির শিকার: জরিপ

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:২৬, ২০ জুন ২০২৫

Google News
সরকারি সেবা নিতে তিনজনের একজন দুর্নীতির শিকার: জরিপ

সরকারি সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতির শিকার হয়েছে দেশের তিনজন নাগরিকের মধ্যে একজন। আর ৩১.৬৭ শতাংশ নাগরিক সরকারি সেবা নিতে গিয়ে ঘুষ বা দুর্নীতির মুখোমুখি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিবিএসের ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস) ২০২৫’-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের ৬৪টি জেলার এক হাজার ৯২০টি প্রাইমারি স্যাম্পলিং ইউনিট থেকে ৪৫ হাজার ৮৮৮টি খানার ৮৪ হাজার ৮০৭ জন প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে প্রতিবেদনটির তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

দুর্নীতিতে শীর্ষে বিআরটিএ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী

জরিপ অনুযায়ী, দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বিআরটিএ, যেখানে ৬৩.২৯ শতাংশ নাগরিক দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। এরপর রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী (৬১.৯৪%), পাসপোর্ট অফিস (৫৭.৪৫%) ও ভূমি অফিস (৫৪.৯২%)।

এ ছাড়া দুর্নীতির অভিজ্ঞতা নারীদের চেয়ে পুরুষদের মধ্যে বেশি। ৩৮.৬২ শতাংশ পুরুষ এবং ২২.৭১ শতাংশ নারী সরকারি সেবা নিতে গিয়ে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।

নিরাপত্তাবোধে মোটামুটি আস্থা, তবে নারী-পুরুষে পার্থক্য

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮৪.৮১ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা সন্ধ্যার পর নিজ এলাকায় একা চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করেন। তবে এ ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্য দেখা গেছে। পুরুষদের মধ্যে এ হার ৮৯.৫৩ শতাংশ, আর নারীদের মধ্যে ৮০.৬৭ শতাংশ।

আবার শহর ও গ্রামভেদেও পার্থক্য রয়েছে।

শহরে ৮৩.৭৫ শতাংশ এবং গ্রামে ৮৫.৩০ শতাংশ নাগরিক নিজেদের এলাকাকে নিরাপদ মনে করেন। নিজের বাড়িতে নিরাপত্তাবোধের হার আরো বেশি, ৯২.৫৪ শতাংশ, যেখানে পুরুষের হার ৯৩.৩৫ শতাংশ এবং নারীদের ৯১.৮২ শতাংশ।
 
মত প্রকাশ ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণে সীমাবদ্ধতা

জরিপ অনুযায়ী, মাত্র ২৭.২৪ শতাংশ নাগরিক মনে করেন তাঁরা সরকারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারেন। এর মধ্যে পুরুষের হার ৩১.৮৬ শতাংশ হলেও নারীদের হার মাত্র ২৩.০২ শতাংশ।

এ ছাড়া ২১.৯৯ শতাংশ নাগরিক বিশ্বাস করেন, তাঁরা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় কোনো না কোনোভাবে প্রভাব ফেলতে পারেন।

স্বাস্থ্যসেবায় গ্রহণযোগ্যতা, তবে মানে ঘাটতি

গত এক বছরে ৪৭.১২ শতাংশ নাগরিক অন্তত একবার সরকারি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে ৮২.৭২ শতাংশ সেবাকে সহজপ্রাপ্য এবং ৮৯.৩৪ শতাংশ ব্যয়কে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন। তবে সেবার মান নিয়ে কিছুটা অসন্তোষ রয়েছে—সেবার মানে সন্তুষ্টি ৬৫.০৭ শতাংশ, সময় প্রদান ৬৩.১৩ শতাংশ এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের আচরণে সন্তুষ্টি ৬৩.১৯ শতাংশ।

শিক্ষা খাতে প্রবেশাধিকারে সন্তোষজনক চিত্র

জরিপে অংশ নেওয়া নাগরিকদের ৪০.৯৩ শতাংশ জানান, তাঁদের অন্তত একটি শিশু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ে।

প্রাথমিক শিক্ষায় প্রবেশাধিকারের হার ৯৬.৪৬ শতাংশ এবং ব্যয় সামর্থ্যের মধ্যে মনে করেন ৯২.৬৬ শতাংশ। মাধ্যমিকে এ হার কিছুটা কমলেও এখনো ইতিবাচক (প্রবেশ ৮২.২০ শতাংশ ও ব্যয় ৮০.৮৬ শতাংশ)। মানসম্পন্ন শিক্ষার বিষয়ে সন্তুষ্টির হার প্রাথমিক স্তরে ৬৭.৯৩ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে ৭১.৮৬ শতাংশ।

বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক মনোভাব

গত দুই বছরে ১৬.১৬ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনো বিরোধের সম্মুখীন হয়েছেন। এর মধ্যে ৮৩.৬০ শতাংশ নাগরিক বিচারপ্রক্রিয়ার আওতায় প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছেন। এর মধ্যে ৪১.৩৪ শতাংশ আনুষ্ঠানিক (আদালত, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী) এবং ৬৮.৯৬ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক (কমিউনিটি নেতা, আইনজীবী প্রভৃতি) মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করেছেন।

বৈষম্য ও হয়রানিতে এক-পঞ্চমাংশ নাগরিক আক্রান্ত

গত এক বছরে ১৯.৩১ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনোভাবে বৈষম্য বা হয়রানির শিকার হয়েছেন। শহরে এ হার ২২.০১ শতাংশ এবং গ্রামে ১৮.০৭ শতাংশ।

সবচেয়ে বেশি বৈষম্য হয়েছে আর্থ-সামাজিক (৬.৮২%) ও লিঙ্গভিত্তিক (৪.৪৭%) কারণে। বৈষম্যের প্রধান স্থান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে পরিবার (৪৮.৪৪%), গণপরিবহন বা উন্মুক্ত স্থান (৩১.৩০%) এবং কর্মস্থল (২৫.৯৭%)।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। অনুষ্ঠানে জরিপের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক রাশেদ-ই-মাসতাহাব। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. কাইয়ুম আরা বেগম এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক ড. মিজানুর রহমান।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের